মানুষের হস্তক্ষেপ দূর করা ও করদাতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিনের প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে কর নিরীক্ষা বাছাই প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
কর আদায়ে বিদ্যমান মানুষের দ্বারা পরিচালিত পদ্ধতি করদাতাদের অপ্রয়োজনীয় হয়রানির মুখোমুখি করছে- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, 'বাছাই প্রক্রিয়া বস্তুনিষ্ঠ ও স্বচ্ছ করতে আমরা তা ডিজিটালাইজড করার কাজ শুরু করেছি।’
আরও পড়ুন: এনবিআরের কর্মকর্তাদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি
ট্যাক্স অডিট ফাইল যেভাবে বাছাই করা হয় সে বিষয়ে এনবিআরের 'ইমেজ সংকটের' কথাও স্বীকার করেন তিনি। ‘করদাতারা প্রায়শই অভিযোগ করেন যে মানুষের পরিচালিত নির্বাচন প্রক্রিয়াটি বিষয়গত এবং এটি পদ্ধতির ওপর আস্থা নষ্ট করেছে।’
তিনি বলেন। ‘আমাদের লক্ষ্য মানুষের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত নিরীক্ষা বাছাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে স্বয়ংক্রিয় করে যেকোনো বিভ্রান্তি দূর করা।’
এনবিআরের চলমান ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরের ধারাবাহিকতায় নিরীক্ষার জন্য নতুন কর ফাইল নির্বাচন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এনবিআরের কর বিভাগের সদস্য (ট্যাক্স অডিট, ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) মো. আলমগীর হোসেন এক নির্দেশনা জারি করে মাঠ পর্যায়ের সব কর কার্যালয়কে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নতুন নিরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য বিদ্যমান মানুষের দ্বারা পরিচালিত প্রক্রিয়ায় করদাতা এবং কর কর্মকর্তা উভয়ই যে জটিলতার মুখোমুখি হন তা সমাধান করা।
আরও পড়ুন: ই-রিটার্ন ব্যবস্থার প্রচারের নির্দেশ এনবিআর চেয়ারম্যানের
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাতের মধ্যে সবচেয়ে কম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ- মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বিপরীতে, প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন ভারত ১২ শতাংশ, নেপাল সাড়ে ১৭ শতাংশ এবং ভুটান ১২ দশমিক ৩ শতাংশ উল্লেখযোগ্যভাবে উচ্চতর অনুপাত রয়েছে। তদুপরি, বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশ করদাতা হিসাবে নিবন্ধিত, যেখানে ভারতের এই সংখ্যাটি ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।
বর্তমানে সরকারের রাজস্ব আয়ের ৬৭ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে। এই নির্ভরশীলতা প্রত্যক্ষ করের দিকে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে এনবিআর। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, তারা করদাতাদের জন্য আরও সুবিধাজনক উপায়ে করের নেটওয়ার্ক প্রশস্ত করার জন্য কাজ করছেন। পরোক্ষ করের বোঝা কমানোর সময় প্রতিপালনকে উৎসাহিত করছেন।
আয়কর আইন ২০২৩ বাস্তবায়নের ফলে নতুন নিরীক্ষা নির্দেশিকা চালু করা হয়েছে। এটিতে করদাতাদের জন্য সম্ভাব্য বর্ধিত আমলাতন্ত্র এবং ব্যয় সম্পর্কে উদ্বেগের প্রকাশ হয়েছে। নির্দেশিকা অনুসারে, করদাতাদের জিজ্ঞাসাবাদের একাধিক পর্যায় হতে পারে, যা আন্ডারহ্যান্ড লেনদেনের দরজা খুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
এসব উদ্বেগ মোকাবিলায় এনবিআর 'রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইঞ্জিন' নামে বিশেষায়িত সফটওয়্যার তৈরি করছে, যা ট্যাক্স অডিট প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনতে প্রস্তুত করা হয়েছে। সফটওয়্যারটি অন্যান্য সরকারি সংস্থার সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করতে এবং ঝুঁকির কারণগুলোর উপর ভিত্তি করে নিরীক্ষণের জন্য ট্যাক্স ফাইলগুলো নির্বাচন করতে সংযুক্ত করবে। এর ফলে এটি আরও কার্যকরভাবে কর ফাঁকি শনাক্ত করতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত করবে এনবিআর