এদিকে, বেনাপোল দিয়ে গত এক মাস ধরে দুদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন দেশের আমদানিকারকরা।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২৬ মার্চ থেকে বেনাপোল বন্দরের সাথে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। বেনাপোল বন্দরে দিয়ে দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাকের বেশির ভাগে রয়েছে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল, কেমিক্যাল, অক্সিজেন ও খাদ্যদ্রব্য। এগুলো দ্রুত খালাস করা না গেলে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন আমদানিকারকরা।
আমদানিকারক ইদ্রিস আলী জানান, বন্দরের ওপারে তাদের পণ্যবোঝাই চারটি ট্রাক আটকে আছে। এ জন্য প্রতিদিন ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ মাশুল (ডেমারেজ চার্জ) গুনতে হচ্ছে। শুধু এক মাসে ডেমারেজ বাবদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ‘ভারত থেকে যদি আমাদের ট্রাকগুলো বন্দরে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাছাড়া অধিকাংশ আমদানিকারক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানি করেছেন। সময় মতো পণ্য খালাশ করতে না পারায় তাদের মোটা অংকের ক্ষতির কারণে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে।’
আটকা থাকা পণ্যের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে তারা বারবার আশ্বাস দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানান তিনি।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দুদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালু রাখার নির্দেশনা দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা আমলে নিচ্ছে না। দুদেশের ট্রাক চালকদের করোনা পরীক্ষার পর সার্টিফিকেট ইস্যু করে সেই অনুযায়ী বন্দরে পণ্য খালাশের অনুমতি দেয়া হলে করোনার কোনো ঝুঁকি থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন তরফদার বলেন, ‘ভারতের প্রতিশ্রুতি ছিল আমদানি-রপ্তানি দ্রুত চালু করে ট্রাক প্রবেশের পর তা দ্রুত খালি করার ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু তারা কোনো কথাই রাখেনি।’
তিনি জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সাথে ৪০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
বেনাপোলের কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, করোনার কারণে সরকারি ছুটি ঘোষণার পর থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউস ও বন্দর খোলা রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে বন্দর থেকে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাশ দেয়া হয়েছে। ‘ভারতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার কথা হয়েছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালু করার জন্য।’