মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মেয়াদ এ বছরই শেষ হতে যাচ্ছে। এরপর কারা এ পদে আসছেন তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে অক্টোবরে এবং মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে জুলাইয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এসব শীর্ষ পদ পূরণের জন্য নতুন মুখ বেছে নেওয়া হতে পারে।
মুখ্য সচিব পদের জন্য বর্তমানে চারজন সচিব বিবেচনায় রয়েছেন- নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন।
তবে এসব পদে সচিব নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে শীর্ষ এ দুটি পদে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ১৯৮৬ (৮ম) ও ১৯৮৭ (৯ম) ব্যাচের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের চুক্তি নবায়ন করা না হলে নবম ও দশম বিসিএস ব্যাচ থেকে নতুন নিয়োগ আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তির মেয়াদ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে এবং মাহবুব হোসেনের সঙ্গে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে চুক্তি শেষ হবে।
আরও পড়ুন: বাজেট ২০২৪-২৫: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ৫ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইউএনবিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদগুলোতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে আর প্রয়োজন দেখছি না। তবে প্রশাসনের কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কারিগরি পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার।
জানা যায়, প্রশাসনের শীর্ষ দুটি পদে সাধারণত জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা হয়। এবারও তেমনটি হলে ৩-৪ জনের মধ্যে থেকেই দুজন উঠে আসতে পারেন। নবম ব্যাচের দুজন সচিব নিয়মিত চাকরিতে আছেন।
তারা হলেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।
তবে মুনিরুছ সালেহীনের আগামী ২৮ আগস্ট অবসরে যাওয়ার কথা। মেজবাহ উদ্দিনের চাকরির মেয়াদ আছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশাসনের অনেকে বলছেন, সব ঠিক থাকলে মেজবাহ উদ্দিনেরই মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মুখ্য সচিব পদের জন্য আলোচনায় আছেন দশম ব্যাচের মোস্তফা কামাল ও জাকিয়া সুলতানা। দুজন ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর একই প্রজ্ঞাপনে সচিব হন। তাদের মধ্যে মোস্তফা কামাল আগামী বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ও জাকিয়া সুলতানা ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। তবে এই পদে মোস্তফা কামালের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে।
তিনি প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’র বর্তমান সভাপতি। আর জ্যেষ্ঠতার নীতি অনুসরণ করা না হলে ১৩ ব্যাচের কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সালাহ উদ্দিন মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
তবে নতুন করে আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চান না প্রশাসনের বেশিরভাগ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীর ওপর: মন্ত্রী
সচিবালয়ে বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রশাসনের কেউই চান না, শীর্ষ পর্যায়সহ সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হোক। তাদের মতে, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে জনপ্রশাসন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও টানা ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে সরকার পরিচালনা করছেন। প্রশাসনের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় তার নখদর্পণে। তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আর প্রয়োজন নেই।
আবার অনেকে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব দুজনই চুক্তিতে কর্মরত। তারাও কিন্তু একসময় নতুন মুখ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। সুতরাং, নতুনেরাও সুযোগ পেলে পুরোনোদের মতো সংশ্লিষ্ট পদে যোগ্যতার প্রমাণ দেবেন। তাই সিনিয়র সচিবদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা ও মেধায় যারা এগিয়ে, তাদেরই এসব পদে নিয়োগ দেওয়া উচিত বলে শীর্ষ স্থানীয় আমলারা মনে করেন।
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান ইউএনবিকে বলেন, সচিব পদে চুক্তিতে একটি নিয়োগ হলে, চার স্তরে পদোন্নতি থেমে যায়। এতে অতিরিক্ত সচিব যেমন সচিব হতে পারেন না, তেমনি যুগ্ম সচিবও অতিরিক্ত সচিব হতে পারেন না। একইভাবে উপসচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিবেরাও বঞ্চিত হন। তাই শুধু প্রশাসন নয়, সব ক্যাডারেই সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত কর্মকর্তাদেরই নিয়োগ দেওয়া উচিত।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় অভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আইনের খেলাপ না হলেও চুক্তির সংস্কৃতি থেকে সরে আসার সময় হয়েছে। চুক্তি হলে তার পরবর্তী ব্যাচের সদস্যরা সচিব থেকে বঞ্চিত হন।
আরও পড়ুন: আমলাদের সন্তানের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিন্তা সরকারের নেই