শেখ হাসিনা বলেন, এটাই স্বাভাবিক যে তারা ঐতিহাসিক ভাষণের সারমর্ম বুঝতে পারবেন না কারণ তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে বহু বাঙালিকে হত্যা করেছিল।
‘তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা শুরু করেছিলেন, (পাকিস্তানি) সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র মুক্ত করতে গিয়েছিলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করেছিলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। সুতরাং, এটি খুব স্বাভাবিক যে সেই দলের নেতারা এই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণা পাবেন না এবং সারমর্ম বুঝতে পারবেন না। অবাক হওয়ার বা আলোচনা করার মতো কিছুই নেই,’ তিনি বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৫০ বছর পূর্তিতে এক আলোচনা সভায় বক্তৃতায় একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা এই ভাষণে স্বাধীনতার কোনো ঘোষণা পাবে না কারণ তারা পাকিস্তানের খোশামোদী, তোষামোদী করার পুরনো অভ্যাস এখনও ভুলতে পারেনি।
‘এ কারণে তারা (বিএনপি নেতারা) এখনও এই ভাষণের মধ্যে কিন্তু খুঁজে বেড়ায় এবং স্বাধীনতার ঘোষণা পান না। কিন্তু যারা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন (যুদ্ধের জন্য) তারা ঠিকই তা বুঝতে পেরেছিলেন। বাংলার মানুষ তা বুঝতে পেরেছিল এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল,’ বলেন তিনি।
‘হ্যাঁ, বিএনপি এটা বুঝতে পারে না। (এর পেছনে) এরও একটি কারণ রয়েছে,’ তিনি বলেন এবং পরে উল্লেখ করেন কীভাবে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান বাঙালিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের যা কিছু ছিল তা দিয়েই যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
জাতির জনকের নির্দেশনা মোতাবেক সংগ্রাম পরিষদের লোক এবং সাধারণ মানুষ একাত্তরের ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়।
‘যারা সেদিন চট্টগ্রামে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছিল তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী। যারা গুলি চালিয়েছিল তাদের মধ্যে জিয়াউর রহমানও ছিলেন। পাকিস্তানের সেনা কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান সেদিন যারা ব্যারিকেড দিয়েছিল তাদের অনেককে গুলি করে হত্যা করেন,’ বলেন তিনি।
চট্টগ্রামের অনেক মুক্তিযোদ্ধা ঘটনা জানেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান ২৫ ও ২৬ মার্চ দুদিন ধরে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, পরে জিয়াউর রহমান সোয়াত জাহাজ (পাকিস্তানের) থেকে অস্ত্র ছাড়তে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের লোক ও সাধারণ লোকজন তাকে জাহাজ থেকে অস্ত্র ছাড়তে বাধা দেয় এবং তাকে ধরে ফেলে।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ওবায়দুল কাদের, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মাহবুব-উল আলম হানিফ এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান সিরাজ, সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মেরিনা জাহান কবিতা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফী বক্তব্য দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের উপর লেখা ‘মুক্তির ডাক’ নামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। আরেফিন সিদ্দিকের সম্পাদনায় বইটি প্রকাশ করেছেন ইয়াসিন কবির জয়।
আরও পড়ুন: ৭ মার্চের ভাষণই স্বাধীনতার প্রকৃত ঘোষণা: প্রধানমন্ত্রী
কমনওয়েলথের অনুপ্রেরণাদায়ী ৩ নারী নেতার একজন শেখ হাসিনা
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত: প্রধানমন্ত্রী