কয়েলও তেমন কাজ করে না। মশা নিধনে কয়েল ছাড়াও ইলেকট্রিক জাতীয় বিভিন্ন মেশিন ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, যা ব্যয়বহুল। মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ ঢাকার দুই সিটির (উত্তর ও দক্ষিণ) বাসিন্দারা। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার মশার উপদ্রব খুব বেড়েছে।
ঢাকার দুই সিটির বসবাসকারী বেশ কয়েকজন নাগরিকের সাথে ইউএনবির এ প্রতিনিধির কথা হলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পল্টন এলাকায় বসবাস করেন সরকারি কর্মচারী কামাল হোসেন। তিনি ইউএনবিকে বলেন, আগে রাতে মশার উপদ্রব ছিল। এখন দিনে-রাতে সবসময় মশার যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। তবে দিনের চেয়ে রাতে মশার উপদ্রব বেশি।
ঢাকা দক্ষিণে প্রচুর মশা বৃদ্ধি পেয়েছে। মশানিধনে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস ইউএনবিকে বলেন, ‘আগামী দুই সপ্তাহ পর থেকে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশা করছি।’
আরও পড়ুন: ডিএনসিসিতে মশা নিয়ন্ত্রণে চতুর্থ প্রজন্মের লার্ভিসাইড
বর্ষায় মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে ঘরোয়া উপায়
‘ঢাকাবাসীকে আমরা একটু ধৈর্য ধারণ করতে অনুরোধ করছি,’ বলেন তিনি। আমরা কৌশল পরিবর্তন করেছি। এখন আমরা যে কার্যক্রম নিচ্ছি, আমাদের সকালের কার্যক্রম ৪ ঘণ্টা চলছে, বিকালের কার্যক্রম আমরা আরও বৃদ্ধি করেছি। সুতরাং আমরা আশাবাদী, আগামী দুই সপ্তাহ পর থেকে কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে ডেঙ্গুর জন্য আমাদের কৌশল পরিবর্তন করে আবার এপ্রিল থেকে আমরা কার্যক্রম আরম্ভ করব।
নতুন কৌশল ও কীটনাশক কেন আগে নেয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একটি বিষয়ে আপনাকে পরিষ্কার করতে চাই- আমাদের বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তারা ঘটনা ঘটে গেলে অনেক বড় বড় পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু ঘটনা ঘটার আগে আমাদের কী করণীয়, আমাদের কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে রকম পরামর্শ আমরা পাই না। আমাদেরকে বলা হয়েছিল, ডেঙ্গুর প্রকোপটা যেহেতু আছে, তাই এই কার্যক্রম ডিসেম্বর পর্যন্ত চালিয়ে নিতে হবে। কিন্তু সেই কার্যক্রমটা ভুল ছিল। শীত আসার সাথে সাথেই আমাদেরকে কিউলেক্স মশার বিরুদ্ধে কার্যক্রম নেয়া উচিত ছিল। কারণ, বিভিন্ন স্থানে পানি বদ্ধ হয়ে যাচ্ছিল।’
‘আমরা যদি খালগুলো আরও দুমাস আগে পেতাম তাহলে হয়তো বা আমরা বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম আরও বেগবান করতে পারতাম,’ বলেন তাপস।
‘তাহলে ধীরে ধীরে কিউলেক্স মশার প্রভাব কমে যেত এবং আমরা কীটনাশক পরিবর্তন করলে ফলাফল পেতাম। গত জানুয়ারি থেকে আমরা খালগুলো হতে যে বর্জ্য অপসারণ ও চ্যানেল পরিষ্কারকরণ কার্যক্রম শুরু করেছি, সেই কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্রায় ২০ কিলোমিটার খাল হতে বর্জ্য-পলি অপসারণ করা হয়েছে। এই সময়ে আমরা প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন বর্জ্য-পলি অপসারণ করেছি।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে বসুন্ধরায় বসবাসকারী ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, দিনে ঘুমালেও মশারি লাগে। রাতে তো মশা শরীর থেকে দুই হাত দিয়ে সরাতে হয়।
তিনি পরিতাপ করে বলেন, ‘বসুন্ধরায় সিটি করপোরেশন থেকে মশা নিধনে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে চোখে পড়েনি। একটি সুন্দর আবাসিক এলাকা কিন্তু এখন বড় সমস্যা মশার উপদ্রব।’
আরও পড়ুন: এডিশ মশা রোধে জলশয় ও নর্দমায় তেলাপিয়া চাষ: তাপস
বারিধারা জে ব্লকে বসবাসকারী ডা. আশেক ইউএনবিকে বলেন, গত কয়েকবছরের তুলনায় মশা অনেক বেশি। মশা এখন আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েলসহ ইলেকট্রিক বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করলেও মশা তেমন নিধন হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, ৮ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত (শুক্রবার ব্যতীত) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় কিউলেক্স মশা নিধনে সমন্বিত অভিযান (ক্রাশ প্রোগ্রাম) শুরু হবে। এই ক্রাশ প্রোগ্রামে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের সকল মশকনিধন কর্মী এবং যান-যন্ত্রপাতি একটি অঞ্চলে নিয়ে একদিন করে মশকনিধন অভিযান পরিচালনা করা হবে।
‘কিউলেক্স মশা নিধনে আমরা ইনটেন্সিভলি কাজ করবো। মশক নিধনের পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা অভিযানও পরিচালিত হবে। সমগ্র ঢাকা উত্তরকে আমরা সম্পূর্ণ সুইপিং করতে চাই,’ বলেন তিনি।
প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লার্ভিসাইডিং এবং বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এডাল্টিসাইডিং করা হবে। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা অভিযানও চলবে। ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও প্রকৌশল বিভাগের সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হবে। মশকনিধন অভিযান চলাকালে মেয়রসহ কাউন্সিলররা মাঠে থাকবেন।
নগরজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ডিএনসিসি মেয়র ওয়াদাবদ্ধ। ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে এই অভিযান পরিচালিত হবে। এছাড়াও খালগুলো মশার প্রজননস্থল। ডিএনসিসির উদ্যোগে খালগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। ডিএনসিসি মেয়রের একটিই নির্দেশনা, যে কোনো মূল্যে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিশেষ মশকনিধন অভিযান গত রবিবার শেষ হয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ও শুক্রবার ব্যতীত মোট সাতদিন এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। এই সাতদিনের বিশেষ অভিযানে মোট ৪৪ হাজার ৯৬৮টি সড়ক, নর্দমা, জলাশয়, স্থাপনা ইত্যাদি পরিদর্শন করা হয়। এর মধ্যে ২১০টিতে মশার লার্ভা পাওয়া যায় এবং ৩০ হাজার ১২৯টিতে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। মশার লার্ভা ও বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া এবং অন্যান্য অপরাধে ৮৯টি মামলায় মোট ১০ লাখ ৮২ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
আরও পড়ুন: মশা নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকে ডিএনসিসিতে আবার চিরুনি অভিযান
মশা নিধনের সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ইউএনবিকে বলেন, এখন অ্যানোফিলিস ও কিউলেক্স মশা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মশাগুলো খুব বিপদজনক নয়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা সবাই মিলে এই সমস্যা থেকে নগরবাসীকে পরিত্রাণ দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ঢাকা শহরের খাল-নালা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারলে এসব মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে অনেকাংশে মুক্তি দেয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, রাজধানীর খালসমূহের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার পাশাপাশি খালের দুই পাশ অবৈধভাবে দখল করে নির্মিত সব ধরনের অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে দুই মেয়রকে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে অনেকগুলো সভা করে কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে।