একটি জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যখন একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক ঋণখেলাপির কাছ থেকে তার ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে চায় এবং দেখতে পায় যে, ওই ব্যক্তির একই সম্পত্তির ওপর একাধিক ঋণদাতার পূর্বস্বত্ব রয়েছে। অসৎ ঋণ গ্রহীতাদের জালিয়াতির কারণে অধিকাংশ সময়ে এ ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে।
এভাবে দেশের অর্থনীতিতে ক্রমেই বাড়ছে খেলাপি ঋণের বোঝা। পাহাড়সম খেলাপি ঋণে বিপর্যস্ত হচ্ছে দেশের আর্থিক খাত।
এই ধরনের প্রতারণা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একটি সহজ উপায় হচ্ছে বন্ধককৃত জমির ওপর তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখে যাতে ঋণগ্রহীতারা একাধিক ঋণদাতার কাছে থেকে একই সম্পত্তি বারবার ব্যবহার করতে না পারে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, এ ধরনের প্রতারণা রোধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক এখন ‘তথ্য ব্যাংক’ আকারে একটি তথ্য ভাণ্ডার সম্পূর্ণ করার কাজ করছে। যার মাধ্যমে যদি কেউ একই জমি দেখিয়ে বিভিন্ন ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করার চেষ্টা করে তাহলে এটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে যাতে বলা হয় যে, তথ্য ব্যাংক ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত হবে।
এর আগে, একটি চিঠিতে ঋণ জালিয়াতি বন্ধ করতে তথ্য ব্যাংক চালুর উন্নয়ন সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চান অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, তথ্য ব্যাংক সফটওয়্যার চালুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পরিশোধের নিরাপত্তা অঙ্গীকার হিসেবে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার পাওয়ার পর এটি সফ্টওয়্যার সিস্টেমে রূপান্তরিত হবে এবং এর কর্মক্ষমতা দেখার জন্য পরীক্ষা করা হবে।
তথ্য সিস্টেমের সফটওয়্যার সম্ভবত এই মাসের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
তথ্য সিস্টেমের সফটওয়্যার পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) বা ঋণ তথ্যভান্ডার দ্বারা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শেষ করার জন্য এটির ছয় মাসের মতো সময় লাগবে।
সিআইবি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি বিশেষ বিভাগ। এই বিভাগ ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৫০ হাজার টাকার উপরের ঋণগ্রহীতাদের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ করে।
ঋণ গ্রহণে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইতিপূর্বে ঋণ নিয়েছে কিনা বা নিয়ে থাকলে তার অবস্থা, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ঋণখেলাপি কিনা, তা সিআইবির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নতুন ঋণ নিতে পারেন না। ঋণ নেয়ার আগে অবশ্যই খেলাপির দুর্নাম থেকে মুক্ত হতে হবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে যে, জনসাধারণের জন্য ঋণ পরিশোধের নিরাপত্তা অঙ্গীকার হিসেবে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ ১৯৭২ এর অধীনে নীতিমালাটি সংশোধন করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ ১৯৭২ এর ৪৬ (১) ও ৪৬ (২) ধারা অনুযায়ী ব্যাংকের নাম এবং ঋণগ্রহীতার নাম ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব তথ্য খুলতে পারবে না।
৪৬ (৩) ধারা অনুযায়ী এই ধরনের তথ্য সংসদে প্রকাশ করা যেতে পারে। কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ সিআইবি ডেটাবেসে রাখা তথ্য প্রকাশ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাধ্য করতে পারবে না।
চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সিআইবি তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিৎ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ ১৯৭২ সংশোধন করা উচিৎ।