এছাড়া, বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
১৪ বছর ধরে বিচার চলার পর বুধবার দুপুর ১২টা ১৩ মিনিটের দিকে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বিশেষ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
বাবর ও সালাম ছাড়াও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন ডিজিএফআইয়ের পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, তৎকালীন এনএসআই মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, শেখ আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আবু সাঈদ, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, আবুল কালাম আজাদ, মঈনুদ্দিন শেখ ওরফে আবু জানদাল, উজ্জ্বল ওরফে রতন, হোসাইন আহমেদ তানিম, শেখ আবদুস সালাম ও আবদুল মালেক।
তাদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
তারেক রহমানসহ বাকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- শাহদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, সাব্বির আহমদ, তারিক হাসান সুমন, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর, আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মোত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গীর আলম বদর, ইকবাল, লিটন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও রাতুল আহম্মেদ।
তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
আদালত সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, খোদা বক্স চৌধুরী ও শহিদুল হক, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, সাবেক পুলিশ সুপার ওবায়দুর রহমান খান ও রুহুল আমিন এবং এএসপি আবদুর রশীদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে।
তাদেরও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে তারেক রহমান, মোরসালিন, মহিবুল, খলিল, জাহাঙ্গীর, ইকবাল, লিটন, হারিছ চৌধুরী, কায়কোবাদ, শফিকুর, আবদুল হাই, রাতুল, সাইফুল ইসলাম, এটিএম আমিন ও সাঈদ হাসান পালাতক রয়েছেন।
রায় ঘোষণার পর সংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজল বলেন, তারা মামলায় তারেক রহমানের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলেন। ‘আমরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
পলাতক আসামিদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, রায়ে তারা হতাশ হয়েছেন। তারেক রহমান নির্দোষ ছিলেন বলে দাবি তার।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে আসার পর তার রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করা হবে।
বিএনপিও এই রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ‘সরকারের নির্দেশে’ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রায় দেয়া হয়েছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের রায়।’
মামলার অভিযোগপত্রে নাম থাকা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও শহিদুল আলম ওরফে বিপুলের অন্য মামলায় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়।
বুধবার রায় ঘোষণার আগে বাবর ও সালামসহ ৩১ অভিযুক্তকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের বহনকারী তিনটি প্রিজনভ্যান বেলা ১১টা ২০ মিনিটে আদালত চত্তরে এসে পৌঁছায়।
এদিকে, রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য বিশেষ আদালতের ভেতরে ও আশপাশসহ রাজধানী জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন ছিলেন। সেই সাথে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে র্যাব সদস্য, ঢাকা মহানগর পুলিশের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন মোতায়েন ছিল। সড়কটির আশপাশে পথচারীদের চলাচল ছিল সীমিত।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর হত্যা ও গ্রেনেড বিস্ফোরণের দুই মামলায় যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১০ অক্টোবর দিন ধার্য করেছিল দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। সেই সাথে আট আসামির জামিন বাতিল করে অবিলম্বে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ জারি করে আদালত।
গত ১২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক খণ্ডন শেষে আবেদনের শুনানির জন্য আদালত ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছিল।
গত বছরের ২৩ অক্টোবর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় ট্রাইব্যুনালের কাছে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান।
অল্পের জন্য বেঁচে যান বতর্মান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ হামলায় তিন শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।
গ্রেনেড হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের অধীনে একটি এবং হত্যার জন্য আরেকটি মামলা।
অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ২০০৮ সালের ১১ জুন এই মামলায় ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
২০১০ সালের ২১ আগস্ট আদালত রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে গ্রেনেড হামলার ঘটনার আরো তদন্তের নির্দেশ দেয়।
২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় পৃথক মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামন বাবরসহ মোট আসামির সংখ্যা ছিল ৫২ জন।