বাংলাদেশ সরকার পাইলট এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিমের পরিধি বাড়িয়েছে। এতে শ্রমিকদের কাজে আসা-যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার শিকারদের জন্য ক্ষতিপূরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ মে) অনুষ্ঠিত এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) পাইলটের গভর্নেন্স বোর্ড তার অষ্টম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে 'যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনা'কে শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলে পোশাক শ্রমিকদের জন্য চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পথ প্রশস্ত হলো।
সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শিল্প ও শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) পাইলটে যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনাকেও অন্তর্ভুক্ত করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।’
আইএলও জানিয়েছে, নিয়োগকর্তাদের সংগঠন (বিইএফ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ), শ্রমিক সংগঠন (ইউএফজিডাব্লু, এনসিসিডব্লিউই) এবং সরকারি সংস্থাগুলো (কেন্দ্রীয় তহবিল, ডিওএল, ডিআইএফই) সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে, যারা ইআইএস পাইলট গভর্নেন্স বোর্ডের সদস্য।
আরও পড়ুন: ইউএসআইটিসির শুনানিতে তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন বিজিএমইএ সভাপতি
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিয়াইনেন বলেন, '২০২২ সালের ২১ জুন থেকে ইআইএস পাইলট তৈরি পোশাক খাতের আহত শ্রমিক এবং নিহত শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীলদের কর্মসংক্রান্ত দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে আসছে।’
পুটিয়াইনেন বলেন, যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনা অন্তর্ভুক্তির এই উদ্যোগ শ্রমিকদের সুরক্ষা আরও বাড়িয়ে দেবে এবং শিল্পের সঙ্গে শ্রমিকদের সম্পর্কের উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রায়ই শ্রমিকদের কাজে আসা বা যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার কারণে বিঘ্নিত হয় বলে জানান তিনি।
আইএলওর কারিগরি বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের সম্প্রসারণের কারিগরি ও আর্থিক দিক সম্পর্কে মূল দিকগুলো তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে দুর্ঘটনাকে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার শর্ত। এছাড়া কারখানার বাইরে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা এবং কোনো কারখানার সঙ্গে তাদের পরিচয় না দেওয়ার ক্ষেত্রে পৃথক রেকর্ড রাখার শর্তও দেন তারা।
এছাড়া ইআইএস পাইলটের অধীনে দুর্ঘটনার আওতায় আর্থিক স্থায়িত্বের জন্য একটি শক্তিশালী নজির উপস্থাপন করেছে তারা।
আগামী ১ জুলাই থেকে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম পাইলটের আওতায় যাতায়াত দুর্ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হওয়ার কথা উল্লেখ করে নিয়োগকর্তাদের সংগঠনগুলো বলেছে ‘আমরা সামাজিক সুরক্ষার জন্য শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারকে সমর্থন করি এবং নতুন সুবিধাগুলো বিবেচনা করতে পেরে খুশি হব, যদি তারা শিল্পের প্রতিযোগিতাকে প্রভাবিত না করে।’
শ্রমিক প্রতিনিধিরাও এ উদ্যোগে সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ‘তৈরি পোশাক খাত তুলনামূলকভাবে নিরাপদ খাত, তবে সড়ক ভ্রমণ এই কাজের সবচেয়ে ভয়াবহ অংশ, তাই যাতায়াত দুর্ঘটনা কভার করা গুরুত্বপূর্ণ।’
আরও পড়ুন: উচ্চমানের পণ্য বৈচিত্র্যকরণ এবং নতুন রপ্তানি বাজার অনুসন্ধানে জোর দিচ্ছে বিজিএমইএ
আইএলও এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি বেনিফিট কনভেনশন নম্বর ১২১ (সি-১২১)’র ৭ নম্বর অনুচ্ছেদের আলোকে দেশগুলোকে শিল্প দুর্ঘটনার সংজ্ঞা দিতে হবে। যার মধ্যে একটি যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনাকে শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হবে এমন শর্তগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই পদক্ষেপ অভিযোজন করা বাংলাদেশের ইআইএসকে সি-১২১ এ বর্ণিত প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক করে তোলে।
ইআইএস পাইলটের পরিধিতে, যাতায়াতের সময় দুর্ঘটনা কর্মস্থল ও শ্রমিকদের স্থানীয় বাসস্থানের মধ্যে সরাসরি যাওয়ার সময় দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। ইআইএস পাইলটে যাতায়াত দুর্ঘটনা অন্তর্ভুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে পাইলট এখন প্রস্তাবিত তিনটি দুর্বলতার মধ্যে দুটি অন্তর্ভুক্ত করে। তবে 'পেশাগত রোগ' এখনও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
তবে পেশাগত রোগের জাতীয় সক্ষমতা এবং তথ্য বিকাশের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আইএলও ও জিআইজেড যৌথভাবে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম পাইলট বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার, নিয়োগকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।
আইএলও উদ্যোগটিতে নেদারল্যান্ডস ও কানাডা সরকার অর্থায়ন করে। অন্যদিকে জিআইজেড উদ্যোগটি জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) অর্থায়ন করে থাকে।
আরও পড়ুন: ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ