সুদানের সামরিক প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক বাহিনীর অন্তর্গত সমস্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্পদ সমৃদ্ধ দেশের নিয়ন্ত্রণের লড়াইয়ের সর্বশেষ পদক্ষেপ এটি।
সুদান জুড়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই পক্ষের যুদ্ধ সমস্যাগ্রস্ত দেশটিকে সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সুনা জানিয়েছে, রবিবার জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ বুরহানের জারি করা ডিক্রিটি সুদানের ব্যাংকগুলোতে র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টগুলোর পাশাপাশি গ্রুপের সমস্ত কোম্পানির অ্যাকাউন্টগুলোকে লক্ষ্য করবে।
আরএসএফ-এর ওপর নিষেধাজ্ঞার তাৎক্ষণিক প্রভাব কী হবে এবং বুরহানের আদেশ কীভাবে কার্যকর করা হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। গত এক দশকে, আধাসামরিক বাহিনী ধীরে ধীরে সুদানের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সোনার মজুদ অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রচুর সম্পদ সংগ্রহ করেছে।
রবিবার সুদানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের স্থলাভিষিক্ত হন বুরহান। সোমবার তিনি দেশটির পুলিশ প্রধানকে অপসারণ করেন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই রাষ্ট্রদূতকে বরখাস্ত করেন। বুরহান তার পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত বলেননি।
এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে বুরহানের নেতৃত্বে সুদানের সেনাবাহিনী এবং মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বে আরএসএফ, একটি ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়ায়, যা হাজার হাজার মানুষকে প্রতিবেশী দেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
আরও পড়ুন: সুদানফেরতদের পুনর্বাসনে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের
সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে বিশৃঙ্খলা দেশটির বেশিরভাগ অংশে ছড়িয়েছে। রাজধানী খার্তুম শহুরে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে এবং পশ্চিম দারফুর অঞ্চল মারাত্মক উপজাতীয় সংঘর্ষে কাঁপছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সহিংসতায় অনেক বেসামরিক নাগরিকসহ ৬০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
বেসামরিক হতাহতের সন্ধানকারী একটি দলসুদান ডক্টরস সিন্ডিকেট বলেছে,পশ্চিম দারফুর প্রদেশের রাজধানী জেনিনাতে দুই দিনের লড়াইয়ের শুরুতেই গত সপ্তাহে বহু লোক নিহত হয়েছে। এতে বলা হয়, শুক্রবার যখন আরএসএফ যোদ্ধারা এবং মিলিশিয়ারা শহরে প্রবেশ করে এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠী ও বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন লড়াই শুরু হয়।
এদিকে, সোমবার খার্তুমের দক্ষিণাঞ্চলের একটি এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় যখন অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, খার্তুমের ঠিক পূর্বে অবস্থিত পূর্ব নীল এলাকার একটি হাসপাতালে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরএসএফের বিরুদ্ধে বেসামরিক লোকদের লুটপাট ও হামলার অভিযোগ করেছে এবং সামরিক বাহিনী নির্বিচারে আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উভয় পক্ষ বেশ কয়েকটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল, কিন্তু সবগুলো ভঙ্গ করা হয়েছিল। উভয়ই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কঠোর অভিযোগ করেছে।
জরুরি আইনজীবী, মানবাধিকার মামলার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধকারী একটি সুদানী আইনী গোষ্ঠী, বলেছেন যে খার্তুমের দ্বৈত শহর ওমদ্রুমানে একটি নারী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলাকারী সশস্ত্র ব্যক্তিরা রবিবার দুই নারীকে ধর্ষণ করেছে।
আইনজীবীদের মতে, আহফাদ ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের একটি ছাত্রাবাসের ভেতরে হামলাটি হয়েছিল, যেটি আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। কথিত যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলোতে আধাসামরিক বাহিনী জড়িত মধ্যে এই খবর আসে।
গত বৃহস্পতিবার, সামরিক বাহিনী এবং আরএসএফ সৌদি শহর জেদ্দায় একটি চুক্তি সই করেছে, যেখানে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ পথের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে মানবিক কার্যক্রমের জন্য সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা-সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে - বৃহস্পতিবারের চুক্তিকে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পরিণত করার প্রয়াস চলছে৷
আরও পড়ুন: সুদান থেকে ৫৭০ জনের বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে