বেনাপোল, ১৪ আগস্ট (ইউএনবি)- বাজার নিয়ন্ত্রণের অভাবে পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে রান্নার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান পেঁয়াজের দাম।
ঈদ উৎসবের সময় পেঁয়াজের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। গত তিন দিনে রাজধানী ঢাকায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। চাহিদা বেশি থাকায় বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজের আমদানিও বেড়েছে।
সরকার শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে।
ভারতীয় পেঁয়াজ এখন স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে।
অতিরিক্ত মুনাফালোভী বিক্রেতাদের কারসাজির কারণে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতা সাধারণ। তারা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় আসন্ন ঈদুল আজহার আগে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।
তবে আমদানিকারকরা বলছেন, ভারত থেকে উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে মূল্য বেড়েছে। ভারত থেকে নাসিক, হাসখালি, বেলেডাঙ্গা ও খড়কপুর জাতের পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে। এদেশে নাসিকের পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। গত ছয়দিনে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চার হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস অফিস সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার ভোমরা শুল্ক স্টেশন দিয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় বাংলাদেশে। ওখানে যানজটের কারণে কিছু পেঁয়াজ বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পেঁয়াজের বাজারমূল্য ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে রাখতে ২০১৬ সালের রোজার আগে সরকার পেঁয়াজের উপর আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেন। এরপর আর শুল্ক সংযোজন হয়নি। তবে শুল্ক উঠলেও অতিরিক্ত লাভে বিক্রেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
ভারতের রপ্তানি মূল্যে প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে ২০৫ মার্কিন ডলার; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ২০০ টাকা। কেজি প্রতি আমদানি খরচ পড়ছে প্রায় ১৮ টাকা। এলসি খরচসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দর পর্যন্ত পেঁয়াজ পৌঁছাতে খরচ পড়ছে প্রতি কেজি ২০ টাকা। আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বন্দর থেকে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫ টাকা।
গত ৫ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারত থেকে চার হাজার ৭৩৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। যা বেনাপোল কাস্টমস হাউজ থেকে ছাড় করে নিয়ে গেছেন আমদানিকারকরা।
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রয়েল এন্টারপ্রাইজের মালিক রফিকুল ইসলাম রয়েল ইউএনবিকে বলেন, বর্তমানে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ২০৫ ডলার মূল্যে শুল্কায়ন করছে। সে হিসেবে ভারতীয় রপ্তানি খরচ, ট্রাক ভাড়া দিয়ে বেনাপোল পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য পড়ছে ২০ টাকা। বেনাপোল থেকে ঢাকায় পাঠাতে খরচ পড়ছে প্রতি কেজিতে আরো তিন টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে যাচ্ছে ২৩ টাকা। এরপর কিছু পেঁয়াজ পচে যায় আবার কিছু পেঁয়াজ শুকিয়ে যায়। এ ছাড়াও আগে ১৫ থেকে ২০ টন একটি ট্রাকে পাঠানো যেত। বর্তমানে ১৩ টনের বেশি ট্রাক মালিকরা নিতে চান না। এর ফলে পরিবহন খরচও বেড়েছে।
এসব কারণে এখন আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানিতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। বাজারে চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ কম থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে আমদানিকারক শাহিন রেজা জানান, বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির কারণে আমদানিকারকরা লাভবান হচ্ছেন না। কারণ তারা আমদানি করা দরের সামান্য ব্যবধানে তুলে দিচ্ছেন পাইকারদের হাতে। পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে ক্রেতাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক খুলনার হামিদ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি টন ২০৫ থেকে ৩০০ মার্কিন ডলার মূল্য নির্ধারণ করা হলেও ওই মূল্যে ভারতীয় বাজারে তারা পেঁয়াজ কিনতে পারেন না। অনেক সময় নির্ধারিত মূল্যের বেশি, আবার কোনো সময় কমও থাকে।
এছাড়া পচনশীল পণ্যের হিসেব একটু অন্য ধরনের। এ কারণে মূল্যের তারতম্য হয়। আমদানিকারকরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে কেজিতে মাত্র এক থেকে দেড় টাকা লাভে বাজারে পণ্য বিক্রি করেন।
এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। বাজার সহনশীল রাখতে ও পেঁয়াজের আমদানি গতিশীল করতে বেনাপোল বন্দর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।