সার্চ কমিটির মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিরোধিতা করে বিএনপি বলেছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার কেবল কমিশনে তার পছন্দের লোকদের অন্তর্ভুক্ত করবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তারা এখন সার্চ কমিটি গঠন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে এত কথা বলছে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এই সার্চ কমিটি গঠিত হবে? বতর্মানে যে পরিস্থিতি, তাতে বোঝা যাচ্ছে, নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের নিয়ে তারা সার্চ কমিটি গঠন করতে চাচ্ছে।’
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত এক সভায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে এবং ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
আরও পড়ুন: সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে: তথ্যমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার মানসিক রোগে আক্রান্ত-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন ফখরুল। তিনি বলেন,‘তারা এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, নির্বাচন কমিশনার সত্যি কথা বলায় তারা এখন বিভিন্ন মন্তব্য করে বেড়াচ্ছে। তারা বলছেন নির্বাচন কমিশনার নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ! আমি বলছি, সরকার মানসিকভাবে অসুস্থ।’
ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মানুষের সামনে আসতে ভয় পায়। তাই তারা সব কাজ ভার্চুয়ালি করে। তিনি বলেন,আপনারা বাড়ির বাইরে আসেন না। ঘরে বসে এত কথা বলেন, কই আপনাদের কোনও নেতাকে তো বাইরে আসতে দেখিনা। আপনারা কেউ গণভবনে বসে, আবার অন্য মন্ত্রীরা নিজেদের বাড়িতে বসেই সবকিছু ভার্চুয়ালি করেন।
আরও পড়ুন: সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনে কাজ হচ্ছে: ওবায়দুল কাদের
ফখরুল ক্ষমতাসীন দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা বাইরে আসেন, মানুষের সাথে কথা বলে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা জানার চেষ্টা করে দেখেন। তিনি বলেন,‘আপনারা নিরপেক্ষভাবে একটা নির্বাচনের আয়োজন করেন আর মানুষকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেন, তাহলেই আপনারা নিজেদের দলের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারবেন। আপনারা পালানোর পথও খুঁজে পাবেন না।’
তিনি আরও বলেন,আগামী নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। যাতে মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোট দিতে পারে, এবং নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন,দেশটা এখন আমলারাই চালাচ্ছে। তারা এখন আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান হয়ে গেছেন।
এখন কোথায় আওয়ামী লীগ আছে? সবখানেই এখন আমলালীগ। আপনি যেখানেই যাবেন, দেখবেন ডিসি, এসপি এবং ওসি বড় ক্ষমতার অধিকারী। তারা তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) চেয়েও বড়। তারা নিজেরাই বলে যে মাছের রাজা ইলিশ এবং দেশের রাজা পুলিশ।
ফখরুল বলেন, দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারকে একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি কৃষক দলের নেতাকর্মীদের তাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে এবং সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার জন্য আসন্ন আন্দোলনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
ফখরুল আরও বলেন,‘যারা নতুন নেতৃত্বে এসেছেন তাদের কাছ থেকে আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমরা আশা করি কৃষক দল সত্যিই গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হবে। কৃষক দলকে পুনরুজ্জীবিত করুন এবং এই খারাপ সময়ে মানুষের কাছে পৌঁছান, যাতে আমরা বর্তমান দানবীয় শাসন অপসারণ করতে পারি এবং জনগণের সরকার ও সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’
তিনি কৃষক দলের নবগঠিত আংশিক কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক ক্ষমতা দেয়া হবে: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী