৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা নিশ্চিত করি, নারী ও কিশোরীরাও যেন আমাদের সবার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলা নীতি, পরিষেবা ও অবকাঠামোর আকার দেয়ার ক্ষেত্রে কাজ করতে পারেন।’
এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সমান চিন্তা, বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ, পরিবর্তনের জন্য উদ্ভাবন’, যা সে সব পরিকাঠামো, ব্যবস্থা ও অবকাঠামোকে চিহ্নিত করে যেগুলো গড়ে উঠেছে পুরুষ নির্ধারিত সংস্কৃতির আলোকে।
জাতিসংঘ প্রধান নারীর অধিকার, মর্যাদা ও নেতৃত্বকে সুরক্ষা দিতে ও এসবের পক্ষে প্রচারণার ক্ষেত্রে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে যে বিষয়টি বিজয়ী হয়ে এসেছে আমাদের তাকে আর জয়ের সুযোগ দেয়া উচিত নয় এবং এ ক্ষেত্রে সার্বিক, দ্রুত ও আমূল পরিবর্তনের ওপর আমাদের অবশ্যই জোর দিতে হবে।’
‘শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং টেকসই উন্নয়নে বৈশ্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অপরিহার্য বিষয় হলো লিঙ্গসমতা ও নারীর অধিকার। আমরা কেবল ঐতিহাসিক অবিচারগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে এবং সবার অধিকার ও মর্যাদার পক্ষে কথা বলে প্রতিষ্ঠানে আস্থা পুনঃস্থাপন ও সংহতি পুনর্গঠন করতে পারি এবং বহুমাত্রিকভাবে লাভবান হতে পারি,’ যোগ করেন তিনি।
সাম্প্রতিক দশকগুলোয় কিছু ক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও নেতৃত্ব প্রশ্নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে গুতেরেস বলেন, ‘কিন্তু এসব অর্জন পুরো বা ধারাবাহিক অর্জনের তুলনায় নগন্য এবং এগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে পুরুষশাসিত সমাজ ব্যবস্থা থেকে সমস্যাপূর্ণ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে।’
লিঙ্গসমতা ক্ষমতার প্রশ্নে একটি অপরিহার্য বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পুরুষশাসিত বিশ্বে পুরুষনিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতির মধ্যে বাস করি। নারীর অধিকারকে আমরা যখন সবার লক্ষ্য হিসেবে নিই, যা কি না সবাইকে লাভবান করতে পারে এমন একটি পথ, তখনই কেবল আমরা ভারসাম্যে পরিবর্তন দেখব।’
নারীদের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ানো অপরিহার্য জানিয়ে জাতিসংঘ প্রধান বলেন, ‘জাতিসংঘে আমি এ বিষয়টিকে ব্যক্তিগত ও জরুরি অগ্রাধিকার হিসেবে নিয়েছি। বিশ্বজুড়ে আমাদের দলগুলোকে নেতৃত্ব দানকারীদের মধ্যে এখন লিঙ্গসমতা নিশ্চিত হয়েছে এবং জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা দলে এখন নারী সদস্যের সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। আমরা এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি অব্যাহত রাখব।’
তবে গুতেরেসের মতে, ক্ষমতা প্রাপ্তি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের এখনো বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হতে হয়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যানুসারে, মাত্র ছয়টি দেশ কর্মক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমানাধিকার দেয়। এবং এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অর্থনৈতিক খাতে লিঙ্গ পার্থক্য ঘুচিয়ে উঠতে এ বিশ্বের ১৭০ বছর সময় লাগবে।
‘আমরা জানি নারীর অংশগ্রহণ শান্তিচুক্তিকে টেকসই করে, কিন্তু এমনকি সরকারও, যারা এ ক্ষেত্রে সোচ্চার কণ্ঠ তারাও কাজের ক্ষেত্রে নিজেদের কথার বাস্তবায়নে ব্যর্থ। ব্যক্তি ও পুরো সমাজকে আঘাত করার কৌশল হিসেবে সংঘাতে যৌন সহিংসতার পথ বেছে নেয়া অব্যাহত রয়েছে,’ বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিতে নির্মাতার বৈশিষ্ট্যই প্রতিফলিত হয়। ‘বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত ও নকশা প্রণয়ন খাতে নারীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্ব ও নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি সবার জন্যই উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত।’