সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দল বুধবার সরকারের সঙ্গে বৈঠকে তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের জন্য সম্প্রতি ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। তবে যেসব বিষয় মজুরি বোর্ডে নেই, সেগুলো তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয় এবং ইইউ পক্ষ আশা প্রকাশ করেছে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র, শ্রম ও বাণিজ্য সচিবদের সঙ্গে ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের (ইইএএস) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রয়েছেন।
ইইউ প্রতিনিধিদল মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলে এবং বাংলাদেশ পক্ষ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনায় (ইউপিআর) বাংলাদেশের সফল প্রতিরক্ষা সম্পর্কে তাদের জানায়।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ইইউ প্রতিনিধি দল পরবর্তী সরকার গঠনের আশা প্রকাশ করে।
উভয় পক্ষ জাতীয় কর্মপরিকল্পনার সংস্কার এবং এর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছে।
বাংলাদেশ শ্রম খাতে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০২৬) গ্রহণ করেছে এবং এই পরিকল্পনা আইএলও গভর্নিং বডির কাছে বাংলাদেশ সরকারের উপস্থাপিত রোডম্যাপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।
রোডম্যাপের লক্ষ্য হলো সংগঠনের স্বাধীনতা ও সম্মিলিত দর কষাকষির অধিকারসহ দেশের শ্রম অধিকারগুলোর উন্নতি করা।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা কীভাবে জিএসপি প্লাস কর্মসূচিতে প্রবেশাধিকার পেতে পারি তা নিয়েও আলোচনা করেছি। আমরা শ্রম খাতের সংস্কারে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জানিয়েছি।’
মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ শ্রম খাতের অবস্থার উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সরকার শুধু আইন প্রণয়নই নয়, তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নেও অঙ্গীকারবদ্ধ।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করলেও শিশুশ্রম, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও শ্রমিক ইউনিয়নের ক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, 'আমরা মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরেছি।’
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) উত্তরণের পর বাংলাদেশের যে জিএসপি প্লাস সুবিধা প্রয়োজন তা নিয়েও উভয় পক্ষ বিস্তারিত আলোচনা করেছে।
আগামী বছরের মার্চে তারা শ্রম সংস্কার বিষয় নিয়ে আরও আলোচনা করবেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শিগগিরই জিএসপি প্লাসের কাঠামো চূড়ান্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘একবার এটি চূড়ান্ত হয়ে গেলে, সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এটি নিয়ে আলোচনার পথ উন্মুক্ত করবে।’
আরও পড়ুন: শ্রম খাতে অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে রবিবার ঢাকায় আসছে ইইউ দল
শ্রম সচিব এহসান ই এলাহী বলেন, জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় বিদ্যমান ৯টি লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ পূরণ হয়েছে।
ইইউ প্রতিনিধি দল জানতে চায় আইএলও সন্তুষ্ট কি না। তিনি বলেন, 'আইএলও'র বেশির ভাগ সুপারিশই মেনে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য অংশ থাকায় কিছু পরামর্শ গ্রহণ করতে পারিনি আমরা।’
মঙ্গলবার ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
তারা ইইউর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে বলেন, ইইউ বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।
প্রতিনিধি দলকে জানান তারা। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, তবে তারা চান বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকুক এবং আরও বিকশিত হোক।
তারা ইইউ প্রতিনিধি দলকে সরকার ও বিজিএমইএর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন, যাতে তারা মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
আরও পড়ুন: শ্রম পরিস্থিতি মূল্যায়নে ইইউ প্রতিনিধি দল ঢাকায়
এ ছাড়া শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় করেন পাওলা পাম্পালনি।
দেশের শ্রম খাতের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রতিনিধি দলটি রবিবার ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।
গত মাসে রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি বলেছিলেন, বাজারে প্রবেশাধিকার, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার বাংলাদেশের আবেদন বিবেচনায় নেওয়ার জন্য ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং কমিশনে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে শ্রম আইনকে সমন্বয় করা ‘অপরিহার্য উপাদান’ হবে।
ঢাকায় এক সেমিনারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কাছে জিএসপি+ এ যোগদানের বিকল্প রয়েছে। যা এভরিথিং বাট আর্মসের (ইবিএ) পর সবচেয়ে উদার জিএসপি কর্মসূচি।’
আরও পড়ুন:রোহিঙ্গা সংকটে ‘নিজেদের সমর্থন অব্যাহত রাখছে’ ইইউ: রাষ্ট্রদূত হোয়াইটলি