ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা খানিকটা হলেও বদলে গেছে। যদিও সেটি কেবলই ঈদকে কেন্দ্র করে। তবে ২০২৩ সালে এসে সিনেমার সংখ্যা বেড়েছে। সেই সংখ্যাটা প্রায় ৫০। কিন্তু ঈদ ছাড়া অন্য সময় যেসব সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সেগুলো তেমন আলোচিত হয়নি বলা যায়। আর এটিই যেন ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় সংকট।
২০২৩ সালে অর্ধশত সিনেমা মুক্তি পেলেও ব্যবসায়িক সাফল্য ও আলোচনায় থাকা সিনেমার সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকটি। সেই তালিকায় রয়েছে ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘প্রহিলেকা’, ‘১৯৭১: সেই সব দিন’। তবে এর বাইরেও স্বল্প সময়ের জন্য আলোচনায় ছিল ‘এমআরনাইন’, ‘অন্তর্জাল’, ‘কিল হিম’, ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’সহ কয়েকটি সিনেমা।
এ বছর দেশের সিনেমার সঙ্গে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া হিন্দি সিনেমাগুলো। আর এটি ছিল সিনেমা নিয়ে আলোচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর আগেও এ দেশে হিন্দি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। তবে সমসাময়িক বা একইদিনে মুক্তির ঘটনা এবারই প্রথম। যার শুরু হয় শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ এর মধ্য দিয়ে। এরপরই বড় ধামাকা নিয়ে আসে ‘জাওয়ান’। পুরো বিশ্বের সঙ্গে একই দিনে মুক্তি দিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি হয় বাংলাদেশে।
হিন্দি সিনেমা নিয়ে শেষ আলোচনা ছিল ‘অ্যানিমেল’ ও ‘ডানকি’। সবগুলো সিনেমা মাল্টিপ্লেক্সে ব্যবসা করতে পারলেও সিঙ্গেল স্ক্রিনে তেমন সুবিধা করতে পারেনি।
এবার আসি ২০২৩ এ আলোচিত সিনেমাগুলো নিয়ে।
সিনেমার সঙ্গে ব্যবসা যেহেতু দীর্ঘদিনের বাস্তবতা তাই একে এড়িয়ে চলার সুযোগ বিশ্বের কোনো ইন্ডাস্ট্রিরই নেই। সেই হিসাব কষে ২০২৩ এ সফলতা পেয়েছে ‘প্রিয়তমা’ ও ‘সুড়ঙ্গ’। শুধু দেশে নয় পশ্চিমা দেশগুলোতেও এ দুটি সিনেমার ব্যবসা আশানুরূপ।
‘প্রিয়তাম’ দিয়ে প্রথমবার বড়পর্দায় অভিষেক হলো নির্মাতা হিমেল আশরাফের। একসময় ছোটপর্দায় নিয়মিত নাটক বানালেও পরে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। মাঝে শাকিব খান যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন হিমেল আশরাফের সঙ্গে প্রায়ই ছবি দেখা যেত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেই যোগসূত্রে একসময় হিমেলের প্রথম সিনেমার নায়ক হলেন শাকিব। আর এটিই হয়তো নির্মাতার সফলতা।
কারণ ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি যে কাঁচা হাতে বানানো কাজ সেটি সাধারণ দর্শকের কাছে সহজেও ধরা পড়ে। গল্পের প্লট অনেক বড় হলেও ঠিক যেন অভিজ্ঞতার কাছে পর্দায় গল্পের মালাটা ঠিকমতো গাঁথতে পারেননি এই পরিচালক। যদিও শাকিব খানের কারণে এই যাত্রায় উতরে গেছেন তিনি। ‘প্রিয়তমা’য় শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন কলকাতার অভিনেত্রী ইধিকা পাল।
তার অভিনয় আর মিষ্টি হাসি নজর কেড়েছে বাংলাদেশের দর্শকদের। আর গুঞ্জন চলছে বাংলাদেশের আরও একটি সিনেমায় দেখা যাবে তাকে।
অন্যদিকে ‘সুড়ঙ্গ’ দিয়ে প্রথমবার বড়পর্দায় এলেন আফরান নিশো। ‘পরান’ এরপর ‘সুড়ঙ্গ’ দিয়ে আবারও আলোচনা তৈরি করেন রায়হান রাফি। সিনেমাটি আলোচনার কারণ মূলত তারা দুজনই। এরসঙ্গে সিনেমাটির প্রচার কৌশল আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে ব্যবসার ক্ষেত্রে।
কারণ শাকিব খানের সিনেমার সঙ্গে সিনেমা মু্ক্তি দিয়ে ব্যবসা করা চারটিখানি কথা নয়। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ঈদের সিনেমা মানে শাকিব খান। একই ঈদে একাধিক সিনেমা মুক্তি পেত তার। সেই অবস্থার পরিবর্তনটাও ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক।
পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী আবারও বড়পর্দায় ফিরলেন ‘প্রহেলিকা’ নিয়ে। আর সঙ্গে অনেকদিন পর নিয়ে এলেন মাহফুজ আহমেদকে। দীর্ঘদিন পর্দার বাইরে থেকে বড়পর্দা দিয়ে এমন কামব্যাক তার ভক্তদের জন্য ছিল নতুন চমক। এখানে জুটি বাঁধেন শবনম বুবলির সঙ্গে। সিনেমাটি ব্যবসায়িক জায়গা থেকে খুব একটা সফলতার মুখ না দেখলেও ছিল প্রশংসিত।
ঈদ ছাড়া যদিও এখন সিনেমা হিট হয় না বলা চলে। এরমধ্যে ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ ভিন্ন এক উদাহরণ তৈরি করেছে। তার ওপর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা। সারা বছর সিনেমা নিয়ে নানান আলোচনার ভিড়ে ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ নিজ গুণেই এগিয়ে গেছে।
ইনামুল হকের উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছে হৃদি হক। আর এরমধ্য দিয়ে বড়পর্দায় পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় হৃদির। অভিনয়ে ছিলেন তারিন জাহান, ফেরদৌস আহমেদ, সজল নূর, লিটু আনাম, সানজিদা প্রীতি, হৃদি হক, মামুনুর রশীদ, আবুল হায়াত, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
ঢাকাই সিনেমা ইন্ডস্ট্রির বর্তমান অবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকে আশার কথা বললেও অনেকেই বলছে ব্যর্থতার কথা। কারণ একটি সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি টিকে থাকতে বছরের বেশ কয়েকটি ব্যবসা সফল সিনেমার প্রয়োজন। তবে এমন অবস্থা সামনে তৈরি হয়ে যাবে বলেও আশা করা যাচ্ছে।