২০২১ সালে আফগানিস্তনের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশের নারীদের ওপর বেশকিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে শাসকগোষ্ঠী তালেবান। তাদের সর্বশেষ নির্দেশনায় এবার চাকরি করার সুযোগও হারাচ্ছেন আফগান নারীরা।
নারীদের নিয়োগ দিলে আফগানিস্তানে পরিচালিত সব দেশি-বিদেশি সংস্থা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তালেবান।
ইসলামী অনুশাসন মেনে হিজাব না পরার অভিযোগে আফগান নারীদের কাজে না নিতে দেশটিতে পরিচালিত এনজিওগুলোকে অনুরোধ করার দুই বছর পর এই ঘোষণা দিল গোষ্ঠীটি।
রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে এক্স-এ প্রকাশিত এক চিঠিতে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, (তালেবান সরকারের) সর্বশেষ আদেশ না মানলে এনজিওগুলো আফগানিস্তানে কার্যক্রম পরিচালনা করার লাইসেন্স হারাবে।
এদিকে, গত দুই বছরে আফগানিস্তানে নারীদের কর্মপরিসর উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে মন্তব্য করে তালেবানকে এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে জাতিসংঘ।
এ বিষয়ে জাতিসংঘের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোতো নিনো-মার্তিনেস বলেছেন, ‘(তালেবানের) এ ধরনের সিদ্ধান্ত আফগান নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানে প্রভাব ফেলবে।’
‘আমরা এমন একটি দেশের বিষয়ে কথা বলছি, যেখানকার বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে এবং তাদের অনেকেই মানবিক সংকটের মুখোমুখি। এখন দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরই অধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে- বিষয়টি নিয়ে আমরা স্পষ্টতই খুব উদ্বিগ্ন।’
আফগানিস্তানে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোর সব কার্যক্রমের নিবন্ধন, সমন্বয়, নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্ব পালন করে থাকে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকার আবারও তালেবান নিয়ন্ত্রিত নয়- এমন (বেসরকারি) প্রতিষ্ঠানে নারীদের সব ধরনের কাজ থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান এই নির্দেশের ব্যত্যয় ঘটালে তার সব কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি লাইসেন্সও বাতিল করা হবে।
চলতি মাসের শুরুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জানায়, আফগানিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা অপরিহার্য হয়ে পড়লেও দেশটিতে নারী সহায়তাকর্মীদের একটি বড় অংশকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সব দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় আফগানিস্তান: তালেবান
জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টম ফ্লেচার বলেছেন, তালেবানের নৈতিক পুলিশ নারী, এমনকি পুরুষ কর্মীদেরও কাজে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটিতে কর্মরত মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
তবে সংস্থাগুলোর এই অভিযোগ বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে তালেবান।
অন্য এক আদেশে তালেবান নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বলেছেন, নারীদের কর্মকাণ্ড বা চলাফেরা দেখা যায়- ভবনের এমন স্থানগুলোতে জানালা রাখা যাবে না। এমনকি জানালা থাকলেও সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
এক্স-এ পোস্ট করা চার দফার ওই নির্দেশনা অনুসারে, এই আদেশটি নতুন ভবনের পাশাপাশি বিদ্যমান ভবনগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
জাতিসংঘ এই নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বলে জানিয়েছেন সোতো নিনো-মার্তিনেস।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে চাকরিসহ সব ধরনের উন্মুক্ত স্থানে আফগান নারীদের আনাগোনা ও কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে তালেবান। এমনকি নারীদের ষষ্ঠ শ্রেণির বেশি শিক্ষা অর্জনের অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।