সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকারী মিডল্যান্ড ব্যাংকের কর্মকর্তা সোহেল আহমেদ তখন একটি ফরমে আবদুল হালিমের আঙুলের ছাপ নিয়ে তা পূরণ করে পাঠালেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে এলে সহকারী প্রিজা্ইডিং কর্মকর্তা ইভিএম খুলে দিলেন। এতে আবদুল হালিমের ভোট দিতে মোট সময় লাগল প্রায় ২৫ মিনিট।
আবদুল হালিমের মতো বিড়ম্বনা অবশ্য সবার হয়নি। যাদের আঙুলের ছাপ মিলেছে তাদের জন্য ইভিএমে ভোট উৎসব হয়েই এসেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ফাতেমা তুজ্জ জোহরা অসুস্থতার কারণে এবার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তবে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে ভোট দিতে এসেছিলেন তিনি। ইভিএমে সহজে ভোট দিতে পেরে তৃপ্তি প্রকাশ করে তিনি ইউএনবিকে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পেরে ভালো লাগছে। এটা আনন্দের বিষয়।’
কেমন সময় লাগে?
ভোটার কেন্দ্রে প্রবেশ করার পর তার স্মার্টকার্ড বা আঙুলের ছাপ মিললে ভোট প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এরপরে ভোটার গোপন কক্ষে প্রবেশ করে প্রথমে মেয়র, তারপর কাউন্সিলর এবং সর্বশেষ সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থীকে ভোট দেন।
একজন ভোটার তার ভোটদান প্রক্রিয়া শেষ না করা পর্যন্ত পরবর্তী ভোটারের প্রক্রিয়া শুরু করা যায় না জানিয়ে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে থাকা খাদ্য কর্মকর্তা তামিম আহমেদ ইউএনবিকে বলেন, ‘সব ভোটার একই রকম দক্ষ নয়। কোনো কোনো ভোটার দ্রুত কাজটি শেষ করেন। আবার কেউ কেউ ১৫-২০ মিনিট সময় নেন।’
ভোটে দিতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বোরহান উদ্দিন ইউএনবিকে জানান, তার ভোট দিতে ৫-৭ মিনিট লেগেছে।
‘আমি প্রযুক্তিবান্ধব মানুষ। তাই ইভিএমে ভোট দিয়ে ভালো লেগেছে।’বলেন তিনি।
আবার, একজন ভোটারের যদি আঙুলের ছাপ বা স্মার্টকার্ড না মিলে তাহলেও তিনি ভোট দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা শতকরা ১ ভাগ ভোটারের ভোট তার ক্ষমতা বলে নিতে পারবেন। তবে এ জন্য ভোটারের তথ্য একটি নির্ধারিত ফরমে সংরক্ষণ করতে হয়।
মতিঝিল পোস্ট অফিস হাই স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ আলম জানান, ‘সাধারণত বয়স্ক লোকদের আঙুলের চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় ভোট নিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে দ্রুত ভোট নেয়ার ব্যবস্থা করছি।’
ধানের শীষের এজেন্ট নেই
মতিঝিল, খিলগাঁও ও তালতলা এলাকায় কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে কোনো পোলিং এজেন্টকে চোখে পড়েনি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে পুলিশ হাসপাতালের উল্টো দিকে কমিশনার কার্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে মহসিন নামে একজন নিজেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট বলে পরিচয় দেন। তবে তার কাছে কোনো ধরনের পরিচয়পত্র ছিল না।
নিজের কার্ড থাকা প্রসঙ্গে তিনি ইউএনবিকে জানান, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কার্ড বাসায় ফেলে এসেছেন। অবশ্য পাশে থাকা অন্য এজেন্টরা তাকে বিএনপির পোলিং এজেন্ট বলেই দাবি করেন।
এছাড়া অন্য কেন্দ্রগুলোতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থীর কোনো এজেন্ট চোখে পড়েনি। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট সব কেন্দ্রেই ছিল।
কেন্দ্র দখল, ৩০ মিনিটেই মুক্ত
বেলা ১১টা ১০ মিনিটে এক কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রায় তিনশ সমর্থক মিছিল নিয়ে মতিঝিল পোস্ট অফিস কেন্দ্রে ঢুকে পড়েন। তারা ভেতর থেকে সব ভোটার বের করে দেন। অবশ্য খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে আসেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেই সাথে বিজিবির একটি টহল গাড়িও আসে। পরে অবশ্য কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই কেন্দ্রে থেকে চলে যান দখলকারীরা। এ ঘটনায় ভোটার শূন্য হয়ে পড়ে কেন্দ্রটি।
নিয়ম ভঙ্গের মহড়া
ভোটকেন্দ্রের আশপাশে জমায়েত হওয়ার বিধান নেই। কিন্তু প্রায় সব কেন্দ্রেই যেন এ নিয়ম ভঙ্গের মহড়া হচ্ছিল। কাউন্সিলর ও মেয়রপ্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা কেন্দ্রের প্রবেশপথ প্রায় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। আর পুলিশকেও নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ভোটারের উপস্থিতি কম
পরিবেশ অনেকটা নিরুত্তাপ থাকলেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হলেও বেলা ১০টা পর্যন্ত মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভোটার ভোট প্রদান করেন। আগ্রহ না থাকা ও ইভিএম ভীতিসহ নানা কারণে ভোটার কম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।