যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, বংশাল ও মগবাজারসহ রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, মান ভেদে আলু কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দেয়।
এতে বলা হয়, প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে চাষির খরচ হয় ৮.৩২ টাকা। এমন অবস্থায় হিমাগার পর্যায় থেকে প্রতি কেজি আলুর মূল্য ২৩ এবং পাইকারি মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সরকার পরিচালিত ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৬ অক্টোবরের পর আলুর দাম বেড়েছে ১১১.১১ শতাংশ, তখন প্রতি কেজি আলু ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
তথ্য অনুযায়ী, ১ অক্টোবর প্রতি কেজি আলু ৩৪-৪০ টাকায় বিক্রি হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে দাম ২৮.৩৮ শতাংশ বেড়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আলুর ঘাটতি নেই। কারণ দেশে বার্ষিক চাহিদা ৭৭.০৯ লাখ টন এবং গত ফসলি মৌসুমে উৎপাদিত মোট ১.০৯ কোটি টন আলুর ৩১.৯১ লাখ টন এখন উদ্বৃত্ত রয়েছে।
ইউএনবির সাথে আলাপকালে অনেক ক্রেতা বলেন, বাজারে আলুর দাম নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাব নেই।
বংশালের বাসিন্দা আমিনা বেগম বলেন, ‘প্রয়োজনীয় দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এখন আমাদের প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০-১০০ টাকা, আলু ৫০ টাকা এবং শসা ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ক্ষেত্রেই নয়, বাজারে ফলের দামও অস্বাভাবিক বেড়েছে।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘প্রতি কেজি ডালিম এখন ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, কমলা ১৮০ টাকা, আঙ্গুর ২৫০ টাকা ও পেয়ারা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কীভাবে আমরা এ উচ্চমূল্যে ফল কিনব? অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন কিন্তু এটি সঠিকভাবে তদারকি করার মতো কেউ নেই। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ক্রেতারা কীভাবে এত দামে এগুলো ক্রয় করবেন?
যাত্রাবাড়ীর দোকানদার সাইফুল আলম হতাশ কণ্ঠে ইউএনবিকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে প্রতি কেজি ৪৫-৪৮ টাকায় আলু কিনতে হয়। তাই, গুণাগুণের ভিত্তিতে ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা ছাড়া কিছু করার নেই। এ অবস্থায় ব্যবসা করা খুব কঠিন।’
সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বেড়েছে জানিয়ে শ্যামবাজারের আলুর পাইকারি দোকানদার আলমাস হোসেন বলেন, ‘যদি কোনো পণ্য বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তবে তার দাম কমে। আজ প্রতি কেজি আলু এখানে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা আশা করছি শিগগিরই দাম কমবে।’
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, এ বছর প্রায় ২০ লাখ টন আলুর উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে এবং এ কারণেই দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর প্রচুর লোকসানের পরে অনেক কৃষক আলু চাষ থেকে বিরত ছিলেন। তাই সরকারের উচিত উদ্যোগ নেয়া যাতে কৃষকরা এটি চাষাবাদ করতে এবং সঠিকভাবে লাভ করতে পারেন।’
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘পাইকারি বাজারে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে এবং খুচরা বাজারগুলোতেও এর প্রভাব পড়বে।’
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসককে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে এবং কঠোর মনিটরিং নিশ্চিত করতে চিঠি দেয়া হয়েছে।