আগামী দুই মাসে ইরানের ওপর থেকে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে সরকার ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী সম্মত ৩.৬৭% এর পরিবর্তে ২০% বেশি ইউরেনিয়াম উৎপাদন করবে বলে জানানো হয়। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি দাবি করেছেন, তিনি এই আইন প্রয়োগের বিরোধিতা করেন। খবর বিবিসির।
ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদাহকে হত্যার ঘটনার পর এই পদক্ষেপ আসলো। গত শুক্রবার রাজধানী তেহরানের বাইরে রাস্তার পাশে রহস্যমূলক এক হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয় ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ফখরিজাদাহকে।
আরও পড়ুন: পরমাণু বিজ্ঞানী ফখরিজাদাহকে হত্যা: প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি ইরানের
এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ইসরায়েল জড়িত বলে মনে করছে ইরান। ইরান বিশ্বাস করে যে, ইসরায়েল এবং একটি নির্বাসিত বিরোধী গোষ্ঠী রিমোট-কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালিত অস্ত্র ব্যবহার করে ফখরিজাদাহকে গুলি করেছে। তবে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জনসমক্ষে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ইরান।
ইরানের নতুন আইন পরমাণু কর্মসূচিতে কতটা প্রভাব ফেলবে?
ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদিত আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশগুলোকে দুই মাস সময় দেয়া হবে দেশটির তেল এবং অর্থনৈতিক খাতের ওপর থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে আসলে ওই নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনঃআরোপ করা হয়েছিল।
এই সময়ের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা না হলে সরকার ইউরেনিয়াম উৎপাদন ২০ শতাংশ বাড়াবে এবং উন্নত সেন্ট্রিফিউজ বসাবে যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে কাজ করবে। দেশটির নাতান্জ এবং ফর্দো পরমাণু উৎপাদন কেন্দ্রে এসব পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এই উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে জাতিসংঘের পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকারও বন্ধ করে দেয়া হবে।
‘আজ এক চিঠিতে নতুন আইন কার্যকর করতে প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানিয়েছেন পার্লামেন্টের স্পিকার,’ বুধবার এক প্রতিবেদনে এমন খবর দিয়েছিল ইরানের ফার্স সংবাদ সংস্থা।
আইনটি অনুমোদনের আগে প্রেসিডেন্ট রুহানি একে ‘কূটনীতির জন্য ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার এই প্রস্তাবের সাথে একমত নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালের মে মাসে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন এবং তেহরানের বিরুদ্ধে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবশ্য বলেছেন যে তিনি চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনবেন এবং তেহরান যদি ‘পরমাণু চুক্তির শর্ত কঠোরভাবে মেনে চলে’ তাহলে নিষেধাজ্ঞাও প্রত্যাহার করা হবে।
বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তিনি নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই কঠিন কিন্তু বিশ্বের ওই অংশে আমাদের সর্বশেষ যে কাজটি করতে হবে তা হলো পরমাণু সক্ষমতা তৈরি।’
চুক্তি অনুযায়ী পরমাণু উৎপাদনের মাত্রা ৩.৬৭% এ সীমিত রাখার শর্ত ২০১৯ সালের জুলাইতে ভঙ্গ করেছে ইরান এবং এর পর থেকে এই হার ৪.৫% এই স্থিতিশীল রয়েছে।
নিম্ন মাত্রায় পরমাণু উৎপাদন যাতে মূলত ৩-৫ শতাংশ ইউরেনিয়াম-২৩৫ থাকে, তা বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অস্ত্র তৈরি করতে হলে ৯০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম থাকতে হবে।
পরমাণু বোমা তৈরির কর্মকাণ্ডকে ঢাকতেই ইরান পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনা করতো- এমন সন্দেহ থেকে ২০১০ সালে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যদিও দেশটির সরকার বারবারই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মযজ্ঞ পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ।
২০১৫ সালের চুক্তিটি ছিল এই কর্মসূচিকে সীমিত করা এবং তা নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা।