গ্রেপ্তার স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সুলতান মাহমুদ (৩৮) ধুনট পৌর এলাকার সদরপাড়ার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুলতান মাহমুদ ২০১৫ সালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দুই বছর পর সভাপতির পদ লাভ করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃত্বে আসার পর থেকেই দখলবাজি, তদবির, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে সুলতানের বিরুদ্ধে।
সবচেয়ে বেশি নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন পুলিশ কনস্টেবল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্বাস্থ্য বিভাগ, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে।
সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক ও বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে রাজনীতিবিদ, পুলিশ, আইনজীবী, শিক্ষকসহ অসংখ্য পেশার মানুষের সাথে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় সুলতান মাহমুদ রূপালী ব্যাংক ধুনট শাখায় তার সঞ্চয়ী হিসাবের (নং-১৩৬) চেক দিয়েছেন। চাকরি দিতে না পারলে এক মাসের মধ্যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু তার ওই ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েন চাকরি প্রার্থীরা।
তার প্রতারণার শিকার বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি কোয়েল ইসলাম বলেন, ‘সুলতান মাহমুদ নিজেকে সাবেক এক মন্ত্রীর নাতিন জামাই পরিচয় দেন। তিনি আমার মেয়ের জামাইকে অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার নামে তিন বছর আগে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস স্থাপনে ব্যাংক চেক দিয়েছিলেন সুলতান। চাকরি দিতে না পারলেও টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করেছেন।’
একইভাবে তিনি (সুলতান) ধুনট উপজেলার পারনাটাবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল মোমিন মুকুলের ছেলে নাসিম উদ্দিনকে রূপালী ব্যাংকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ও ২০১৯ সালের ২৫ মে দুই দফা ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা নেন। তাকেও ব্যাংকের চেক দেয়া হয়েছিল। চাকরি ও টাকা না পেয়ে নাসিম উদ্দিন আদালতে মামলা করেন।
বগুড়ার অ্যাডভোকেট জাবেদ কাউসারের কাছে একই কায়দায় ছয় লাখ, মোস্তাফিজার রহমানের কাছে ১০ লাখ, আবদুস সাত্তারের কাছে ৩ লাখসহ শতাধিক মানুষের কাছে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সুলতান মাহমুদ।
রূপালী ব্যাংক ধুনট শাখার ব্যবস্থাপক শাহানুল হাসান বলেন, ‘এ পর্যন্ত সুলতান মাহমুদের স্বাক্ষরিত অর্ধ কোটি টাকার প্রায় ১৫টি চেক ডিজঅনার হয়েছে। আরও অনেক ব্যক্তি চেক নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তার হিসাবে কোনো টাকা না থাকায় কেউ টাকা তুলতে পারেননি।’
ধুনট থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সুলতান মাহমুদ মন্ত্রী-এমপিদের নাম ভাঙিয়ে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণার শিকার তিন ব্যক্তি আদালতে মামলা করেছেন। মামলা দায়েরের পর থেকে সুলতান আত্মগোপনে ছিলেন। তিনটি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। বুধবার বিকাল সোয়া ৩টায় পৌর এলাকার চরধুনট গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।’