গত সপ্তাহে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মাদ মোখবার।
সোমবার (২৭ মে) দেশটির নতুন সংসদে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন তিনি।
রাইসির মৃত্যুর মাত্র এক মাসের মধ্যেই তার রেখে যাওয়া দায়িত্বভার যোগ্য মানুষের হাতে দিতে ইরানে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সে সময় মোখবারের এ ভাষণ জানান দিলো পর্দার আড়ালে থাকা এই আমলাও নামতে পারেন লড়াইয়ে।
এদিকে, ইরানের নতুন কট্টরপন্থী পার্লামেন্ট মঙ্গলবার তাদের নতুন স্পিকার নির্বাচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাইসির মৃত্যুতে যেভাবে অস্থির হয়ে উঠতে পারে ইরানের ভবিষ্যৎ
ভাষণে রাইসির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের প্রশংসা করে মোখবার বলেন, দেশের হার্ড কারেন্সির মূল উৎস ইরানের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন- যা প্রতিদিন ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি বেড়েছে।
রবিবার (২৬ মে) ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান এখন প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে।
মোখবর আরও জোর দিয়ে বলেন, ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাক, ইসরায়েল ও পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও রাইসির অধীনে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল।
মোখবার বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে আঘাত করেছিলাম। তবুও লোকেরা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে হার্ড কারেন্সি, মুদ্রাস্ফীতি, তারল্য, দাম আগের মতোই এবং বাজারও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পূর্ণ। এই শক্তি, বন্দোবস্ত এবং ক্ষমতা কোনো সাধারণ জিনিস নয়। এগুলো সবই সর্বোচ্চ নেতার দিকনির্দেশনা এবং আয়াতুল্লাহ রাইসির আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছিল।’
গত ২০ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি পার্বত্য অঞ্চল থেকে রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআবদুল্লাহিয়ান ও অন্যদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আগামী ২৮ জুন রাইসির স্থলাভিষিক্ত কে হতে যাচ্ছে সেটি নির্ধারণ করতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে লড়তে প্রার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে বৃহস্পতিবার(৩০ মে) থেকে পাঁচ দিনের সময় দেওয়া হবে। মোখবার প্রার্থী হিসেবে নাম লেখাতে পারেন বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
আরও পড়ুন: ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
এদিকে, দেশটিতে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর সর্বনিম্ন ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়ে নবনির্বাচিত সংসদের প্রথম দিন ছিল সোমবার (২৭ মে)। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের জরিপ অনুযায়ী, গত মার্চে অনুষ্ঠিত ২৯০ আসনের এই নির্বাচনে কট্টরপন্থীরা ২৩০টির বেশি আসন পেয়েছিল।
দেশ পরিচালনায় ইরানের সংসদ মুখ্য ভূমিকা পালন না করলেও বার্ষিক বাজেট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এটি প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা