শুক্রবার হাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং প্রথিতযশা সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে ব্যতিক্রমধর্মী ও অন্যতম আকর্ষণ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে শেখ কামালের সহপাঠী-বন্ধু এবং আবাহনী ক্রীড়াচক্র ও মুক্তিযুদ্ধের সতীর্থদের আবেগঘন ও মধুর স্মৃতি রোমন্থন। এদের মধ্যে ছিলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ, ওয়ার কোর্সমেট মেজর জেনারেল (অব.) সাইয়ীদ আহমেদ, শেখ কামালের সহপাঠী ও ঘনিষ্ট বন্ধু ড. হাবিবুল হক খন্দকার, তৌরিদ হোসেন বাদল ও ড. মেহরাজ জাহান।
এছাড়াও ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির সিনিয়র ব্যক্তিত্ব সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বক্তব্য রাখেন। তারা ’৬৬-এর ৬ দফা থেকে শুরু করে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, খেলাধুলা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে শহীদ শেখ কামালের অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গউস খান ও বিবিসি’র সাবেক সাংবাদিক উদয় শংকর দাশ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
সরকারের নির্দেশনায় দূতাবাসে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকীর স্মারক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশ থেকে তরুণ প্রজন্মের তিন শতাধিক বাংলাদেশি অংশগ্রহণ করে শেখ কামালের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথি শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সালমান এফ রহমান জানান, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ কামাল ছিলেন একজন সম্পূর্ণ মানুষ। মাত্র ২৬ বছরের জীবনে সর্বক্ষেত্রেই তিনি তার অসামান্য মেধা ও অসাধারণ কর্মকাণ্ডের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তাকে কখনও কোনো লোভ-লালসা স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি সবসময়ই ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করে গেছেন।
আবাহনী ক্লাবের বর্তমান চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান আরও বলেন, ‘প্রতি বছর ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিনে আমরা আবাহনী ক্লাবে শেখ কামালকে স্মরণ করি এবং ক্লাবের সারা বছরের অর্জনগুলো ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালকে নিবেদন করি।’
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, স্বাধীনতা উত্তর যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নে শহীদ শেখ কামাল যে অনন্য অবদান রেখে গেছেন তার স্মরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার, শেখ কামালের নামে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং শেখ কামালের জীবনের ওপর বিভিন্ন গ্রন্থের প্রকাশ। এছাড়া শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ফুটবলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ ঘাতকেরা নির্মমভাবে হত্যা করলেও স্বাধীন বাংলাদেশের উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অগ্রদ্রুত এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম পথিকৃত, বহুমাত্রিক গুণে গুণান্নিত এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব বাঙালির চিন্তা-চেতনায় ও জাতির ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।
হাইকমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী নতুন প্রজন্মকে শেখ কামালের জীবনাদর্শে সচেতন করার জন্য হাইকমিশন তার জীবনের ওপর বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ এবং ‘শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ড’ ঘোষণা করবে।
আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, বাবা বঙ্গবন্ধুর মতোই শেখ কামালও ছিলেন একজন অত্যন্ত সাহসী মানুষ। ২৬ মার্চ ভোরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই তিনি তার মাকে লুকিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তার সাহসী চিন্তা-চেতনা, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং বিচক্ষণতা তাকে যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে তরুণ সমাজের কাছে এক অনুসরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছিল।
শেখ কামালের বাল্যবন্ধু তৌরিদ হোসেন বাদল বলেন, শেখ কামাল শুধু একজন মেধাবী ছাত্র ও প্রগতিশীল ছাত্রনেতাই ছিলেন না; ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবলসহ প্রতিটি খেলায় এবং সাংস্কৃতিক জগতেও ছিল তার উজ্জ্বল উপস্থিতি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তাকে প্রায়ই দেখা যেত একটি সেতার হাতে রিকশায় ছায়ানটে যাচ্ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামালের সহপাঠি বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. হাবিবুল হক খন্দকার বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একজন ইনক্লুসিভ মানুষ। বিরোধী রাজনৈতিক ধারার ছাত্রসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার সাথেই তিনি সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখতেন ও বিপদে-আপদে সব ধরনের সহযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়াতেন।
শেখ কামাল ও স্ত্রী সুলতানা কামালের আরেক সতীর্থ বন্ধু ড. মেহরাজ জাহান বলেন, বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে শেখ কামাল কখনই নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব বা প্রচলিত সামাজিক ভেদাভেদ করতেন না। সকল বন্ধুই তার কাছে সমান ছিল। নারী বন্ধুদের প্রতি তিনি ছিলেন বিশেষভাবে শ্রদ্ধাশীল ও তাদের প্রয়োজনে সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ও তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া করা হয়। এরপর শেখ কামালের জীবনের ওপর একটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও ‘শেখ কামাল: উদ্দীপ্ত তারুণ্যের দূত’ শীর্ষক একটি স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা সমর সাহার আবৃত্তিতে শহীদ শেখ কামালকে নিবেদন করা হয়।
হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুলকার নাইন, মিনিস্টার (কনস্যুলার) লুৎফুল হাসান, সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রশীদ, মিনিস্টার (প্রেস) আশিকুন নবী চৌধুরী ও মিনিস্টার (পলি্টিক্যাল) এএফএম জাহিদুল ইসলামসহ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।