মঙ্গলবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মৌলিক ও উদ্ভাবনী গবেষণা এবং প্রকাশনার জন্য ‘ইউজিসি স্বর্ণপদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দেশের উচ্চশিক্ষাকে বিশ্বমানে উন্নীত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেন। যা ছিল এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বর্তমানে দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দেড়শ’র উপরে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৯ লাখের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন চীন, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পর বিশ্বে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। এটি একটি বিশাল অর্জন।’
সরকারের কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র এখন পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত। সরকারের যুগোপযোগী শিক্ষানীতি, শিক্ষায় অগ্রাধিকারসহ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে কেবল সংখ্যার বিচারে নয়, আমাদের গুণগত উচ্চশিক্ষার ওপর সমধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সাথে এগিয়ে যেতে পারে এবং নিজেদের স্থান করে নিতে পারে। উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে ইউজিসিকে শিক্ষার মান নির্ধারণ, তদারকিসহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জবাবদিহি বাড়াতে আরো উদ্যোগী হতে হবে।’
উচ্চশিক্ষার প্রতিটি স্তরে মূল্যায়ন ও তত্ত্বাবধান জোরদার করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘সময় এবং যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ব্যাপকভিত্তিতে বেড়েছে। শিক্ষার্থীরাও এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে। মেয়াদ শেষে ডিগ্রিও পাচ্ছে। কিন্তু এসব বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির মান নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ, অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধাসহ শিক্ষক স্বল্পতার কারণে মানসম্পন্ন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। গবেষণা ও গবেষকদের মান নিয়েও ইতিমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে ইউজিসিকে শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের সার্বিক শিক্ষা বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার প্রসারে বেসরকারি খাতের ভূমিকা যথেষ্ট প্রশংসনীয়। তবে শিক্ষার নামে বাণিজ্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল পাঠদানের স্থান নয়, মুক্তচিন্তার বিশাল ক্ষেত্রও। শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞান-বিজ্ঞানের নবতর আবিষ্কার বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু ও সত্যকে উদঘাটন করাও ছাত্র-শিক্ষকদের দায়িত্ব। এ কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি সমকালীন বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা, সেমিনার ও বিতর্কসহ শিক্ষা ও গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বছরব্যাপী মুখর রাখতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
মৌলিক ও উদ্ভাবনী গবেষণা এবং প্রকাশনার জন্য মঙ্গলবার ৩৫ জন শিক্ষাবিদ ‘ইউজিসি স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জন শিক্ষক ২০১৬ সালের জন্য এবং ১৭ জন ২০১৭ সালের জন্য পদক পেয়েছেন। তারা সনদ ও স্বর্ণপদকের পাশাপাশি বইয়ের জন্য ৫০ হাজার ও প্রবন্ধের জন্য ৩০ হাজার টাকা সম্মানী পেয়েছেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনসহ ইউজিসির সদস্যরা।