বিবিসি তাদের এক সংবাদে জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া টাইরেস ডিভন হাসপিল (২১) নামে ফাহিমের সহকারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং এ মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সালেহের কয়েক হাজার ডলার অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
সাবেক সহকারী ডিভন হাসপিলের বিরুদ্ধে সালেহকে টিজারার (ইলেকট্রিক করাত) দিয়ে সোমবার মারাত্মক ছুরিকাঘাতের অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, তিন দিন আগে ম্যানহাটনে সালেহকে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে শুক্রবার হাসপিলকে গ্রেপ্তার করে নিউইয়র্ক পুলিশ।
এ মামলায় হাসপিলকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং শনিবার ভোরে ম্যানহাটন ফৌজদারি আদালতে তাকে বিনা জামিনে আটকের নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, হাসপিল নিনজা মাস্ক, স্যুট এবং টাই পরে সালেহকে বারবার বুকে ছুঁড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে এবং পরে বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে তার লাশকে টুকরো করে বলে নিউইয়র্ক ডেইলি নিজের এর সংবাদে বলা হয়েছে।
পুলিশের তথ্য মতে, ফাহিমের ব্যক্তিগত সহকারী থাকাকালীন মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন হাসপিল। বিষয়টি জানার পরও তার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ না করে কিস্তিতে টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করেন ফাহিম। কিন্তু আত্মসাৎ করা ওই টাকা ফেরত না দেয়ার উদ্দেশ্যেই ফাহিমকে হত্যা করা হতে পারে বলে নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
এদিকে, তদন্তকারীরা উদঘাটন করেছেন যে ফাহিমকে সোমবার হত্যা করা হলেও প্রমাণ সরিয়ে ফেরার জন্য হত্যাকারী মঙ্গলবার আবারও তার অ্যাপার্টমেন্টে যায় এবং বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে ফাহিমের শরীর খণ্ড-বিখণ্ড করে।
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের জানায়, নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ফাহিমের দেহ, মাথা ও হাত-পা খণ্ড খণ্ড অবস্থায় পাওয়া যায়।
জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটে ফাহিম একাই থাকতেন। দীর্ঘ সময় তার খোঁজ না পেয়ে মঙ্গলবার জরুরি ৯১১ নম্বরে ফোন করেন তার বোন। এরপর পুলিশ এসে অ্যাপার্টমেন্টের সপ্তম তলা থেকে ফাহিমের মরদেহ উদ্ধার করে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে বাংলাদেশি বাবা-মায়ের সংসারে জন্ম নেয়া প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহ পরবর্তীতে পরিবারের সাথে নিউইয়র্কে চলে যান। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা ও পড়াশুনা। পড়াশুনা শেষে ফাহিম সালেহ নিউইয়র্কেই বসবাস করতেন।
২০১৪ সালে ঢাকায় এসে প্রযুক্তি-ভিত্তিক বেশ কিছু ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ফাহিম সালেহ। অনেকগুলো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও ‘পাঠাও’ উদ্যোগটি তাকে সফলতা এনে দেয়। শুরুতে শুধুমাত্র পণ্য পরিবহন সার্ভিস নিয়ে কাজ করলেও পরবর্তীতে রাইড শেয়ারিং সেবা চালু করে পাঠাও।
বাংলাদেশে পাঠাও প্রতিষ্ঠায় ফাহিম সালেহ’র সাথে আরও দুজন ছিলেন। যাদের কাছে পরবর্তীতে ফাহিম তার কিছু শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিউইয়র্কে ফিরে যান। তবে থেমে থাকেননি তিনি। এরপর ‘পাঠাও’ এর আদলে অন্য দেশে ব্যবসা প্রসারের চিন্তাভাবনা শুরু করেন ৩৩ বছর বয়সী এ প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।
বিবিসি বাংলা তাদের এক প্রতিবেদনে ঢাকায় পাঠাও রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের কর্মকর্তা ওসমান সালেহ’র বরাত দিয়ে জানায়, বাংলাদেশে অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও প্রতিষ্ঠার পর ফাহিম চেয়েছিলেন আফ্রিকা মহাদেশে ব্যবসা বিস্তার করতে।
এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে নাইজেরিয়াতে ‘গোকাডা’ নামে একটি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করেন। তার সাথে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আরও একজন ছিলেন।
ফাহিম সালেহ’র মালিকানাধীন ‘গোকাডা’ সার্ভিস ডেলিভারিতে এক হাজার মোটরসাইকেল রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই সংকটে পড়ে তারা। কারণ নাইজেরিয়ার সরকার মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করে।
টেককাবাল নামে নাইজেরিয়ার একটি প্রযুক্তি বিষয়ক গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে বলছে, সংকটে পড়ার আগে এক বছরেই ‘গোকাডা’ ৫৩ লাখ ডলার আয় করে।
যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হয়ে গেলে ‘গোকাডা’ পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে নাইজেরিয়ার রাজধানী লেগোসে তাদের এক হাজারের বেশি মোটরসাইকেল রয়েছে।