হেমন্ত মানেই শীতের পূর্বাভাস। এর মধ্যে রাতের শেষাংশে হিম শীতল ঠান্ডা আর ভোরের হালকা কুয়াশা প্রতীয়মান হচ্ছে। আগাম শীতকে সমানে রেখে এমনকি করোনা সংক্রমনে পিছিয়ে পড়া ব্যবসাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে লেপ-তোষক তৈরির পাশাপাশি তুলা ছাঁটাইয়ের কাজে ব্যস্ত খুলনার ধুনকাররা।
তাছাড়া মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে এই পেশার সাথে জড়িত মালিক কর্মচারীরা তাদের দুর্ভোগ বা অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর দৌলতপুরস্থ বেডিং ফেয়ার, হেনা বেডিং সেন্টার, করিম বেডিং হাউজ, শরিফ বেডিং হাউজ, ওয়াহেদ বেডিং, আল্লাহদান বেডিং সেন্টার নামীয় লেপ-তোষকের দোকানগুলোতে এখন সাজা সাজ রব। তুলা ভেদ করে খসখস শব্দ তুলে সুঁই চলছে প্রতিটি দোকানে।
আরও পড়ুন: পঞ্চগড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ, বাড়ছে শীতজনিত রোগ
বিগত বছরের তুলনায় এ বছর শীতের প্রকোপ কথা মাথায় রেখে দৌলতপুর আশপাশের অঞ্চল দেয়ানা, মধ্যডাঙ্গা, শলুয়া, শাহ্পুর, রংপুর, মধ্যডাঙ্গা, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, পাবলা, কাশিপুর, খালিশপুরসহ নিকটস্থ অঞ্চল হতে মানুষ আগে ভাগেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেপ, তোষক বানাতে আসতে শুরু করেছে। তবে করোনার সংকটে পড়ে এ বছর নতুন লেপ-তোষক তৈরি হতে অধিকাংশ পুরনো লেপ ভেঙে নতুন করে বানিয়ে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে কারিগরা। কেউ কেউ আবার নতুন তুলা দিয়ে তৈরি করে নিচ্ছে লেপ, তোষক ও বালিশ।
দৌলতপুর বেডিং ওয়াহিদ বেডিংয়ের মালিক শফি জানান, তারা বছরে প্রায় ৬ মাসই বেকার বসে থাকেন। টুকিটুকি কেনাবেচা হয়। আর শীত মৌসুমেই লেপ-তোষক সিজিন। বিগত শীতে করোনা মহামারীসহ লকডাউনের জন্য দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চাকা অবরুদ্ধ হয়। যার কারণে করোনা শুরু হতে বেশি সময় সম্পূর্ণ বেকার বসে ছিলাম। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই শিথিল, আশাবাদী এই শীতে ভালো সাড়া মিলবে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে
দৌলতপুর আল্লাহর দান বেডিং সেন্টারের মালিক হোসেন বলেন, শীত এখনো জেঁকে না বসলেও অনেকে আগে ভাগেই লেপ ও তোষক বানাতে আসছেন। সারা বছরের চেয়ে শীতের এ তিন মাস বেচাকেনা একটু বেশিই হয়। তাই ক্রেতাদের কথা ভেবে কাজের গুণগতমান বজায় রেখে অর্ডারি কাজের পাশাপাশি রেডিমেড জিনিসও তৈরি করে বিক্রি করছি।
খালিশপুর বেডিং এর কর্মচারী জহিরুল জানান, সারা বছরই গেল করোনার। করোনার কারণে দেনা হয়ে পড়েছি। পেছনের দেনা কাটিয়ে উঠতে পারি নাই। আশা করি এবারের শীতে ভালো কাজ হবে।
চাকুরিজীবী মিরাজুল ইসলাম জানান, এখনো শীতের দেখা না মিললেও আগে ভাগেই শীতের জন্য একটি জাজিম বানিয়ে নিচ্ছি। কারণ শীতের শুরুতেই চাহিদার কারণে দাম বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: শীতের আগমনে কদর বেড়েছে লেপ-তোষকের, বেড়েছে কারিগরদের ব্যস্ততা
খুলনা আঞ্চলিক আওহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ইতোমধ্যেই দিনের তাপমাত্রা কমতে শুরু করছে। সেই সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তথা খুলনা বিভাগে এরই মধ্যে শীতের অনুভব শুরু হয়েছে। তবে আকাশ মাঝে মাঝে মেঘলা থাকায় এখন শীত কিছুটা কম অনুভূত হচ্ছে তবে মেঘ কেটে গেলে শীতের আগমন বেশি ঘটবে। তাছাড়া এ বছর বর্ষা কম হওয়ায় মাটির আদ্রতা কমে গেছে, তাপ ধারণ ক্ষমতাও কম এ কারণে শীতের বার্তা আগে থেকে অনুভব করা যাচ্ছে।
চলতি মাসের ২৯ তারিখ হতে রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানান এ কর্মকর্তা।