ইরান
ইরানে আদালতে সশস্ত্র হামলায় নিহত ৯, আহত ২২
পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী ইরানের সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের একটি আদালতে সশস্ত্র হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত আরও ২২ জন।
শনিবার (২৬ জুলাই) প্রদেশের রাজধানী জাহেদানে এই ঘটনাটি ঘটে। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে সুন্নি সশস্ত্র গোষ্ঠী জাইশ আল-আদল বালুচ।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার তথ্যনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তিনজন হামলাকারী, একজন শিশু, ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা এবং তিনজন নিরাপত্তারক্ষী ও সেনা রয়েছে। বাকি একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রদেশের ডেপুটি পুলিশ কমান্ডার আলিরেজা দালিরি বলেন, হামলাকারীরা দর্শনার্থীর ছদ্মবেশে ভবনে প্রবেশ করে।
প্রাদেশিক বিচার বিভাগের প্রধান জানান, হামলাকারীরা বিস্ফোরকভর্তি ভেস্ট ও গ্রেনেড বহন করছিল। তারা আদালতের বিচারকদের কক্ষ লক্ষ্য করে হামলা চালায়। তবে বিস্ফোরকগুলো তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে কিনা—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
হামলার পর জাইশ আল-আদল এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তারা বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৩০ সদস্যকে হত্যা করেছে। বলেছে, বালুচ নাগরিকদের মৃত্যুদণ্ড ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের আদেশ দেওয়া বিচারক ও আদালত কর্মীদের লক্ষ্য করেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।
পড়ুন: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘর্ষের নেপথ্যে কী?
গোষ্ঠীটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘বিচার বিভাগের সব কর্মচারী ও বিচারকরা মনে রাখবেন, বেলুচিস্তান আর তাদের জন্য নিরাপদ থাকবে না। প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত মৃত্যু তাদের ছায়ার মতো অনুসরণ করবে।’
বালুচ মানবাধিকার সংস্থা হালভশ প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হামলায় একাধিক বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা সদস্য নিহত বা আহত হয়েছেন।
সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশটি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এবং ইরানের সংখ্যালঘু সুন্নি মুসলিম বালুচ জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা বাহিনী ও সুন্নি বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল।
দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের অভিযোগ, এসব গোষ্ঠীর কিছু বিদেশি শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক এবং চোরাচালান ও বিদ্রোহে সম্পৃক্ত। প্রদেশটি ইরানের অন্যতম অনুন্নত অঞ্চল। বেলুচরা সাধারণত সুন্নি মুসলমান, যেখানে ইরানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ শিয়া।
সূত্র: বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা
১৩১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্র আর ‘হামলা না চালালে’ আলোচনায় বসতে রাজি ইরান
ইরানের ওপর আর কোনো হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দিলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসতে রাজি বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি।
স্থানীয় সময় শনিবার (১২ জুলাই) তেহরানে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইরান সবসময়ই সংলাপের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে আলোচনার পথ যেন যুদ্ধের দিকে না গড়ায়, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা থাকতে হবে।’
ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর তেল আবিবের অব্যাহত হামলা ও ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পক্ষগুলো আবারও আলোচনা শুরু করতে চায়, তাহলে সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে এ ধরনের হামলা আর হবে না। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর পথ আরও কঠিন ও জটিল করে তুলেছে।’
আরও পড়ুন: ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না: ইরাভানি
ওই হামলার পরই জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করে ইরান। ফলে সংস্থাটির পরিদর্শকরা ইরান ছাড়তে বাধ্য হন।
আরাগচি জানান, আইএইএ’র যেকোনো অনুরোধ এখন ‘ঘটনাভিত্তিক ও স্বার্থ বিবেচনায়’ মূল্যায়ন করবে ইরান। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে সংস্থাটির যেকোনো পরিদর্শন ইরানের ‘নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ’ ও পরিদর্শকদের নিরাপত্তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি সতর্ক করেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাগুলোতে যুদ্ধের সময়কার অব্যবহৃত বিস্ফোরক ও বিকিরণযুক্ত উপাদান ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আরও পড়ুন: সংঘাতের পর প্রথমবার প্রকাশ্যে খামেনি
এ সময় নিজ ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ওপর আবারও জোর দেন আরাগচি। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ইসরায়েলের দাবি, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল বলেই তারা হামলা চালিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইএইএ বলছে, ইরান ২০০৩ সালের পর সংগঠিতভাবে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি চালায়নি, যদিও দেশটি ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যেটি অস্ত্র-যোগ্য ৯০ শতাংশ মাত্রার থেকে খুব একটা দূরে নয়।
এদিকে, গত সোমবার (৭ জুলাই) প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে কর্তৃপক্ষ এখনও সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নই করতে পারেনি।
১৪৪ দিন আগে
ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না: ইরাভানি
ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘে দেশটির রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি। তিনি বলেন, পরমাণু অস্ত্রবিস্তাররোধ চুক্তির অধীনে শান্তিপূর্ণ জ্বালানির উদ্দেশ্যে তাদের এই প্রকল্প অনুমোদিত।
রবিবার (২৯ জুন) সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সমৃদ্ধকরণ আমাদের অধিকার, এটি একটি অখণ্ড অধিকার এবং আমরা এই অধিকার বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ইরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ আলোচনার নাম নয়, এটি আমাদের প্রতি একটি নীতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।আরও পড়ুন: ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরু
তবে ইরাভানি বলেন, “তেহরান আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু এই আগ্রাসনের পর নতুন করে আলোচনা শুরুর মতো কোনো উপযুক্ত পরিবেশ নেই এবং প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বা আলোচনার জন্য কোনো অনুরোধও নেই।”
জাতিসংঘে ইরানের এই দূত আরও দাবি করেন, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি কিংবা সংস্থার পরিদর্শকদের প্রতি তাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হুমকি নেই।
যদিও কিছু ইরানি কর্মকর্তা এই পরিদর্শকদের অভিযুক্ত করেছেন ইসরায়েলের হামলাকে যৌক্তিকতা দিতে তারা সাহায্য করছে বলে। বর্তমানে আইএইএ পরিদর্শকরা ইরানে অবস্থান করছেন, তবে তারা দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না।
১৫৮ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে আইএইএ’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে ইরান
ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান।
বুধবার (২৫ জুন) এ সংক্রান্ত ভোটাভোটির মাধ্যমে সিদ্ধান্তটি দেশটির পার্লামেন্টে অনুমোদিত হয়। দেশটির রাষ্টাত্ত্ব সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজের খবরে এসব তথ্য জানা যায়।
পার্লামেন্টের উন্মুক্ত অধিবেশনে ২২৩ জন প্রতিনিধির মধ্যে ২২১ জন এই পরিকল্পনার পক্ষে, বিপক্ষে ০ ভোট এবং ১ জন সংসদ সদস্য ভোটদান থেকে বিরত ছিলেন।
জাতিসংঘ সনদসহ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমাবর্ষণের পরই এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়।
ইরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরও পড়ুন: ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান না ট্রাম্প
ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বার্থ এবং জনগণের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থা জানিয়েছে, এই হামলা পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন করেছে এবং এর কারণে ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি থামানো যাবে না।
ইরান স্পষ্টভাবে তার শান্তিপূর্ণ পরমাণু উন্নয়ন কর্মসূচির চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সব বিকল্প উন্মুক্ত রাখবে বলে জানিয়েছে।
মার্কিন বিমান হামলা সম্পর্কে যা জানা গেল
গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে, ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে সঙ্গে সঙ্গেই ‘অসাধারণ সামরিক সাফল্য’ বলে আখ্যা দেন। তার দাবি, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সুবিধাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
কিন্তু একটি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, ট্রাম্প এ দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক দশকের জন্য পিছিয়ে গেছে।’
পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষক গর্ডন করেরার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ব্যবহৃত একাধিক বোমা লক্ষ্যভেদ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইরান স্থাপনাগুলো নির্মাণে খুবই শক্তিশালী কংক্রিট ব্যবহার করেছে। এর ফলে, স্থাপনার মূল কাঠামো বা যন্ত্রপাতি পর্যন্ত বোমাগুলো পৌঁছাতে পারেনি।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির পর কূটনীতির পথে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র
১২ দিনের যুদ্ধের পর বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলছে। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় ৬১০ জন ইরানি নিহত হয়েছেন। অপর দিকে ইরানের মিসাইল হামলায় ২৮ জন ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে। যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
১৬২ দিন আগে
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র: গোয়েন্দা প্রতিবেদন
ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে গত সপ্তাহে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে হামলার প্রাথমিক মূল্যায়নে জানা গেছে, হামলা চালানো তিনটি স্থাপনার মধ্যে দুটিই ধ্বংস হয়নি। তাছাড়া, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্ভবত মাত্র কয়েক মাসের জন্য পেছনে ঠেলে দিতে পেরেছে এই মার্কিন হামলা।
পেন্টাগনের গোয়েন্দা শাখা হিসেবে কাজ করা ‘প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা’ (ডিআইএ) এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) ওই প্রাথমিক তদন্ত-সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় (সেন্ট্রাল কমান্ডে) পরিচালিত যুদ্ধ-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির ওপর ভিত্তি করে এই প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে ডিআইএ। মূলত মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম তদারকি করে থাকে এই সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে করা ওই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণু কর্মসূচির প্রধান উপাদান, যেমন: সেন্ট্রিফিউজগুলো কয়েক মাসের মধ্যেই পুনরায় চালু করা সম্ভব।
প্রতিবেদরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতে পারে— এমন উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অনেকটা অংশ হামলার আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। সেগুলো ইরানের গোপন অন্যান্য পারমাণবিক স্থাপনায় স্থানান্তর করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ‘পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে’ বলে ট্রাম্প যে দাবি করেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শনিবার (২১ জুন) রাতে ট্রাম্প জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, নাতাঞ্জ, ফোরদো ও ইসফাহানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইরানে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চান না ট্রাম্প
তিনি বলেন, ‘এই হামলা ছিল এক অসাধারণ সামরিক সাফল্য। ইরানের প্রধান পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ও চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দখলদার ইরান এখন শান্তির পথ বেছে নিতে বাধ্য।’
যদিও ডিআইএয়ের প্রতিবেদনটি ছিল একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন, তবে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা গোয়েন্দা তথ্য কয়েক দিনের মধ্যেই ফোরদো ধ্বংস হয়নি বলে নিশ্চিত করে, তাহলে পরবর্তী মূল্যায়নে আরও কম ক্ষয়ক্ষতির কথা উঠে আসতে পারে।’
ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত ফোরদোর ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি জাগরোস পর্বতমালার নিচে অবস্থিত।
এই কেন্দ্রটি প্রায় ৪৫ থেকে ৯০ মিটার (১৪৫ থেকে ৩০০ ফুট) পাথরের নিচে নির্মিত, যার বেশিরভাগই লাইমস্টোন ও ডোলোমাইট।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন প্রথমে এই গোয়েন্দা মূল্যায়নের কথা জানালেও হোয়াইট হাউস তা প্রত্যাখ্যান করে।
প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই তথাকথিত মূল্যায়ন ফাঁসের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় ও সাহসী ফাইটার পাইলটদের অবদানকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা হয়েছে, যারা নিখুঁতভাবে পরিচালিত এক অভিযানে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করেছেন।’
আরও পড়ুন: ইসরায়েলের ওপর আমি সন্তুষ্ট নই: ট্রাম্প
তবে রবিবার (২২ জুন) মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জানে না ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ কোথায় আছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহে নিশ্চিত করব; কীভাবে ওই জ্বালানির ব্যবহার রোধ করা যায়।’
এদিকে, সোমবার (২৩ জুন) আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসিও বলেন একই কথা। তার মতে, ইরানের ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের মজুদ কোথায় আছে, তা এখন আর তারা নির্ধারণ করতে পারছে না।
এর আগে, গত বুধবার (১৮ জুন) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতে পেন্টাগনের শীর্ষ রাজনৈতিক কর্মকর্তা-কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল, ফোরদোয় ব্যবহারের জন্য তৈরি ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘বাংকার বাস্টার’ জিবিইউ-৫৭ বোমাগুলো ওই স্থাপনাটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবে না।
জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ওই ব্রিফিংয়ে পেন্টাগনের ডিফেন্স থ্রেট রিডাকশন এজেন্সি জানায়, জিবিইউ-৫৭ বোমা ভূমির পর্যাপ্ত গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। কেবল একটি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রই ফোরদোকে পুরোপুরি ধ্বংস করতে সক্ষম।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাতে প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলায় বি২ বোমারু বিমানে করে ফোরদোয় ১২টি, নাতাঞ্জে ২টি জিবিইউ-৫৭ বোমা ফেলা হয় এবং একটি মার্কিন সাবমেরিন ইসফাহানে প্রায় ৩০টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইরানে ইসরায়েলের হামলা, দুই জেনারেলসহ নিহত ৭
রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ট্রাম্পের দাবি পুর্নব্যক্ত করে বলেন, পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
তবে অপারেশনের তত্ত্বাবধায়ক মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ার জেনারেল ড্যান কেইন তার মন্তব্যে কিছুটা সংযত ছিলেন।
কেইন বলেন, তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাতেই ‘গুরুতর ক্ষতি ও ধ্বংস’ হয়েছে। তবে সামরিক অভিযানের চূড়ান্ত যুদ্ধ-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন এখনও বাকি রয়েছে বলেও সে সময় সতর্ক করেছিলেন তিনি।
১৬৩ দিন আগে
যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘনের অভিযোগ: ইরানে হামলার নির্দেশ ইসরায়েলের
ইরান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে অভিযোগ তুলে তার জোরালো জবাব দিতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) তিনি বলেন, ‘তেহরানের কেন্দ্রবিন্দুতে বিভিন্ন নিশানায় তীব্র হামলা চালাতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, ‘যুদ্ধবিরতির মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে ইরানি সরকার। আমরা তার জোরালো জবাব দেব।’আরও পড়ুন: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর
যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছে ইরান। তবে ফের যদি ইসরায়েল কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে চূড়ান্ত, দৃঢ় ও যথাযথ জবাব দেওয়া হবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
এ সময়ে সচেতনতা, সহনশীলতা ও ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য ইরানের জনগণের প্রশংসা করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানীয়দের অবিচল সংকল্প, কৌশলগত ধৈর্য, অবমাননা কিংবা একতরফা অবমাননা মেনে নিতে অস্বীকৃতি থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি শত্রুরা।
১৬৩ দিন আগে
ইরানে ফের ইসরায়েলের বিমান হামলা, ইরানের পাল্টা
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এবার ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কেরমানশাহ শহরের সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। জবাবে ইরানও পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৩ জুন) সকালে ইরানে বিমান হামলার চালানোর কথা জানায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
এর আগে, ইরানের রাষ্ট্র সমর্থিত সংবাদমাধ্যম নুর নিউজ জানায়, আজ ভোরে তেহরানের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত বৃহৎ সামরিক কমপ্লেক্স পারচিনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
জবাবে, ইরানও ইসরায়েলের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তবে সেটি ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা মাঝপথেই প্রতিহত করা হয় বলে দাবি করেছে আইডিএফ।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলে বড় পরিসরে হামলা ইরানের, জাতিসংঘে চিঠি
গত ১৩ জুন প্রথম ইরানের শতাধিক লক্ষ্যবস্তুতে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। এরপর থেকেই দুই দেশ নিজেদের প্রতিশোধের নেশায় মত্ত। শক্তির প্রদর্শন করে লক্ষ্য অর্জনে মরিয়া দুপক্ষই।
এর সঙ্গে গতকাল রবিবার (২২ জুন) যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা।
হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান।’
এই হামলারও প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। বিশ্লেষকদের ধারণা, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান। তবে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি এখনও।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টির সমাধান করতে চীনকে অনুরোধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
১৬৪ দিন আগে
দুই সপ্তাহের কথা বলে দুদিনের মাথায় হামলা চালানো ছিল ট্রাম্পের ‘রণকৌশল’
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর আবার নিজের অস্থিতিশীল আচরণের জন্য আলোচনায় এসেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানে হামলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহ সময় নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুদিন না যেতেই তেহরানে হামলা চালিয়ে বসেন ট্রাম্প। মূলত হামলার পরিকল্পনা গোপন রাখতেই ওই তিনি ওই ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে সামরিক অভিযানের ব্যাপারে কয়েকদিন ধরেই দৃঢ়ভাবে আগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প। হামলার বিষয়ে তার প্রকৃত চিন্তাভাবনা গোপন রাখতেই তিনি তার জ্যেষ্ঠ সহকারীদের একটি নির্দেশ দেন— প্রেসকে জানিয়ে দেওয়া হোক, দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিযান চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প!
তার মানে দাঁড়ায়, দুই সপ্তাহের ঘোষণা দিয়ে দুদিনের মাথায় হামলা চালানো কোনো অস্থিতিশীল আচরণ নয়, বরং এটি ট্রাম্পের সুপরিকল্পিত রণকৌশল।
সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, ইতোমধ্যেই ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন— কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ট্রাম্প। এ কারণে দুই সপ্তাহের সময়সীমার ঘোষণা দেন তিনি।
আরও পড়ুন: শান্তি স্থাপন করুন, নইলে আরও হামলা আসছে: ইরানকে ট্রাম্প
ইরানিদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি এবং তার পরিকল্পনা গোপন রাখার অভিপ্রায়েই এই কৌশল অবলম্বন করেন ট্রাম্প।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের জড়ানোর ব্যাপারে দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাষ্যে, ওই দিন তিনি তার সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। ব্যানন প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
এরপরই তার প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট হোয়াইট হাউস ব্রিফিং রুমে গিয়ে প্রেসিডেন্টের নির্দেশ অনুসারে ওই দুই সপ্তাহের সময়সীমার ঘোষণা দেন।
যদিও হামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এসেছিল শনিবার (২১ জুন), তবে ট্রাম্পের আশপাশের মানুষের বিশ্বাস, ইরানে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের মন অনেক আগেই স্থির হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
সূত্র আরও জানায়, ট্রাম্পকে আগেই হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং তিনি প্রতিদিনই জ্যেষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করছিলেন। এর পাশাপাশি দিনে একাধিকবার ফোনালাপও চলছিল বলে বিশ্বাস তার আশেপাশের লোকেদের।
এরপর, রবিবার (২২ জুন) ভোরে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমরা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় অত্যন্ত সফলভাবে হামলা পরিচালনা করেছি, যার মধ্যে রয়েছে ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান।’
১৬৫ দিন আগে
আদর্শ নাকি নমনীয়তা, কোন পথে যাবেন খামেনি
৮৬ বছর বয়সী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির সামনে এবার তার জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা—সংঘাত, নাকি শান্তির পথ বেছে নেবেন তিনি? তার এই সিদ্ধান্ত কেবল ইরান নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ৩৫ বছরের শাসনামলে বহুবার দেশটির অভ্যন্তরীণ হুমকি উৎরেছেন খামেনি। তবে এবারই তিনি সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি।
চিরশত্রু ইসরায়েল এখন ইরানের আকাশপথে মুক্তভাবে অভিযান পরিচালনা করে দেশটির সামরিক নেতাদের হত্যা এবং পরমাণু কর্মসূচিকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ‘খামেনির আর বেঁচে থাকার অধিকার নেই’ বলেও হুমকি দিয়েছেন।
সামনে রয়েছে দুটি পথ
খামেনির সামনে এখন দুটি পথ খোলা। তিনি চাইলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার মাত্রা বাড়াতে পারেন, যা আরও ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। অথবা কূটনৈতিক সমাধানের পথে যেতে পারেন তিনি, যাতে যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে না জড়ায়। তবে এ পথে গেলে তাকে সারা জীবনের সাধনা—পরমাণু কর্মসূচি বিসর্জন দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি হামলার মাঝেই ৩ ইউরোপীয় পরাশক্তির সঙ্গে বৈঠকে বসছে ইরান
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এক ভিডিও বার্তায় খামেনি বলেন, ‘ইরান কখনো আত্মসমর্পণ করে না।’ একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, ‘হস্তক্ষেপ করলে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।’
ইরানকে বদলে দিয়েছেন খামেনি
১৯৮৯ সালে ইরানের ক্ষমতার শীর্ষে আসেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। এ সময়অনেকেই তার নেতৃত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন অপেক্ষাকৃত নিচু স্তরের ধর্মীয় নেতা। ঘন ফ্রেমের চশমা আর ধীরস্থির স্বভাবের মধ্যে পূর্বসূরি আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মতো জ্বালাময়ী নেতৃত্বগুণও ছিল না তার।
তবে, সেসব পাশ কাটিয়ে পূর্বসূরির চেয়ে তিনগুণ বেশি সময় ধরে শাসনভার নিজের কাঁধে রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের এই দেশটিকে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন খামেনি।
তিনি শিয়াপন্থী মোল্লা শাসনব্যবস্থাকে আরও দৃঢ় করেছেন। একই সঙ্গে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে একটি অভিজাত বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন এই ধর্মীয় নেতা।
গার্ড বাহিনী এখন ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালায়। পাশাপাশি কুদস ফোর্সের মাধ্যমে ইয়েমেন থেকে লেবানন পর্যন্ত ইরানের অনুগত অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স গড়ে তুলেছে বাহিনীটি।
আরও পড়ুন: ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কি না, সিদ্ধান্ত দুই সপ্তাহের মধ্যে
এমনকি ইরানের অর্থনীতির বড় অংশও নিয়ন্ত্রণ করে অভিজাত এই বাহিনী। বিনিময়ে তারা খামেনির একনিষ্ঠ ডান হাতে পরিণত হয়েছে।
দেশীয় সংকট কঠোর হস্তে দমন
৯০-এর দশকে সংস্কারপন্থীদের উত্থানের সময়কালে খামেনিকে প্রথম বড় কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। খামেনি সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পরপরই সংস্কারপন্থীরা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং প্রেসিডেন্ট পদ দখলে নেয়। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে ছিল।
খামেনি ও তার অনুগত গোষ্ঠী এটিকে ইসলামি শাসনব্যবস্থা ভেঙে ফেলার হুমকি হিসেবে দেখছিলেন। তবে তিনি কঠোর হাতে সংস্কারপন্থীদের রুখে দেন।
পরবর্তীতে ২০০৯, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২২ সালের গণআন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী। সর্বশেষ মাহসা আমিনির মৃত্যুর পরের আন্দোলনে বহু মানুষ নিহত ও নির্যাতিত হন।
ইরানকে আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেছেন
ইরাকের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ বছরের যুদ্ধ শেষে ক্ষতবিক্ষত ইরানকে খামেনি একটি প্রভাবশালী আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত করেন।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সাদ্দাম হোসেনের পতনের ফলে শিয়াপন্থী রাজনীতিবিদ ও মিলিশিয়ারা ইরাকের ক্ষমতায় আসে। এটি ইরানের প্রভাব বিস্তারে অন্যতম বড় নিয়ামক হয়ে ওঠে।
ইরাক হয়ে ওঠে ইরানের ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ বা প্রতিরোধ অক্ষের মূল কেন্দ্র। এই অক্ষের বাকি সদস্য হলো সিরিয়ার আসাদ সরকার, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ২০১৫ সালের মধ্যে এই জোট তার সর্বোচ্চ শক্তিতে পৌঁছায়, যার মাধ্যমে ইরান ইসরায়েলের দরজায় কড়া নাড়ছিল।
সুদিন আর নেই
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় নজিরবিহীন হামলার পাশাপাশি ইরানের এই অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স ধ্বংস করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় ইসরায়েল। তারপর থেকে গাজায় ক্রমাগত হামলায় ব্যাপকভাবে দুর্বল পড়েছে হামাস।
অন্যদিকে লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপরও বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। এমনকি গত বছর দেশটিতে একযোগে কয়েক হাজার পেজার বিস্ফোরণও ঘটিয়েছে তারা।
পেজার, ওয়াকিটকিসহ হিজবুল্লাহর ব্যবহৃত যোগাযোগের বিভিন্ন যন্ত্রে বোমা স্থাপন করেছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে সিরিয়া থেকে। সম্প্রতি, ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছে সুন্নি বিদ্রোহীরা। এখন দামেস্কে একটি ইরানবিরোধী সরকার ক্ষমতায় বসেছে।
সবকিছু মিলিয়ে এই মুহূর্তে ইরানের গড়া ‘প্রতিরোধ অক্ষরেখা’ সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। তার মাঝেই এবার সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে ইসরায়েল ও ইরান।
আরও পড়ুন: ছায়ার আড়ালে মোসাদ: ইরানে রহস্যময় অনুপ্রবেশ
সবশেষ খবর অনুযায়ী, এই সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ হয়ে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রও। ফলে আদর্শ রক্ষার এই লড়াইয়ের বর্তমান বাস্তবতায় খামেনি শেষ পর্যন্ত ইরানের স্থিতিশীলতায় সায় দেবেন, না কি আদর্শে অটুট থাকবেন—তা-ই হয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
১৬৭ দিন আগে
ইরানের আকাশসীমার উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের দাবি ট্রাম্পের
ইরান ও ইসরায়েলের চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ইরানের আকামসীমার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত পাঁচদিন ধরেই ইরানের সামরিক ও ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে জায়নবাদী ইসরায়েল।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে বোমা হামলার পাঁচ দিন পর মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের আকাশসীমার উপর ‘সম্পূর্ণ এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ দাবি করেছেন। তবে পাল্টা দাবিও করেছে ইরান। বলেছে, তারা ইসরায়েলের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গত পাঁচদিনে ইরানের ১ হাজার ১০০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।
ট্রাম্প একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, ‘ইরানের আকাশসীমার উপর এখন আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’ ‘ইরানের কাছে ভালো স্কাই ট্র্যাকার এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম প্রচুর পরিমাণে ছিল। কিন্তু আমেরিকার তৈরি সরঞ্জামের সঙ্গে এর তুলনা হয় না। ব্যাপক অভিজ্ঞ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভালো আর কেউ এটি করতে পারে না।’
পড়ুন: ইরানের নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলার আহ্বান
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নিশ্চিত করার একদিন পর এই মন্তব্য করা হলো যে, আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে। এই পদক্ষেপটিকে তিনি ও ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘প্রতিরক্ষামূলক’ বলে দাবি করেছেন। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে আমেরিকান বাহিনী যোগ দিতে পারে বলে জল্পনা-কল্পনাও রয়েছে।
সোমবার (১৫ জুন) একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা আনাদোলুকে বলেন, হেগসেথ ‘আমাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান বজায় রাখার এবং আমেরিকান কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার’ জন্য নেমিটজ ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে সেন্টকম এলাকার দায়িত্বে পাঠিয়েছেন।
শুক্রবার ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েল বিমান হামলা শুরু করার পর থেকে আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে। যার ফলে তেহরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায়।
পড়ুন: ইসরায়েলি হামলায় ইরানের হাসপাতালগুলোতে ‘রক্তবন্যা’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শত শত আহত হয়েছে। ইরান জানিয়েছে যে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
এদিকে ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন। জবাবে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনী তা অস্বীকার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বলেছেন, ইসরায়েলকে তার ভুলের জন্য শাস্তি পেতে হবে।
সবশেষ বুধবার ইরানের পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রসহ ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর দাবি করেছে ইসরায়েল।
১৬৯ দিন আগে