তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের ৩টি আসনের দু’টিতে হিন্দু সংসদ সদস্য ও অপরটিতে মহিলা; আমরা মরে গেলে আমাদের জানাজায় অংশ নিতে পারবেন না তারা।’
ভুতু আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দুর্ভাগা; এখানে মনোনয়ন দেয় একজন মহিলাকে, অপর দুটি আসনে মৃণাল কান্তি দাস ও সুকুমার রঞ্জন ঘোষ নামে দুজন হিন্দুকে নমিনেশন দেয়া হয়। আমরা মরে গেলে যারা আমাদের জানাজায় অংশ নিতে পারবে না।’
জানাজায় যারা অংশ নিতে পারবে আগামী নির্বাচনে তাদের নমিনেশন দেয়ার দাবি জানান এই নেতা।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমরা টঙ্গীবাড়িবাসী দুর্ভাগা; আমাদের এখানে এক মহিলাকে মনোনয়ন দেয়। সে জানাজায় অংশ নিতে পারে না। তাই আমরা মুন্সীগঞ্জ ও টঙ্গীবাড়ীর মানুষ জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানাই, মাহবুব আলম সাহেবকে যেন টঙ্গীবাড়ী লৌহজং এলাকায় মনোনয়ন দেয়া হয়, তিনি আগামীতে আমাদের জানাজায় অংশ নিতে পারবেন।’
শনিবার বিকালে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাও বাজারে একাদশ জাতীয় সংসদ র্নিবাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমের এক মতবিনিময় সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভুতু এসব কথা বলেন। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির এই বক্তব্যের পরপরই মুন্সীগঞ্জ-২ নির্বাচনী টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এই ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার কাজী ওয়াহিদ জানিয়েছেন, যারা এ জাতীয় কথা বলে তারা আওয়ামী লীগের অসম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা লালন করে না। তারা অন্য কোনো শক্তির এজেন্ট হিসেবে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এমিলি পারভীন জানান, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এই বক্তব্য রেখেছেন। সংখ্যালঘু মৃণাল কান্তি দাস ও সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এবং সব ধর্মের লোক নিয়েই আমাদের এই বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, নারীর অগ্রযাত্রার কারণেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধির ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রধান প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন উদ্যোগ নিয়েছেন, তখন আওয়ামী লীগেরই এক দায়িত্বশীল পদে থাকা নেতার এমন বক্তব্য দুঃখজনক।
এমিলি বলেন, আমাদের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন একজন নারী হয়েও যখন অনেক বেশি জনপ্রিয় আর গ্রহণযোগ্য, সেই জ্বালা সহ্য করতে না পেরেই এমন বক্তব্য দিয়ে নিজেদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন ওই নেতা।
লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওসমান গণি তালুকদার বলেছেন, একজন জনপ্রতিনিধি হতে চাইলে তার গভীর ভালোবাসা থাকতে হবে। এমন সুরসুরি মার্কা ও নিচু শ্রেণির কথা বলে মানুষের মন জয় করার দিন চলে গেছে। এটা আমাদের ধর্মীয় অনুভুতির বিরুদ্ধে কথা, আমাদের ইসলাম ধর্মে এমন বিধিনিষেধ নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। যে দেশের মানুষ ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলে কাধে কাধ মিলিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করে। সেই অর্জন বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
তবে এই বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের ৩টি আসনের সংসদ সদস্যগণ কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ভুতুর বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের মাঝে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মতবিনিময় সভায় উপস্থিত শ্রোতারা বলেন, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নারী। আর এই জেলায় বাকী দু’ আসনের বর্তমান সাংসদ হিন্দু সম্প্রদায়ের। তাই মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলমের পাশে দাঁড়িয়ে তার পক্ষ সমর্থন করতে গিয়েই নারী নেতৃত্ব এবং হিন্দু বিদ্বেষী বক্তব্য রাখেন টঙ্গীবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হালদার ভুতু।
তারা বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম নিরব থেকে এই কথার সমর্থন করলেন। সভাপতির বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি তিনি।