উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটের এলএনজি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নতুন তালিকা তৈরি করতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে পদক্ষেপ নিচ্ছে পেট্রোবাংলা।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার ইউএনবিকে বলেন, ‘টেন্ডারটি গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য প্রস্তুত। আশা করছি বিজ্ঞপ্তিটি আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে প্রকাশ করা হবে।’
তিনি জানান, এইবার উন্মুক্ত টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এলএনজি সরবরাহকারীদের একটি নতুন তালিকা তৈরি করা হবে।
দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণ করতে ২০১৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করছে বাংলাদেশ।
সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে নির্দেশনায় পেট্রোবাংলা ও এর এলএনজি পরিচালনাকারী সহযোগী প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আগ্রহ প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছিল।
প্রাথমিকভাবে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন-২০১০ অনুযায়ী ১৭টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর আরও ৫টি কোম্পানিকে তালিকায় যুক্ত হয়।
এই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকেই পেট্রোবাংলা আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করে আসছে। তবে প্রতিবার দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি বারবার চুক্তি পাচ্ছে এবং এ ব্যবসায় আধিপত্য করছে।
কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে-সিঙ্গাপুরের ভিটোল এশিয়া, সুইজারল্যান্ডের টোটালএনার্জিস, যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি ও সিঙ্গাপুরের গানভর।
এই মধ্যে কিছু কোম্পানির ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী গ্রুপের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন-২০১০ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং এর পরিবর্তে ২০০৮ সালের পাবলিক প্রোকিউরমেন্ট রুলসের আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়।
এছাড়া এলএনজি আমদানিতে সরকারকে বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করতে হয় উল্লেখ করে বাল্ক এলএনজি আমদানিতে স্বচ্ছতা আনতে শিগগিরই কোম্পানিগুলোর তালিকা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে, শেষ পেট্রোবাংলা উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আগ্রহী কোম্পানির নতুন তালিকা প্রস্তুত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রেটোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নতুন কোম্পানির তালিকা প্রস্তুত হলে, আগের ২৩টি কোম্পানির তালিকা বাতিল করব।’
জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, নতুন এই পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করতে আরও সুপরিচিত আন্তর্জাতিক কোম্পানি উৎসাহিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অনেক কম দামে এলএনজি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এটি সরকারের জ্বালানির খরচ কমাতে সহায়ক হবে।’
বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাপক পরিমাণ গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ দৈনিক ৪০০০ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে ৩১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে দেশে।
মোট ৩১০০ এমএমসিএফডি উৎপাদনের মধ্যে প্রায় ১১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫০-২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস স্পট মার্কেট থেকে আমদানি করা হয় এবং বাকি গ্যাসটি কাতার ও ওমানে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির অধীনে আমদানি করা হয়।