ভবদহ অঞ্চল একসময় উর্বর ফসলি জমি ও প্রাণবন্ত জনবসতির জন্য পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে এটি পরিণত হয়েছে এক বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে। গত এক দশকের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অপরিকল্পিত নীতির কারণে ভবদহ প্রতি বছরই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে।
সর্বশেষ জুলাই মাসের টানা বৃষ্টিপাত ও নদ-নদী, খাল-নালার নাব্যতা হ্রাসের কারণে ভবদহের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার দেড়শ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। ফসলি মাঠ, বসতবাড়ি, অধিকাংশ শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে। তারা গত ৭ আগস্ট যশোর জেলা প্রশাসকের কাছে ছয় দফা দাবি পেশ করেছেন।
দাবির মধ্যে রয়েছে স্লুইসগেটের সব ভেন্ট খুলে দেওয়া, আমডাঙ্গা খালের জমি অধিগ্রহণ ও ৮১ কিলোমিটার নদী খনন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন। বর্তমানে ভবদহে স্লুইসগেটের ২১টি ভেন্টের মধ্যে মাত্র আটটি খোলা রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কমিটির অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো, গত এক দশকে ভবদহ প্রকল্পে প্রায় ১২৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তবুও কার্যত কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। এলাকাবাসী ও পরিবেশবিদরা এই অর্থের অপচয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। তাদের মতে, ভবদহে শুধু অর্থ বরাদ্দ করলেই কাজ হবে না; অর্থটি যদি সঠিকভাবে ও স্বচ্ছভাবে ব্যবহার না করা হয়, তাহলে কোনো সুফল মিলবে না।
আরও পড়ুন: বন্যার পানি নামছে, জেগে উঠছে ক্ষত