আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান রুখে দিতে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব যত দ্রুত সম্ভব পালনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শনিবার রাজধানী ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা ও সাবেক এমপি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের স্মরণ সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। পরে দলের জাতীয় কাউন্সিলও অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, গত ১৬ বছরে যারা দেশের মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তারা অনুশোচনা প্রকাশ করেনি, অনুতাপ প্রকাশ করেনি এবং তারা দেশের ক্ষতির জন্য কাজ করেই যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অবিচল রেখে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো- এত দমন-পীড়ন সহ্য করেও আমরা শিক্ষা নিইনি।’
আরও পড়ুন: হাসিনার বিচার করতে দেশে ফেরানোর দাবি বিএনপির
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, শুধু সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে একটি গণতন্ত্রপন্থি দল আরেক দল সম্পর্কে কটূক্তি করছে, যা কোনো কাজে আসে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে গণঐক্য গড়ে তুলেছি তা দিয়ে আমরা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করতে পারি। এই ঐক্যের সঙ্গে যদি কোনোভাবে আপস করা হয়, তাহলে সেই ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্র পুনরুজ্জীবিত হবে এবং আমাদের কাউকেই রেহাই দেওয়া হবে না। এজন্য আমাদের একতা বিপন্ন করা উচিত নয়।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, দেশ গঠন ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ডান, বাম, মধ্যপন্থি ও ইসলামি সব শক্তিকে নিয়ে কাজ করাই বিএনপির লক্ষ্য। ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এ দেশের মানুষ যেন আর কখনো ফ্যাসিবাদ ও নিপীড়নের শিকার না হয়। আমরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষেও কথা বলি, কিন্তু এর অপব্যবহারের পক্ষে নই।’
স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর দোসররা গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য নানামুখী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে সতর্ক করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের সব অশুভ প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, স্বৈরাচারের পতনের পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সহায়তা করাই তাদের দলের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র মানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা। ফ্যাসিবাদ দূর হলেও গণতন্ত্র এখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। এটি পুনরুদ্ধার করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আশা করি, তারা এটি সঠিকভাবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব করবে।’
তিনি বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সরকারকে একটি যৌক্তিক সময়সীমা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। ‘তবে সরকারের লক্ষ্য জনগণের কাছে পরিষ্কার হতে হবে। তাদের কর্মকাণ্ডের প্রকৃতি আমাদের বুঝতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে তাদের কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের সহযোগীরা এখনও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। ‘তারা যেন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী বাহিনীকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ১৫ বছরে বিএনপির সাত শতাধিক নেতা-কর্মী গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই আর ফিরে আসেননি।
তিনি বলেন, 'আমরা জানি না তারা বেঁচে আছেন কি না। তাদের সন্তান, বাবা-মা ও স্বজনরা এখনো প্রিয়জনদের ফেরার অপেক্ষায় আছেন।’
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে বিএনপির সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অসংখ্য ছাত্র ও নাগরিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে। ‘জনগণ যাতে আর এ ধরনের শাসনের মুখোমুখি না হয় তা নিশ্চিত করা এখন আমাদের দায়িত্ব।’