২০২১ সালের শেষ দিনে একাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা মীর সাব্বির-এর প্রথম ছবি ‘রাত জাগা ফুল’। নায়িকা ২০১৮ সালের মিস বাংলাদেশ জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে এটিই সর্বপ্রথম মুক্তি পেতে যাচ্ছে।
সব ধরনের দর্শকদের কথা মাথায় রেখে প্রেক্ষাগৃহের পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও ছবিটি প্রিমিয়ারের পরিকল্পনা চলছে। গত ১ নভেম্বর কোনো দৃশ্য কর্তন ছাড়াই সেন্সরে ছাড়পত্র পায় চলচ্চিত্রটি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলচ্চিত্রটির মোশন পোস্টার দর্শকসহ সিনেমার মানুষদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছে। চলুন, সিনেমাটির সম্পর্কে আরও কিছু জেনে নেয়া যাক।
‘রাত জাগা ফুল’ সিনেমার প্রেক্ষাপট
প্রথম পরিচালনা হিসেবে থ্রিলার ও রোমান্টিক ধারার এই ছবিটিতে নিজের মেধা ও মননের সর্বোচ্চ পরিস্ফুটন ঘটানোর চেষ্টা করেছেন দক্ষ অভিনেতা মীর সাব্বির। এখানে নামটা রূপক; যেখানে চিরন্তন আলো-আধারের সংঘর্ষে আলোর জয়োল্লাসের কথা নিহিত।
আরও পড়ুন: অনন্য মামুনের পরিচালনায় নিরব-মিথিলার চলচ্চিত্র ‘অমানুষ’-এর শুভমুক্তি ডিসেম্বরে
প্রতিটি মানুষের মাঝেই থাকে এক নিগূঢ় অন্ধকার। সেই অন্ধকারে যখন ক্ষীণপ্রায় আলোটা ধীরে ধীরে ঝলকানিতে রূপ নেয় তখুনিই হয় আসল বিজয়। আর এরকম দ্বৈত পরিবেশে মানুষের বিচরণটা অস্বাভাবিক নয়। একে ঘিরেই আন্দোলিত হয় সমাজ-সংস্কৃতি, প্রেম-ভালোবাসা, দেশ-জাতি। কিন্তু চরম দোটানার মধ্যেও ইতিবাচকতার পৃষ্ঠপোষকতা করাটা মনুষ্যত্বের পরিচায়ক।
আর এই দৃষ্টিভঙ্গিটাকেই ‘রাত জাগা ফুল’ এই তিনটা শব্দ দিয়ে গাঁথা হয়েছে। সাথে অনুরণনে আছে বাংলার মাটি, প্রকৃতি, সুর, ভালবাসা; সর্বপরি এক প্রাণোচ্ছল বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: সরকারি অনুদানের ‘শ্রাবণ জ্যোৎস্নায়’ সিনেমায় নায়িকা দীঘি
‘রাত জাগা ফুল’ চলচ্চিত্র নির্মাণ
ছবিটির চিত্রনাট্য তৈরি, সংলাপ লেখা, গান রচনা ও শিল্পী বাছাইসহ পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেছেন মীর সাব্বির। সরকারি অনুদানের পাশাপাশি সহ-প্রযোজক হিসেবে ছিলেন তাঁর নিজেরই সিনেমা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ফুলঝুড়ি মিডিয়া লিমিটেড।
২০১৯ এর ১ ডিসেম্বর ছবির শ্যুটিং শুরুর পর করোনার মহামারির আগেই সব শ্যুটিং শেষ হয়ে গিয়েছিলো। বেশ সন্তর্পণেই বরিশাল, কালিয়াকৈর, পূবাইল ও ঢাকাকে কেন্দ্র করে চলেছিলো সিনেমাটির দৃশ্যধারণ। কিন্তু পোস্ট-প্রোডাকশন তখনো বাকি, আর সেটাই আটকে গিয়েছিলো করোনার জন্য।
আরও পড়ুন: জিৎ-এর প্রযোজনায় প্রসেনজিৎ-মিথিলা জুটির প্রথম ছবি 'আয় খুকু আয়'
অতঃপর সামগ্রিক কাজ শেষ করে সেন্সরের জন্য চলচ্চিত্রটি জমা দেয়ার পর শুধু যে তা কোনো দৃশ্য কাটা ছাড়াই সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে যায় তা নয়। প্রথম কাজ হিসেবে মীর সাব্বিরের পরিচালনার অনেক প্রশংসাও করেন চলচ্চিত্রের নিরীক্ষকগণ।
চলচ্চিত্রটির গানগুলোর মধ্যে কয়েকটি গানও লিখেছেন সাব্বির। মোট পাঁচটি গানের মধ্যে টাইটেল গানটি পল্লী সম্রাজ্ঞী মমতাজের গাওয়া। বাকি গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন এস আই টুটুল, রাহুল আনন্দ, শফি মন্ডল, হৃদয় খান ও দুই বাংলার জনপ্রিয় শিল্পী নচিকেতা। সঙ্গীত আয়োজনে ছিলেন ইমন চৌধুরী, হৃদয় খান ও তমাল চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন: সিয়াম-পূজা জুটি ও তাসকিনের অ্যাকশন থ্রিলার ‘শান’ দিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন বছর
‘রাত জাগা ফুল’ এর অভিনেতা-অভিনেত্রী
ছবিটি নির্মাণের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয়ও করবেন মীর সাব্বির। তাঁর চরিত্রের নাম রইস। নবাগত জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর চরিত্রের নাম থাকছে ফারিহা। ঐশীর এটি চুক্তিকৃত চতুর্থ চলচ্চিত্র হলেও এখন পর্যন্ত তার শুধু একটি সিনেমা প্রকাশ পেয়েছে, আর সেটি হলো ৩ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত মিশন এক্সট্রিম। এছাড়া তার অভিনীত মুভিগুলোর মধ্যে মুক্তির অপেক্ষায় আছে ‘নূর’ এবং ‘আদম’।
ঐশীর সহ-অভিনেতা হিসেবে থাকছেন আরেক নবাগত জনপ্রিয় অভিনেতা আবু হুরায়রা তানভীর। ২০১৭ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গহীন বালুচর’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে তার অভিজাত অভিষেক ঘটে। সম্প্রতি তিনি সাসপেন্স মুভি ‘আকবর: ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন ঢাকা’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন: বড় পর্দায় তাহসান-বাঁধন জুটির ‘অ্যা ব্লেসড ম্যান’
‘রাত জাগা ফুল’-এ আরও দেখা যাবে ছোট পর্দা থেকে শুরু করে বড় পর্দা ও ওটিটিতে এ সময়কার ব্যস্ততম ও শক্তিমান অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুকে। পাশাপাশি আরও থাকবেন দিলারা জামান, শর্মিলী আহমেদ, আবুল হায়াত, এজাজুল ইসলাম, মাজনুন মীজান ও জয়রাজ-এর মত দেশখ্যাত অভিনেতারা।
মীর সাব্বিরের স্ত্রী নাজনীন চুমকীও আছেন অভিনেত্রীদের তালিকায়। এছাড়া অন্যান্য ভূমিকায় অভিনয় করবেন আবদুল্লাহ রানা, মুকুল সিরাজ, রাশেদ মামুন অপু, তানিন তানহা ও সাহেদ।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জের ফুয়াদের স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত!
শেষাংশ
সরকারি অনুদানের ছবিগুলোর মধ্যে প্রথম প্রকাশিত হওয়ায় বছরান্তে সিনেমা প্রেমীদের হাজারও প্রত্যাশা থাকবে ‘রাত জাগা ফুল’ নিয়ে। সমালোচকসহ ঢালিউডের নিয়মিত দর্শকরা নতুন বছরকে মনে করছেন বাংলাদেশের সিনেমার বিপ্লবের বছর। সে পটভূমিতে এই ছবিটি সরকারি অনুদানের সিনেমাগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এর সফলতার ওপর নির্ভর করছে করোনা পরবর্তী ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির তার নিজ মহিমায় ফিরে আসাটা। তাছাড়া মীর সাব্বিরের পরিচালনা ক্যারিয়ারের অসামান্য অর্জনের সম্ভাবনা তো থাকছেই। সেই সঙ্গে থাকছে বাংলাদেশি সিনেমার পরিবেশনে নতুনত্বের হাতছানি।
আরও পড়ুন: ‘জয় ভীম’: হলিউডকে পেছনে ফেলে আইএমডিবি রেটিং-এ শীর্ষে প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র