মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে গাইবান্ধার সাঘাটায় পূর্ব আমধির পাড়া বটতলা সেতু। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন অন্তত শতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ।
সেতুটি যাতায়াতের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে মুষ্টির চাল ও চাঁদা তুলে সেতুর ওপর তৈরি করেছে বাঁশ-কাঠের সাঁকো।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে নির্মাণ করা হয় ১৯ মিটার দৈর্ঘ্যের গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পূর্ব আমধিরপাড়া বটতলা সেতু।
নির্মাণকাজে কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় নির্মাণের ৫ বছরের মাথায় নড়বড়ে হয়ে পড়ে সেতুটি। তদারকি না থাকা ও সংস্কার না করায় চলতি বছরের বন্যায় পানির স্রোতে সেতুটি ভেঙে পড়ে এবং দুই পাশের মাটি ধসে যায়। দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে খাদের সৃষ্টি হয়।
হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দি গ্রামের বাসিন্দা মোনারুল ইসলাম বলেন, এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অনেক শিশুসহ সব শ্রেণির মানুষ যাতায়াত করে। সেতুটি চলাচলের অযোগ্য হওয়া ২২টি গ্রামের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, মুমুর্ষ রোগী নিয়ে ঘাড়ে করে সেতু পার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অনেক প্রসূতি মা এই সেতুর কারণে পার হতে না পারায় সেতুর পাশের বাড়িতে সন্তান প্রসবের ঘটনাও ঘটেছে।
দীঘলকান্দি চরের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ায় ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যা সেতু। এছাড়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা ভয়ে অনেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই সেতু দিয়ে সাঘাটা, হলদিয়া ও জুমারবাড়ি ইউনিয়নের বেড়া, গারামারা, দক্ষিণ দীঘলকান্দি, উত্তর দীঘলকান্দি, পাতিলাবাড়ি, জুমার বাড়ি, গোবিন্দপুরসহ অন্তত শতাধিক গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে।
মোমেনা খাতুন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে কাজে যাই। কিন্তু বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে ভয় লাগে। সেতুটি অনেক নড়বড়ে, কখন যে পানিতে পড়ে যাই।
এদিকে এই সেতুটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়লে বাধ্য হয়ে ইউপি চেয়াম্যান রফিকুল ইসলামসহ এলাকার মানুষ নিজেদের উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে মুষ্টির চাল ও চাঁদা সংগ্রহ করে সেই চাঁদা দিয়ে সেতুর ওপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে। তাতে পায়ে হেঁটে কোনোমতে চলাচল করা গেলেও বাইক, ইজিবাইক-অটোরিকশা, ভ্যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সামিউল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে সেতুটি ধসে গেছে। আমরা চেষ্টা করছি ওই জায়গায় নতুন করে কোনো উদ্যোগ নেওয়া করা যায় কি না।