বুধবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ইউএনবিকে ফোনে বলেন, ‘মাত্রই আমাদের রাষ্ট্রদূত (সৌদিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী) আমাকে ইতিবাচক ফলাফল জানাতে ফোন করেছিলেন।’
তিনি বলেন, সৌদি সরকার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অবতরণের অনুমতি দিয়েছে যা সুষ্ঠুভাবে বাংলাদেশিদের সৌদি যেতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ সরকারও সৌদির সকল এয়ারলাইন্সকে অবতরণের এবং বাংলাদেশিদের সৌদিতে ফেরত নেয়ার অনুমতি দিয়েছে, বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেন বলেন, যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, যারা তাদের কর্মস্থলে ফিরতে চান, সৌদি সরকার তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
‘কয়েকজনের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, এমন না যে সবার ভিসার মেয়াদ শেষ,’ বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া রবিবার থেকে শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রমিকদের আকামা আরও ২৪ দিন বৈধ থাকবে এবং প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
‘দূতাবাস আকামা দেয় না। নিয়োগকর্তা দেয়,’ বলেন ড. মোমেন।
এর আগে দেশে আটকা পড়াদের জন্য মোট তিন দফায় বাংলাদেশিদের আকামার মেয়াদ বাড়িয়েছে সৌদি সরকার।
আকামার সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ সেপ্টেম্বর। এমন পরিস্থিতিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের পর আকামার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠায় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস।
সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার জন্য ভিসা ও আকামার মেয়াদ বাড়ানো এবং বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করার দাবিতে বুধবার সকালে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসী শ্রমিকরা।
সকালে কারওয়ান বাজারে সৌদি অ্যারাবিয়া এয়ারলাইন্সের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা এবং সাড়ে ৯টার দিকে সোনারগাঁও ক্রসিংয়ে অবস্থান নেন বলে জানান হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রশিদ।
পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এরপর বিক্ষোভকারীরা প্রবাসী কল্যাণ ভবনের দিকে যান। সেখানে মন্ত্রণালয়ের ভবনের বাইরের রাস্তা দখল নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা।
অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীদের অন্য একটি দল জাতীয় প্রেসক্লাব ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন।
প্রবাসী শ্রমিকরা জানান, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সৌদি আরবে তাদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে না পারলে চাকরি হারাবেন।
সৌদি আরবের চাকরিতে যোগ দিতে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিটের দাবিতে মঙ্গলবার ও বুধবার কারওয়ান বাজারে বিক্ষোভ করেছেন বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকরা।
করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে প্রায় সাত মাস পর ১ অক্টোবর থেকে সৌদি আরবে ঢাকা থেকে বিমান চলাচলের অনুমতি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ঢাকা কার্যালয় বিমানের টিকিট দেয়া স্থগিত করায় প্রবাসী শ্রমিকদের এ বিক্ষোভের সূচনা হয়।
সোমবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোকব্বির হোসেন জানিয়েছিলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৌদিতে ফ্লাইট পরিচালনা করার অনুমোদন পেয়েছেন তারা।
তবে, তিনি আরও জানান যে বিমানের আসন বরাদ্দের সুযোগ দেয়ার আগে সে দেশে বিমান অবতরণের অনুমতি পেতে হবে। সৌদি আরবের কাছ থেকে এখনও তারা এ অনুমোদন পাননি।
‘ফলে, যাত্রীদের মাঝে এখনই আসন বরাদ্দ শুরু করা সম্ভব না। দেশটি থেকে বিমান অবতরণের অনুমতি পেলে সাথে সাথেই ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দেয়া হবে,’ বলেন বিমানের এমডি।
এদিকে বুধবার সকালে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সৌদি আরবে ফিরে যেতে ইচ্ছুক প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশৃঙ্খলা করার পরিবর্তে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
আন্তমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক শেষে নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমস্যাটি সমাধানে আমরা আন্তরিকভাবে এবং সবাই মিলে কাজ করছি।’
সৌদি সরকার শৃঙ্খলাবিরোধী কোনো কার্যক্রম সমর্থন করে না এবং এ ধরনের বিক্ষোভ কর্মীদের পক্ষে নেতিবাচক পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলেও সতর্ক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এছাড়া বৈধ ভিসা এবং আকামার মেয়াদ আরও তিন মাস বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের প্রতি অনুরোধ করেছে বলেও জানান তিনি।
সৌদি আরবের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার আশা প্রকাশ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গতকাল এ (মঙ্গলবার) অনুরোধ জানিয়েছি।’