এছাড়া বাণিজ্য সহযোগিতাকরণ চুক্তি (টিএফএ) বাস্তবায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) কাউন্সিলের চতুর্থ সভায় এ সংক্রান্ত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা হয়।
শুক্রবার ওয়াশিংটনের অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, সভায় বাংলাদেশের পক্ষ হতে বাণিজ্য সহযোগিতাকরণ চুক্তি (টিএফএ) বাস্তবায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয়। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয় এবং এক্ষেত্রে ডব্ল্উিটিও’র বালি মন্ত্রী পর্যায়ের সিদ্ধান্তের আলোকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বৃদ্ধিরও অনুরোধ জানানো হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নার্স, মিড্ওয়াইফসহ অন্যান্য সেবাখাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ সহজীকরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের বিষয়ে তথ্যাদি তুলে ধরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়া বাংলাদেশি পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণপূর্বক অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা, টেকনোলজি ট্রান্সফার, বাণিজ্যবিষয়ক সক্ষমতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল ইকোনমি ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে টেকসই উত্তোরণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয়।
২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষে ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল টিকফা কাউন্সিলের প্রথম সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এর দ্বিতীয় সভা এবং ১৭ মে ২০১৭ তারিখে ঢাকায় তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলের চতুর্থ সভায় উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়।
সভায় জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। যুক্তরাষ্ট্র্র বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ একক রপ্তানি বাজার। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৫.৯৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র হতে বাংলাদেশে প্রায় ১.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করা হয়েছে।
সভায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়াদি প্রাধান্য পায়।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বৃদ্ধি- বিশেষ করে তুলা ও ওষুধ রপ্তানি, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, সরকারি ক্রয়পদ্ধতি ও লেবার ইস্যু বিষয়েও আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশের খসড়া ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় নোটিফিকেশনের জন্য বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়।
উভয় দেশের মধ্যে চলমান সৌহার্দপূর্ণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে চতুর্থ টিকফা সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব শুভাশীষ বসু। এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুহম্মদ হাবিবুর রহমান খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল এর মহাপরিচালক মোঃ মুনীর চৌধুরী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব মইনুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য প্রকাশ দেওয়ান সহ মোট ১২ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি মার্ক লিন্সকট। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের উপসহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি জেবা রেয়াজুদ্দিন, ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক/অর্থনৈতিক কাউন্সেলর মিঃ বিল মোলার সহ মোট ২০ জন প্রতিনিধি এ সভায় অংশগ্রহণ করেন।