রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে দেশটির পাঁচবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
বৃহস্পতিবার দলটির একজন কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) একজন কর্মকর্তা ভাজিরা আবেওয়ার্দেনা বলেছেন, ‘তিনি আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। কারণ পার্লামেন্টের বেশ কয়েকজন সদস্য তাকে দায়িত্ব নিতে এবং দেশের সমস্যা সমাধান করতে বলেছেন।’
আবেওয়ার্দেনা বলেন, ২২৫-সদস্যের সংসদে ১৬০ জনেরও বেশি আইনপ্রণেতা বিক্রমাসিংহের নির্বাচনকে সমর্থন করেন। তবে এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এ বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেন নি।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় কারফিউ উপেক্ষা করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত
রাজাপাকসে যদি বিক্রমাসিংহেকে নির্বাচন করেন; তাহলে এটিকে সঙ্কটের কারণে সৃষ্ট সহিংসতার অবসান এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের একটি প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
প্রেসিডেন্টের ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে যায়।
বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার ঢেউ সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ বুধবার রাজধানীর রাস্তায় সাঁজোয়া যান ও সেনা মোতায়েন করেছে। এ পর্যন্ত রাজাপাকসে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে ৯জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় দেশব্যাপী শুরু হওয়া কঠোর কারফিউ সত্ত্বেও অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর অব্যাহত থাকায় নিরাপত্তা বাহিনীকে সহিংসতায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের দেখা মাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এবং তার ভাইয়ের পদত্যাগ দাবি করে আসছে।
শ্রীলঙ্কা প্রায় দেউলিয়া এবং চলতি বছর বকেয়া সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ স্থগিত করেছে দেশটি।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের পদত্যাগ
আইএমএফ বলেছে যে কোনও স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে ঋণদাতাদের সঙ্গে আলোচনার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে। শ্রীলঙ্কাকে বর্তমান মোট ৫১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ২০২৬ সালের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় চলতি মাসের শুরুতে বলেছিল, দেশের ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক রিজার্ভ মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির ফলে আমদানি হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে। ফলে জ্বালানি, রান্নার গ্যাস, খাদ্য ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাস ধরে নাগরিকেরা প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, এদের মধ্যে অনেকেই খালি হাতে ফিরেছেন।
নির্বাচিত হলে বিক্রমাসিংহে সম্ভবত প্রেসিডেন্টের কাছে নিয়োগের জন্য মন্ত্রিসভার একটি তালিকা উপস্থাপন করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী বা নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়ে কোনো আপত্তি থাকলে আইনপ্রণেতারা হাউস স্পিকারের কাছে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিতে পারেন। তারপর প্রস্তাবটি নিয়ে বিতর্ক এবং ভোট হবে।
৭৩ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহে ৪৫ বছর ধরে সংসদে রয়েছেন। তার ব্যাপক আন্তর্জাতিক সংযোগ রয়েছে এবং একজন দক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
তার রাজনৈতিক দল ২০১৯ সালে নেতৃত্বের সঙ্কটের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায় এবং বেশিরভাগ সিনিয়র সদস্য মিলে একটি নতুন দল গঠন করে; বর্তমানে্ এ দলটিই দেশের প্রধান বিরোধী দল।
আরও পড়ুন: রাজাপাকসের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব শ্রীলঙ্কার বিরোধীদলের