রাজধানীর এক হোটেলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে বৈঠক শেষে ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা সবসময়ই অগ্রাধিকার দেই।’
ভ্যাকসিন উৎপাদনে ভারতের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে শ্রিংলা বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভারত কী করছে সে সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভারতের মতো বাংলাদেশের জনসংখ্যাও অনেক। তাদেরকেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ গ্রহণ করা উচিত।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সৌভাগ্যক্রমে দুদেশেই মৃত্যুর হার কম এবং সেরে ওঠার হার বেশি।
এর আগে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছিলেন, দেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দ্রুত নিয়ে আসার সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হবে এবং এমন ভ্যাকসিনই আনা হবে যা বাংলাদেশের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী হবে।
মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব বিকল্পগুলো দেখবো এবং যে ভ্যাকসিন আমাদের জন্য নিরাপদ এবং উপকারী হবে সেটার জন্য প্রচেষ্টা চালাবো।’
শ্রিংলা বলেন, কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে হয়ত খুব বেশি যোগাযোগ হয়নি তবে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে হবে।
‘আমাদের মধ্যকার দৃঢ় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং তা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে’ উল্লেখ করে শ্রিংলা আরও বলেন, তিনি মূলত এই বিষয়টির জন্য বাংলাদেশে এসেছেন।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের জন্য বাংলাদেশ চীন, রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করছে।
বুধবারের বৈঠকে তারা দুদেশের সম্পর্ক কীভাবে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
কোভিড-১৯ মোকবিলায় নেয়া পদক্ষেপের বিষয়ে তারা একে অপরকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ট্রান্সশিপমেন্ট ও রেলওয়ে সহযোগিতার বিষয়ে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে এবং এক্ষেত্রে আরও কী কী করা যায়, সে বিষয়ে দুই দেশ আলোচনা করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাঠানো বার্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে মঙ্গলবার দুইদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
শ্রিংলা ঢাকায় পৌঁছানোর পরে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন জানিয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার ঢাকা সফরে দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং সেগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরে শ্রিংলা গত মার্চ মাসে ঢাকা সফর করেন।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গত কয়েকমাস ধরে দুদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সফরের ফাটল তৈরি হয়েছে।
তবে, কার্যত দুটি দেশই ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিল এবং পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে ‘ক্ষতিকর’ গল্প নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে সম্প্রতি বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্ককে ‘অত্যন্ত গভীর’ বলেও বর্ণনা করেছে ভারত।
সম্প্রতি ভারতের নয়াদিল্লিতে ভার্চুয়াল সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত যে উভয় পক্ষই পারস্পরিক সংবেদনশীলতা এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ‘রক্তের সম্পর্ক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে ‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্করের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয় উল্লেখ করে অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক এই অঞ্চলে ভালো প্রতিবেশী সম্পর্কের রোল মডেল।’