ইরান
টিআইবি দুর্নীতি সূচকে ২ ধাপ অবনতি বাংলাদেশের
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বৈশ্বিক দুর্নীতির সূচকে দুই ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। মধ্য আফ্রিকার দেশ কঙ্গো ও ইরানের সঙ্গে যৌথভাবে ১৫১তম স্থানে আছে ঢাকা। গেলো তেরো বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে কম স্কোর অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
গেল বছরে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৯তম। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বৈশ্বিক ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২৪ প্রকাশ উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সারা দেশে সহিংস ভাঙচুর: সরকারকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান টিআইবির
দুর্নীতির ধারণা শূন্য থেকে ১০০ টিআই সূচক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যে দেশটির স্কোর থাকবে শূন্য, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যারা ১০০-তে থাকবে, তাদেরকে বলা হবে সবচেয়ে বেশি সুশাসিত।
২০২৪ সালের দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ এর মধ্যে ২৩। আগের বছরের চেয়ে যা এক পয়েন্ট কম, আর গেল তেরো বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সিপিআই অনুসারে, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের স্কোর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পরেই। আফগানিস্তানের স্কোর ১৭।
২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিপিআইয়ে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫ থেকে ২৮। কিন্তু ২০২৩ সালে এটি কমে গিয়ে চব্বিশে দাঁড়ায়।
২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিপিআই ট্রেন্ড বিশ্লেষণ অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সিপিআই স্কোর ২৩, গেলে তেরো বছরের গড় স্কোরের চেয়ে যা তিন পয়েন্ট কম।
আরও পড়ুন: বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ গ্রাফিতি বাদ দেওয়ায় টিআইবির উদ্বেগ
গেল বছরের তুলনায় এ বছর ৫৬টি দেশে সিপিআই স্কোর বেড়েছে। ৯৩টি দেশের স্কোর কমেছে, আর ৩১টি দেশের অবস্থা অপরিবর্তিত। স্কোরের মাত্রায় কোনো দেশই নিখুঁত স্কোর অর্জন করতে পারেনি। এ বছরে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ দেশের স্কোর পঞ্চাশের নিচে।
৯০ স্কোর নিয়ে চলতি বছরে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তকমা পেয়েছে ডেনমার্ক। এরপর ৮৮ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ফিনল্যান্ড, আর ৮৪টি নিয়ে তৃতীয় সিঙ্গাপুর।
২০২৪ সালে দুর্নীতির শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ সুদান, তাদের স্কোর ৮। সোমালিয়া এরপরেই, স্কোর ৯। আর ১০ স্কোর নিয়ে দুর্নীতিতে তৃতীয় দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা।
এদিকে দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) পাকিস্তানের অবনতি হয়েছে। ১৮০টি দেশের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশটির অবস্থান ছিল ১৩৩তম, চলতি বছরে সেটা ১৩৫তম।
আরও পড়ুন: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৪ ভিন্নমত-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে: টিআইবি
৩৩ দিন আগে
ইরানে সাময়িক মুক্তি পেল নোবেলজয়ী নার্গিস মোহাম্মদী
নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গিস মোহাম্মদীকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছে ইরান। ক্যান্সারের উদ্বেগ মোকাবিলায় একটি জটিল অস্ত্রোপচারের পর তাকে তিন সপ্তাহের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ইরানের একটি কারাগার থেকে নোবেল জয়ী নার্গিসকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা।
তেহরানের ফুটেজে দেখা গেছে, উন্মুক্ত কালো চুল এবং কাপড় দিয়ে ডান পা ঢাকা অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স থেকে বের হচ্ছেন মোহাম্মদী। রাস্তায় নেমে চিৎকার করে বলেন, ‘হ্যালো স্বাধীনতা! নারী, জীবন, স্বাধীনতা! স্বাধীনতা আমাদের অধিকার! স্বাধীনতা দীর্ঘজীবী হোক!’
মোহাম্মদীর সমর্থনদের তথ্যমতে, তিনি ২১ দিনের সাময়িক মুক্তি পেয়েছেন। পরে আবারও তাকে সাজা ভোগ করতে কারাগারে যেতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নার্গিসের সমর্থকরা তার স্থায়ী মুক্তির আহ্বান জানালেও ইরান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তার চিকিৎসা ছুটির কথা স্বীকার করেনি।
সমর্থকরা যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, ৫২ বছর বয়সী মোহাম্মদীর সঠিকভাবে নিরাময়ের জন্য নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কমপক্ষে তিন মাস থাকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তারা বলেছে, শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তাকে সাজা দেওয়া অন্যায় ছিল বলে জোর দেন তারা।
মোহাম্মদী বর্তমানে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যা প্রচারণা ছড়ানোর অভিযোগে ১৩ বছর ৯ মাসের সম্মিলিত কারাদণ্ড ভোগ করছেন। বারবার গ্রেপ্তার এবং দীর্ঘায়িত কারাবাস সত্ত্বেও তিনি মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরে ২০২২ সালের নারী নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকে সমর্থন করেন। মানব ও নারী অধিকারের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন তিনি। তার সময় অনেক নারী ইরানে হিজাবের বাধ্যবাধকতা অমান্য করেছিলেন।
কারাবাসের সময় নার্গিস মোহাম্মদীর স্বাস্থ্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালে একাধিক হার্ট অ্যাটাক এবং জরুরি অস্ত্রোপচারের বিষয়টি জানিয়েছেন তার সমর্থকরা।
চলতি মাসের শুরুতে তার আইনজীবী জানান, ক্যান্সার সন্দেহে একটি হাড়ের ক্ষতের কারণে তার সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচারের করা হয়।
রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের রেবেকা ভিনসেন্ট মোহাম্মদীর সাময়িক মুক্তির বিষয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করেছেন তিনি। তবে বাড়িতে পর্যাপ্ত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি।
ভিনসেন্ট বলেন, 'আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং ইরানি কর্তৃপক্ষকে তার যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
মোহাম্মদীর মুক্তি ইরানে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের সঙ্গে মিলে গেছে। দেশটিতে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নিষেধাজ্ঞার ফলে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বিক্ষোভ শুরু হতে থাকে। পরে সরকার এসব বিক্ষোভ দমন করতে শুরু করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রেক্ষিতে ইরানের বিরুদ্ধে 'সর্বোচ্চ চাপ' প্রয়োগের নীতি পুনরায় শুরু করার বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, যা দেশটির চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: হিজাব ইস্যু: মাহসা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় ইরানের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের
১০২ দিন আগে
ইরানে ইসরায়েলি হামলার সমাপ্তি ও প্রতিশোধের বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিত: যুক্তরাষ্ট্র
হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়ে বলেছে, ইরানের উপর ইসরায়েলের হামলা এবং দুই শত্রু দেশের মধ্যে সরাসরি গুলি বিনিময় বন্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে তেহরানকে সতর্ক করে দিয়েছে যে, তারা প্রতিক্রিয়া জানালে ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রশাসন বিশ্বাস করে ইসরায়েলি হামলার মধ্য দিয়েই ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি সামরিক হামলা বন্ধ করা উচিত।
ওই কর্মকর্তা জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার সারাদিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের মাধ্যমে ইসরায়েলিদের পরিচালিত হামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি জেনেছেন।
হোয়াইট হাউসের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ওই কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলি অভিযানে 'ব্যাপক, ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু ছিল।’ এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ল যুদ্ধের ঝুঁকি
১৪১ দিন আগে
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ল যুদ্ধের ঝুঁকি
চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের প্রতিশোধ নিতে ইরানের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল।
ইরানের রাজধানী তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে এই হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের এই হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার সময় পরস্পর চিরশত্রুদের সর্বাত্মক যুদ্ধের কাছাকাছি ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। যেখানে গাজার হামাসসহ ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ ইতোমধ্যেই ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধ করছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শনিবার বলেছে, তারা ‘সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সুনির্দিষ্ট হামলা’ চালিয়েছে। তবে পারমাণবিক বা তেল স্থাপনাগুলোকে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি বলে দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে চলমান অভিযান নিয়ে কথা বলেছেন ওই কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: গাজার স্কুলে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ১৭ ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি শনিবার এক ভিডিওতে বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর থেকে ইরান ও এ অঞ্চলে তাদের সমর্থিত বাহিনী ইসরাইলের ওপর অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ইরানের মাটি থেকে সরাসরি হামলা অন্যতম। বিশ্বের অন্য সব সার্বভৌম দেশের মতো ইসরায়েল রাষ্ট্রেরও জবাব দেওয়ার অধিকার ও কর্তব্য রয়েছে বলে জানান তিনি।’
প্রাথমিকভাবে, ইরানের ১ অক্টোবরের হামলার প্রতিক্রিয়ার জন্য ইসরায়েলের হামলার সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং তেল স্থাপনাগুলো সবই দেখা হয়েছিল। তবে অক্টোবরের মাঝামাঝি ইসরায়েলের কাছ থেকে বাইডেন প্রশাসন আশ্বাস পায় যে তারা এ জাতীয় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে না।
তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে স্বীকার করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। এছাড়া কিছু শব্দ শহরের আশপাশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে এসেছে বলে জানিয়েছে।
তবে সংক্ষিপ্ত উদ্বৃতি ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানায়নি এবং এমনকি তেহরানের একটি সবজি বাজারে লোকজনের ট্রাক লোড করার লাইভ ফুটেজও দেখিয়েছে।
তেহরানের এক বাসিন্দা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, অন্তত সাতটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাসিন্দা কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন: লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩ গণমাধ্যমকর্মী নিহত
তেহরানের লোকজন বিস্ফোরণের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আকাশে আগুনের আভাস দেখতে পাচ্ছিল। অন্যান্য ফুটেজে দেখা গেছে, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র আকাশের দিকে ছুটছে এবং অন্যান্য বিস্ফোরণ ঘটছে।
ইরান শনিবার ভোরে দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ফ্লাইট-ট্র্যাকিং ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলো ইরান এবং ইরাক, সিরিয়া এবং লেবাননের আকাশ এড়িয়ে গেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১২০০ মানুষ নিহত হয় এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় আনা হয়। গাজা ও ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় হামাস ও হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতৃত্ব ইসমাইল হানিয়া ও হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় দেশটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধাদের পৃথক না করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৪২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে লেবাননের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি হামলায় তিন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: হিজবুল্লার হামলায় দক্ষিণ লেবাননে ৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত
১৪২ দিন আগে
ইরানে কয়লা খনিতে গ্যাস লিক হয়ে বিস্ফোরণে অন্তত ১৯ জন নিহত
ইরানের পূর্বাঞ্চলে একটি কয়লা খনিতে মিথেন গ্যাস লিক হয়ে বিস্ফোরণে অন্তত ১৯ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেশটির জাতীয় টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে তাবাসের একটি কয়লা খনিতে শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ভেতরে কয়েকজন খনি শ্রমিক আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ইরানে বাস উল্টে নিহত ১০, আহত ৩৬
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই এলাকায় জরুরি উদ্ধারকর্মী পাঠানো হয়েছে। বিস্ফোরণের সময় সেখানে প্রায় ৭০ জন কর্মী কাজ করছিলেন। তবে কতজন খনিতে আটকা পড়েছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আটকে পড়াদের উদ্ধার ও তাদের পরিবারকে সহায়তা করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইরানের খনি শিল্পে এমন দুর্ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে দুটি পৃথক খনি দুর্ঘটনায় ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। ২০০৯ সালে বিভিন্ন ঘটনায় ২০ জন শ্রমিক নিহত হন। ২০১৭ সালে একটি কয়লা খনিতে বিস্ফোরণে অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছিল।
তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও ইরানের খনিগুলো থেকে প্রতি বছর ১৮ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু খনি এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও জরুরি পরিষেবা না থাকায় প্রায়শই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে।
আরও পড়ুন: পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চায় ইরান
১৭৫ দিন আগে
ইরানে বিমান হামলায় নিহত হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া
ইরানের রাজধানী তেহরানে এক হামলায় হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির আধাসামরিক বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ড।
বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে মঙ্গলবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তেহরানে যান হানিয়া।
হানিয়া কীভাবে নিহত হলেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ইরান। হামলার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে রেভল্যুশনারি গার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
হানিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হামাসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর তেহরানে নিজ অবস্থানস্থলে জায়নবাদীদের বিমান হামলায় হানিয়া নিহত হয়েছেন।’
বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি জনগণ, আরব ও মুসলিম দেশ এবং বিশ্বের সব স্বাধীন মানুষের কাছে শোক প্রকাশ করে ইসমাইল হানিয়াকে শহীদ ঘোষণা করেছে হামাস।
হানিয়া ২০১৯ সালে গাজা উপত্যকা ছেড়ে কাতারে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছিলেন।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের দায় তাৎক্ষণিকভাবে কেউ স্বীকার না করলেও সন্দেহের তীর ইসরায়েলের ওপরই গিয়ে পড়ছে। এই হামলার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে হামাস।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত ও ২৫০ জিম্মির পর হামাস প্রধান হানিয়া ও অন্যান্য নেতাদের হত্যার অঙ্গীকার করে দেশটি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এ হামলার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইলকে দায়ী করেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য আসেনি। তাছাড়া নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কোনো গুপ্তহত্যা নিয়ে সাধারণত মন্তব্য করে না ইসরায়েল।
হানিয়ার মৃত্যুর বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি হোয়াইট হাউজও। যেসময় বাইডেন প্রশাসন একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তির বিষয়ে হামাস ও ইসরায়েলকে রাজি করাতে চাপ প্রয়োগ করছিল সেসময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটল।
২২৯ দিন আগে
ইরানের নতুন পার্লামেন্টে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবারের ভাষণ
গত সপ্তাহে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন মোহাম্মাদ মোখবার।
সোমবার (২৭ মে) দেশটির নতুন সংসদে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিয়েছেন তিনি।
রাইসির মৃত্যুর মাত্র এক মাসের মধ্যেই তার রেখে যাওয়া দায়িত্বভার যোগ্য মানুষের হাতে দিতে ইরানে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সে সময় মোখবারের এ ভাষণ জানান দিলো পর্দার আড়ালে থাকা এই আমলাও নামতে পারেন লড়াইয়ে।
এদিকে, ইরানের নতুন কট্টরপন্থী পার্লামেন্ট মঙ্গলবার তাদের নতুন স্পিকার নির্বাচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাইসির মৃত্যুতে যেভাবে অস্থির হয়ে উঠতে পারে ইরানের ভবিষ্যৎ
ভাষণে রাইসির ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের প্রশংসা করে মোখবার বলেন, দেশের হার্ড কারেন্সির মূল উৎস ইরানের অপরিশোধিত তেল উৎপাদন- যা প্রতিদিন ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি বেড়েছে।
রবিবার (২৬ মে) ইরানের তেলমন্ত্রী জাভেদ ওজি বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরান এখন প্রতিদিন প্রায় ২০ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে।
মোখবর আরও জোর দিয়ে বলেন, ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাক, ইসরায়েল ও পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও রাইসির অধীনে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল।
মোখবার বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে আঘাত করেছিলাম। তবুও লোকেরা সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে হার্ড কারেন্সি, মুদ্রাস্ফীতি, তারল্য, দাম আগের মতোই এবং বাজারও মানুষের চাহিদা অনুযায়ী পূর্ণ। এই শক্তি, বন্দোবস্ত এবং ক্ষমতা কোনো সাধারণ জিনিস নয়। এগুলো সবই সর্বোচ্চ নেতার দিকনির্দেশনা এবং আয়াতুল্লাহ রাইসির আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছিল।’
গত ২০ মে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি পার্বত্য অঞ্চল থেকে রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআবদুল্লাহিয়ান ও অন্যদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আগামী ২৮ জুন রাইসির স্থলাভিষিক্ত কে হতে যাচ্ছে সেটি নির্ধারণ করতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে লড়তে প্রার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে বৃহস্পতিবার(৩০ মে) থেকে পাঁচ দিনের সময় দেওয়া হবে। মোখবার প্রার্থী হিসেবে নাম লেখাতে পারেন বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
আরও পড়ুন: ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
এদিকে, দেশটিতে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর সর্বনিম্ন ভোটের মাধ্যমে জয়ী হয়ে নবনির্বাচিত সংসদের প্রথম দিন ছিল সোমবার (২৭ মে)। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের জরিপ অনুযায়ী, গত মার্চে অনুষ্ঠিত ২৯০ আসনের এই নির্বাচনে কট্টরপন্থীরা ২৩০টির বেশি আসন পেয়েছিল।
দেশ পরিচালনায় ইরানের সংসদ মুখ্য ভূমিকা পালন না করলেও বার্ষিক বাজেট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এটি প্রেসিডেন্ট প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। রাষ্ট্রীয় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন ৮৫ বছর বয়সী সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
২৯৩ দিন আগে
রাইসির মৃত্যুতে যেভাবে অস্থির হয়ে উঠতে পারে ইরানের ভবিষ্যৎ
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিহত হওয়ার পর দেশটির শাসন ব্যবস্থায় অভ্যন্তরীণ রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে গতকালই। তবে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয় বলে সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখতে হবে না ইরানের নাগরিকদের।
আলোচনাটা সর্বোচ্চ নেতার পদটি নিয়েই। ৮৫ বছর বয়সী আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে রাইসিকেই দেখা হচ্ছিল। তবে তার মৃত্যুতে দেশ পরিচালনার গুরুভার কার ওপর বর্তাবে, তা নিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়েছে মাথাব্যথা।
রাইসির মৃত্যুর পর খামেনির ছেলেই পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ক্ষমতার বংশগত উত্তরাধিকার ইসলামি প্রজাতন্ত্রের দেশটির সংকট আরও বাড়াবে। কারণ রাজতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশটির নাগরিকদের অনেকে এই শাসন ব্যবস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসন হিসেবে দেখেন।
ইরানের শাসন ব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে
রাষ্ট্রপতি ও সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য ইরানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন সর্বোচ্চ নেতা। তিনিই সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে কাজ করেন এবং শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডকে (আইআরজিসি) নিয়ন্ত্রণ করেন।
১২ সদস্যবিশিষ্ট গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অর্ধেক সদস্যও তার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। দেশটির রাষ্ট্রপতি, সংসদ সদস্য, এমনকি সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ পরিষদের প্রার্থীদেরও যাচাই করে এই গার্ডিয়ান কাউন্সিল।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
কাগজে-কলমে, দেশে ইসলামি আইন বজায় রাখতে সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করে থাকেন গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্যরা (ধর্মগুরু)। তবে বাস্তবতা হলো, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা নিজ স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখা ও তার নিজস্ব অগ্রাধিকারগুলোকে এগিয়ে নিতে কেউ যাতে চ্যালেঞ্জ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করে সতর্কতার সঙ্গে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন।
কট্টরপন্থী রাইসি ছিলেন খামেনির সমর্থক। ২০২১ সালের নির্বাচনে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কার্যত নিষ্ক্রিয় করে রাইসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করে বিশেষজ্ঞ পরিষদ। নির্বাচনে রুহানিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেও বাধা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে ৮ বছর ধরে প্রেসিডেন্টের পদ সামলানো হাসান রুহানির স্থলাভিষিক্ত হন রাইসি। ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়ে সেবারের নির্বাচনে।
রাইসির মৃত্যুর পর দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ইরানের সংবিধান অনুসারে ৫০ দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে কাকে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আনা হবে, সে কাজটি সাবধানতার সঙ্গে করতে হবে খামেনিকে।
এর অর্থ এই দাঁড়াচ্ছে যে, দেশটিতে কড়া ইসলামি শাসন আরোপ চলতে থাকবে এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাবে ইরান। এছাড়া দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন ও পশ্চিমাদের গভীর সন্দেহের চোখে দেখা চলমান থাকবে।
ক্ষমতার উত্তরাধিকারের বিষয়ে যা হবে
ইরানের ক্ষমতায় রাষ্ট্রপতি আসবেন, যাবেন। কেউ কেউ কট্টরপন্থী, কেউবা মধ্যপন্থী হতে পারেন, তবে প্রত্যেককেই শাসন ব্যবস্থার প্রতি অনুগত হয়ে কাজ করতে হয়।
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর দেশটির সর্বোচ্চ নেতা রয়েছেন খামেনি। ফলে তার মৃত্যুর পরই কেবল ইরানে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে পারে।
৮৮ জন বিশেষজ্ঞ নিয়ে গড়া পরিষদের মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করা হয়। ওই পরিষদের সদস্যরা আবার ১২ সদস্যের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের মাধ্যমে ৮ বছর পর পর নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন: ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
খামেনির উত্তরাধিকারী কে হবেন- এ বিষয়ক আলোচনা বা যে কোনো কৌশল সাধারণ জনগণের অগোচরে হয়ে থাকে। ফলে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী কে হতে চলেছেন, সাধারণের পক্ষে তা আগে থেকে জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
তবে বিশ্লেষকরা যে ২ ব্যক্তিকে খামেনির উত্তরসূরি হিসেবে দেখছিলেন, তাদের একজন রাইসি, অন্যজন খামেনির ছেলে মোজতবা। ৫৫ বছর বয়সী মোজতবা একজন শিয়া ধর্মগুরু। তবে সরকারি দায়িত্ব পালনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই তার।
মোজতবা ইরানের সর্বোচ্চ পদে বসলে যা হতে পারে
বিপ্লবের মাধ্যমে ১৯৭৯ সালে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর দেশটির নেতারা ইরানকে শুধু পশ্চিমা ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্রের চেয়ে নয়, মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিরাজমান সামরিক একনায়কতন্ত্র ও রাজতন্ত্র থেকেও অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
তবে খামেনির ছেলে সর্বোচ্চ নেতার আসনে বসলে ফের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হতে পারে ইরানে। শুধু ইসলামি শাসনের সমালোচকদের কাছেই নয়, দেশের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা যেসব ইরানি ‘অনৈসলামিক’ বলে বিবেচনা করে, তাদের মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার করতে পারে ক্ষমতার এই উত্তরাধিকার।
পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে ইরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। আর ইসলামি শাসন যা রাইসির আমলে আরও তীব্র আকার ধারণ করে, দেশের নারী ও যুবাদের আরও বিচ্ছিন্ন করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছে ইরান। ২০২২ সালে মাহসা আমিনি গ্রেপ্তারের পর দেশটি বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠা এর বড় উদাহরণ। চুল না ঢেকে রাস্তায় বের হওয়ার কারণে আমিনি গ্রেপ্তার হন। এর বিরুদ্ধে ইরানজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই বিক্ষোভ থেকে দেশজুড়ে ৫ শতাধিক মানুষ নিহত ও ২২ হাজারের বেশি নাগরিক আটক হন।
রাইসির মৃত্যুতে তাই নতুন সর্বোচ্চ নেতা বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি আরও জটিল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশটিতে ফের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন: ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় এ পর্যন্ত যা জানা গেল
২৯৯ দিন আগে
ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (২১ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিদেশের মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হবে।
ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কুয়াশাচ্ছন্ন পার্বত্য অঞ্চলে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার (২০ মে) দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্যদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতে বিএনপির শোক
ইরানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
২৯৯ দিন আগে
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানি প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনাটি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অঞ্চলে ইরানের বেশ গভীর ও বিস্তৃত প্রভাব রয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে ইরান। যার ফলে এই দেশগুলো শক্তি প্রদর্শন করতে এবং ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের কট্টর শত্রু যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের হামলা প্রতিহত করতে পারে।
গত মাসে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে বিমান হামলায় দুই ইরানি জেনারেল ও পাঁচ কর্মকর্তা নিহত হওয়ার জবাবে রাইসি ও সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নেতৃত্বে ইসরায়েলে ইরানের শত শত ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা তুঙ্গে উঠে।
আরও পড়ুন: ইরানের প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর গভীর শোক
অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জর্ডান এবং অন্যান্যদের সহায়তায় ইসরায়েল প্রায় সব হামলা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
কিন্তু জবাবে ইরানের ইস্পাহান শহরে একটি বিমান প্রতিরক্ষা রাডার সিস্টেমের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এই হামলা একটি সতর্ক বার্তাই ছিল বলা যায়।
বছরের পর বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে গোপন অভিযান ও সাইবার হামলার মতো আড়ালে যুদ্ধ চললেও গত এপ্রিলে গোলাগুলি ছিল তাদের প্রথম সরাসরি সামরিক সংঘাত।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধে ইরানের অন্যান্য মিত্ররাও জড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে হামলা-পাল্টা হামলা বড় এক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে যার কারণে রবিবারের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মতো অপ্রত্যাশিত মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। তেহরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ইসরায়েলকে ধ্বংসের শপথ নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ইরানকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখে আসছে ইসরায়েল।
অন্যদিকে ইরানও নিজেকে ইসরায়েলি শাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখে এবং দেশটির শীর্ষ নেতারা বছরের পর বছর ধরে ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
আরও পড়ুন: ইরানের অন্তবর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হলেন মোহাম্মদ মোখবার
কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত রাইসি যিনি খামেনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন তিনি গত মাসে ইসরাইলের সমালোচনা করে বলেন, 'ইহুদিবাদী ইসরাইল ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, 'প্রথমত দখলদারদের বিতাড়িত করতে হবে, দ্বিতীয়ত, তারা যে ক্ষতি করেছে তার মূল্য আদায় করতে হবে এবং তৃতীয়ত, অত্যাচারী ও দখলদারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
ধারণা করা হয়, ইরানের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য করে কয়েক বছর ধরে ইসরায়েল অসংখ্য হামলা চালিয়েছে।
তবে রবিবারের হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় ইসরায়েলের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
ইরান বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে। হামাসের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা, যা গাজা যুদ্ধের সূত্রপাতের কারণ। তবে এর সঙ্গে হামলায় ইরান সরাসরি জড়িত ছিল এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইরানের নেতারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে আসছেন। এ অঞ্চলে তাদের মিত্ররা অনেক দূর এগিয়েছে।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে লেবাননের উগ্রপন্থী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে। এখনো ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই দুই পক্ষের মধ্যে হামলা চলছে, যার ফলে উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত এই সংঘাত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে রূপ নেয়নি তবে সেটা উভয় দেশের জন্যই বিপর্যয়কর হবে।
ইরানের আরেক মিত্র ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলকে প্রতিহত করার নামে বারবার আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এক্ষেত্রে ইসরায়েলের সঙ্গে আপাত সম্পর্ক নেই এমন জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করেও হামলা চালায় তারা। সেখানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জাহাজও পাল্টা হামলা চালায়।
শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইরান বিশ্বের অন্য অঞ্চলগুলোতেও প্রভাব বিস্তার করেছিল।
আরও পড়ুন: ইরানে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় এ পর্যন্ত যা জানা গেল
ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করে আসছে যে, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির আড়ালে ইরান পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ করছে।
বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারযোগ্য।
জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার ক্যামেরা ও পরিদর্শকদের নিষিদ্ধ করেছে ইরান। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বরাবরই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে বলে দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যরা মনে করে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তাদের সক্রিয় পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ছিল।
ইসরায়েলকে মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হলেও তাদের কাছে এ ধরনের অস্ত্র থাকার কথা কখনোই স্বীকার করেনি।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর ইরান রাশিয়ার প্রধান মিত্র হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে। ইউক্রেনের শহরগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো বিস্ফোরক ড্রোনগুলো ইরানের সরবরাহ করা এমন অভিযোগ এসেছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাইসি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইরান এ ধরনের অস্ত্র সরবরাহ করেনি।
ইরানি কর্মকর্তারা ড্রোন সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করলেও মার্কিন ও ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলছেন যে ইউক্রেন যুদ্ধে ড্রোনের ব্যাপক ব্যবহারই বলে দেয় যুদ্ধ শুরুর পর এই অস্ত্রের সরবরাহও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: ইরানের প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লাশ উদ্ধার
৩০০ দিন আগে