শত অভিমান বুকে নিয়ে নিরবে চির বিদায় নিয়েছেন কিংবদন্তি রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ। যার হাত ধরে আজ অনেক রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ছড়িয়ে আছে দেশ-বিদেশে। সেই মানুষের হঠাৎ চলে যাওয়া যেন শোকের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সবার মাঝে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বাদ জোহর মোহাম্মদপুর জামে মসজিদে জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে সাদিকে সমাহিত করা হয়।
সাদি মহম্মদের মা মারা যান গত বছর। মা হারানোর বেদনা কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি। এরপর অনেকটাই নিরব হয়ে যান তিনি।
সাদি মহম্মদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। তার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। তার বাবা আওয়ামী লীগের নেতা সলিমউল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতা বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে সেজ ছেলে সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ। মূলত সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি।
পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের পুরো বাড়ি। পাশাপাশি গুলি করে হত্যা করা হয় সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহকে। পরে তার বাবার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়।
ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় বুয়েটে ভর্তি হন। কিন্তু যেই ছেলে একটি বাংলাদেশের রবীন্দ্রসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী হবেন তার তো প্রকৌশলে মন বসানো সম্ভব নয়।
তাই ১৯৭৫ সালে গানের টানে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে চলে যান সাদি মহম্মদ। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। সেই থেকে গানের জগতে পথচলা তার।
বর্ষা ও বসন্তের গান ভীষণ পছন্দ করতেন সাদি মহম্মদ। সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র, উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেনের সিনেমা ছাড়াও হলিউডের ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’, ‘রোমান হলিডে’ ছিল তার পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়া বই পড়তে ভালোবাসতেন। তার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন ছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে পরিচিতি থাকলেও আধুনিক গানও গেয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন।