তবে তার সাজা স্থগিত করে সংশোধনের জন্য বৃদ্ধা মায়ের সেবা করাসহ তিনটি শর্তে পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ দিতে প্রবেশনারী কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়েছেন। শর্ত ভঙ্গ করলেই যেতে হবে কারাগারে।
মতি মাতবরের সাজা বাতিলের আবেদন খারিজ করে দিয়ে প্রবেশনের সুযোগ চেয়ে করা আবেদন গ্রহণ করে বিচারপতি জাফর আহমেদের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এই ঐতিহাসিক রায় দেন।
মতি মাতবরের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের দেয়া শর্তে বলা হয়েছে-৭৫ বছর বয়স্ক মায়ের সেবা করতে হবে। দশম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ও দ্বিতীয় শ্রেণি পড়া ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। আইন অনুসারে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবেন না। দেড় বছর তাকে থাকতে হবে প্রবেশনারী কর্মকর্তার তত্ত্ববধানে। এ সব শর্ত না মানলে তাকে জেলে যেতে হবে। আর প্রবেশনারী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করলে তার সাজা মওকুফ হয়ে যাবে। তাকে আর কারাগারে যেতে হবে না। আর সময়ে সময়ে আসামির বিষয়ে আদালতে লিখিত প্রতিবেদন দিতে প্রবেশনারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সাথে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমীন ও মো. আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. এনামুল হক মোল্লা।
এ সময় ঢাকা জেলা প্রবেশনারী কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান মাসুদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় দেয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে আসামিকে তার তত্ত্বাবধানে দেয়া হয়।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির জানান, এক হাজার ১১১ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মতি মাতবরসহ দুজনকে আসামি করে ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। মামলায় মতি মাতবরের কাছ থেকে ৪১১ পিস এবং জামাল হোসেনের কাছ থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখানো হয়।
এরপর দুই আসামিকে দুইদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে রিমান্ডের একদিনের মাথায়ই ২৪ নভেম্বর তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। আর সেদিনই দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এর কিছুদিন পর যুগ্ম জেলা দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যায় জমাল হোসেন। এরপর বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি দুই আসামিকে পাঁচ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে রায় দেয় ঢাকার ৩ নম্বর যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ আদালত।
এরপর এই রায়ের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল আবেদন করেন মতি মাতবর। ওই আদালত একই বছরের ১১ মে আপিল তার আবেদন খারিজ করে দেয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। মহানগর দায়রা জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১ জুলাই হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন তিনি। একই সাথে জামিনের আবেদন করেন তিনি। হাইকোর্ট তাকে ওই বছরের ৯ জুলাই জামিন দেন। এছাড়া রিভিশন আবেদনের ওপর শুনানিকালে প্রবেশন অধ্যাদেশ, ১৯৬০ এর ধারা ৫ অনুযায়ী আসামিকে প্রবেশনে পাঠানোর আবেদন করা হয়।
এ আবেদনের শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ৭ অক্টোবর এক আদেশে ১০ দিনের মধ্যে আসামির নামে ব্যাংক একাউন্ট এবং টিন নম্বর খুলে দিতে অপরাধী সংশোধন ও পুনর্বাসন সমিতিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ আদেশের আলোকে পদক্ষেপ নিয়ে ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার প্রবেশন অফিসার হাইকোর্টকে অবহিত করেন। পরে আদালত আসামির বিষয়ে আরও একটি (এন্টিসিডেন্ট রিপোর্ট) প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন তাকে। এ আদেশ অনুসারে প্রবেশন কর্মকর্তা গত ২ নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনে আসামির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করা হয়। এ অবস্থায় হাইকোর্ট রবিবার শুনানি শেষে রায় দেন।