সোমবার সকালে দু’দেশের ব্যবসায়ী, বন্দর শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ৩ ঘণ্টার যৌথ সভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সম্পন্ন হয়।
দু’দেশের ব্যবসায়ী, বন্দর শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আমদানি রপ্তানি চালু করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও ভারতের বনগাও পৌর সভার মেয়রের হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়ে যায়।
বেনাপোল বন্দরে লেবারদের হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে শনিবার দুপুর থেকে ভারতীয় ট্রাক শ্রমিক সংগঠন এবং মালিক সমিতি বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়।
ধর্মঘটের কারণে বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় আমদানি রপ্তানি পণ্যবোঝাই কয়েক হাজার ট্রাক আটকা পড়েছে। বেনাপোল থেকে কোনো পণ্যচালানও যায়নি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে। যার অনেকগুলোতে রয়েছে বাংলাদেশি রপ্তানিমুখি গার্মেন্ট শিল্পের কাঁচামাল, মাছ, পানসহ বিভিন্ন ধরনের পচনশীল পণ্য।
তবে আমদানি রপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দর থেকে পণ্য খালাস ও দু’দেশের মধ্যে পাসপোর্ট যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ভারতীয় ট্রাক শ্রমিকদের অভিযোগ, সেদেশ থেকে রপ্তানি করা পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসার পর তাদের ওপর শুরু হয় নানা হয়রানিসহ দুর্ব্যবহার।
নিয়ম মাফিক বকশিসের টাকা দিলেও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করা হয়। এসব জটিলতা নিরসনে দুই দেশের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে সম্প্রতি দুটি আলোচনা সভা বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ট্রাকবিশেষ বকশিসের হার বেধে দেয়া হয়। কিন্তু বেনাপোল বন্দরের কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা এই সিদ্ধান্ত না মেনে ইচ্ছামাফিক বকশিস আদায়ের ব্যাপারে অনড় রয়েছেন। সেই কারণে আমদানি রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় ট্রাক শ্রমিক ও মালিকদের সংগঠনগুলো।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি কামল উদ্দিন শিমুল জানান, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বনগাও পৌর মেয়রের যোগসাজসে কিছু লোকাল ট্রাক মালিক ও শ্রমিক নেতা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন অজুহাতে আমদানি রপ্তানি বন্ধ করে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাক জট সৃষ্টি করে ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা করে ডেমারেজ আদায় করে আসছে। ডেমারেজের পুরো টাকা বাংলাদেশের আমদানিকারকদের কাছ থেকে নেয়া হয়।
ফলে এক ট্রাক পণ্য বেনাপোল বন্দরে পৌঁছাতে সময় লাগতো ১৫/২০ দিন। প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫ থেকে ৬’শ ট্রাক পণ্য আমদানি হয় ভারত থেকে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৩’শ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়। প্রতিদিন বেনাপোল কাস্টমস হাউস ২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। বর্তমানে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরে কোনো ট্রাক জট না থাকায় দিনের ট্রাকগুলো দিনেই প্রবেশ করছে। সে কারণে ভারতীয় ট্রাক মালিক ও শ্রমিকরা কোনো ‘ডেমারেজ চার্জ’ পাচ্ছেন না। ফলে পরিকল্পিতভাবে বনগাও পৌরসভার সহায়তায় আমদানি রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির নেতা আলহাজ নুরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে, রবিবার রাতে বেনাপোল বন্দরের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে আলোচনা হয়েছে। আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম পুনরায় চালু হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে দু’দেশের ব্যবসায়ী, বন্দর শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ৩ ঘণ্টার যৌথসভা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। দুই দেশের শ্রমিকদের কোন্দলের কারণে শনিবার দুপুর থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দরে মালামাল খালাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রযেছে।’
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর দিয়ে সরকার প্রতি বছর সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। এই ভাবে ঘন ঘন আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয়।’