বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা র্যাংকিং নির্ধারণ পদ্ধতির ভুল গতবারের মতো এবারও তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
রবিবার (৫ মে) সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত অ্যান্তোনিও আলেসান্দ্রোর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা র্যাংকিং সূচকে গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার (৩ মে) বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৪ সালের এ সূচক প্রকাশ করে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম।
আরও পড়ুন: মরিশাসের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক
এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবারের বিষয়টি দেখেছি। এবার যে রিপোর্টটি এসেছে তা গত বছরের পারফরমেন্সের রিপোর্ট। তাদের নির্ণয় প্রক্রিয়াতে তারা কোনো পরিবর্তন আনেনি। একই জায়গায় রেখেছে। স্টাডিগুলো করতে যে ধরনের পদ্ধতি ব্যাবহার করা হয়, সেই পদ্ধতিতে তারা করেছে কি না দেখব।
তিনি আরও বলেন, ১০ থেকে ১২ জনকে একাট্টা করে মতামত নিয়ে একটা র্যাংকিং করে দিলেন। এটা তো একটা দেশের চিত্র হতে পারে না, সেসব মানুষের মতামত হতে পারে। মতামতগুলো কার কাছ থেকে নিচ্ছেন, কতজনের কাছ থেকে নিচ্ছেন- এটার কোনো স্বচ্ছতা নেই। খুবই দুর্বল একটা পদ্ধতি, এটা দিয়ে সেটা দিয়ে রিফ্লেকশন হয় না।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমি মরিশাস ঘুরে এসেছি। সেখানে সরকারি ছাড়া প্রাইভেট গণমাধ্যমই নেই। র্যাংকিংটা দেখেন তারা বাংলাদেশের উপরে, না নিচে। ভুটানে দুই না তিনটা চ্যানেল আছে, সব সরকারি। সেটাকে বাংলাদেশে ৪৮টি ইলেকট্রনিক মিডিয়া আছে, ভুরি ভুরি প্রিন্ট মিডিয়া আছে। অনলাইনের সীমা-পরিসীমা নেই। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের পরিধি অনেক বেড়েছে। ভাইব্রেন্ট একটা গণমাধ্যমের পরিবেশ, এখানে কমপ্লেক্স রিয়েলিটি তো থাকবেই, খুবই স্বাভাবিক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছি। সেটাকে অ্যাপ্রিসিয়েট করতে হবে। সেখানে কমপ্লেক্স রিয়েলিটিগুলো ধরে এমনভাবে র্যাংকিং করছেন সেটা সত্য পরিবেশের আসল চিত্র তুলে ধরতে পারছে না। সেই র্যাংকিংয়ের পদ্ধতিতে তো নিশ্চয়ই গলদ আছে, ভুল আছে। সেই জিনিসটা আমরা তুলে ধরেছি, আবার তুলে ধরব।
শুধু পদ্ধতিগত নয় গত রিপোর্টে তারা কিছু ভুল তথ্যও দিয়েছিল জানিয়ে আলী আরাফাত বলেন, ছয়জন নাকি ডিটেইনশনের শিকার হয়েছেন। আমরা যখন বলেছি, এটা ভুল, তখন তারা এটা সরিয়ে ফেলেছে। তারা যে সরিয়ে ফেলল, এতে তারা স্বীকৃতি দিয়েছে যে, তারা ভুল ছিল। ভুল তথ্য তারা যাচাই না করে কেন ছাপিয়েছিল? এরপর আবার যে ছয়জনের নাম ঢুকিয়েছে, সেখানেও ভুল আছে। সেটাও আমি তাদের উত্তর দেব।
বার বার যদি তারা এ কাজ করে তাহলে তাদের বুঝতে হবে এখন থেকে কাদের তথ্য নিয়ে তারা রিপোর্ট বানাচ্ছে। যারা তথ্য দিচ্ছে তারা সততার সঙ্গে দিচ্ছে না কি কোনো এজেন্ডা আছে তাদের।
সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, আরএসএফের র্যাংকিংকে আমি স্বাগত জানাই, এ ধরনের র্যাংকিং করা ভালো। তাহলে গোটা বিশ্বের একটা চিত্র আমরা পাব। কিন্তু বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যাবে যদি পদ্ধতিগত দুর্বলতা হয়। যারা তথ্য দিচ্ছে তারা যদি ভুল তথ্য দেয় সেটা যাচাই না করে ছাপিয়ে ফেললে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।
আমি অনুরোধ করব বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে তারা যাতে পদ্ধতিগত দুর্বলতা উতরে যেতে পারেও তথ্য নেওয়ার পর যাচাই করেন।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপতথ্য ও গুজব রোধে কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারি, সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমার সঙ্গে একমত হয়েছে। অপতথ্য রোধে তারা আমাদের পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। আমরাও তাদের সমর্থন করব।
আরও পড়ুন: পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে সুরক্ষা দেবে সরকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী
অপতথ্য রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার কথা জানালেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী