ব্রিকসে যোগ দিতে বাংলাদেশের আগ্রহের প্রশংসা করে চীনের সক্রিয় সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডং।
গত ৩ জুন বেইজিংয়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক পরামর্শের ১৩তম রাউন্ডে উভয় পক্ষ আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরকে কেন্দ্র করে যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং চীনের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সান ওয়েইডং।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে ছিলেন- চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জসিম উদ্দিন, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব আনোয়ার হোসেনসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
অপরদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ এখনই ব্রিকসের সদস্য হওয়ার অনুরোধ করেনি: প্রধানমন্ত্রী
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুসংহতকরণ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বহুপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মে সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
চীনের ভাইস মিনিস্টার উচ্চ পর্যায়ের বিনিময় এবং জনগণ থেকে জনগণের যোগাযোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বাংলাদেশ থেকে আম ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি এবং যুবকদের দক্ষতা উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে চীনের আগ্রহের কথা জানান। চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ওয়েইডং বলেন, ঢাকা ও বেইজিংয়ে দুই দেশের দূতাবাস দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, অভিন্ন মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
তিনি ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করেন এবং আসন্ন ভিভিআইপি সফরের আগেই চীনা ভাষায় 'আমার দেখা নয়া চীন' বইটি প্রকাশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র সচিব ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরেন, যা 'সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বের' সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে।
বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সহায়তার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কথা ব্যাখ্যা করেন এবং চীনে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত কোটা মুক্ত (ডিএফকিউএফ) প্রবেশাধিকারের বিদ্যমান কাঠামো সহজীকরণে চীনের সমর্থন কামনা করেন।
মাসুদ মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে চীনের অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান এবং সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় 'রিমালের' ক্ষয়ক্ষতির জন্য গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
তিনি ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে পুনঃনির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান এবং আশা প্রকাশ করেন- তার যোগ্য নেতৃত্বে বাঙালি জাতি 'সোনার বাংলার' স্বপ্ন পূরণ করবে।
তিনি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর এবং গত বছর ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলোচনার কথা স্মরণ করেন।
উভয় পক্ষ আগামী বছর ঢাকায় দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পরবর্তী দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক পরামর্শমূলক বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া নিয়ে আশাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই: পররাষ্ট্র সচিব