ভারতীয় ঐতিহ্যের সব রঙ, দেশ-বিদেশের জনপ্রিয় তারকা আর বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের রাজকীয় বিয়ের চূড়ান্ত আয়োজনে এগুলোর সবই থাকা চাই। শত হলেও এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির কনিষ্ঠ পুত্রের বিয়ে বলে কথা। বর ও কনের চার হাত এক করার লক্ষ্যে গত ৩ জুলাই থেকে যেন তারই মহড়া চলছে। উৎসবের মধ্যমণি অনন্ত-রাধিকা হলেও এখানে এমন সব তারকা ও ব্যক্তিদের একত্রিত করা হয়েছে, যা শুধুমাত্র আম্বানিদের পক্ষেই করা সম্ভব। চলুন, সেই পরিচিত মুখগুলোর পাশাপাশি চোখ ধাঁধানো এই আয়োজনের বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সপ্তাহব্যাপী বিয়ের আয়োজন পর্ব ও ভেন্যু
বর মুকেশ ও নীতা আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি, আর কনে ফার্মা টাইকুন বীরেন ও শায়লা মার্চেন্টের ছোট মেয়ে রাধিকা মার্চেন্ট। এদের গাঁটছড়া বাঁধতে মুম্বাইতে আম্বানি পরিবারের ২৭-তলা অ্যান্টিলিয়া বাসভবনে পুরো সপ্তাহ জুড়ে চলেছে প্রাক-বিবাহ উৎসব। ভারতের চিরায়ত প্রথা অনুসারে একে একে অনুষ্ঠিত হয়েছে মামেরু/মোসালু, গায়ে হলুদ, মেহেদি, সঙ্গীত, গ্রহ শান্তি পূজা, ভজন এবং শিব শক্তি পূজা।
আরো পড়ুন: আম্বানিপুত্রের রাজকীয় বিবাহ-পূর্ব অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি তারকা ও খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের মিলনমেলা
প্রাক-পর্ব শেষে বিয়ের মূল আয়োজন মোট চার দিনব্যাপী। প্রথম দিন ছিল সেই কাঙ্ক্ষিত মাহেন্দ্র ক্ষণ: অনন্ত-রাধিকার বিয়ে। ১২ জুলাইয়ের বর্ষণমুখর দিনে জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ের মূল পর্ব। ১৬ হাজার আসন ক্ষমতাসম্পন্ন এই ভেন্যুর আশেপাশের এলাকা অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিছানো হয়েছিল লাল গালিচা। অনুষ্ঠানের বেশ আগে থেকেই রাস্তা বন্ধ রাখায় পুরো এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা থমকে যায়।
১৩ জুলাইয়ের ‘শুভ আশীর্বাদ’ এবং ১৪ জুলাইয়ের ‘মঙ্গল উৎসব’ বা রিসেপশন দুটোরই ভেন্যু অ্যান্টিলিয়া।
সবশেষে আয়োজনের গ্র্যান্ড ফিনালে হিসেবে ১৫ই জুলাই দিবসটিকে রাখা হয়েছে আম্বানি পরিবারের নিবেদিত কর্মীদের জন্য, যেটি অনুষ্ঠিত হবে জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারে। এই ইভেন্টের অতিথিরা অ্যান্টিলিয়া, সি উইন্ড ও করুণা সিন্ধুসহ অন্যান্য আম্বানি বাসভবনের হাউসকিপিং, নিরাপত্তা, অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীরা।
আরো পড়ুন: ‘জঙ্গল’ থিমের পোশাক পরবেন আম্বানির ছেলের বিয়ের অতিথিরা, থাকবেন হলিউড-বলিউড তারকারা
অনন্ত-রাধিকার বিয়ের অতিথিরা
বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিরা
লাল গালিচায় একদম ভারতীয় বেশে সস্ত্রীক ক্যামেরাবন্দি হতে দেখা গেছে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও টনি ব্লেয়ারকে।
ধুন্ধুমার এই আয়োজনে শরীক হয়েছিলেন স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্সের এক্সিকিউটিভ-চেয়ারম্যান জে ইয়ং লি এবং ভাইস-চেয়ারম্যান ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হান জং হি।
এছাড়া উপস্থিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হাজির হয়েছিলেন ‘আশীর্বাদ’ অনুষ্ঠানে।
আন্তর্জাতিক তারকারা
বিয়ের প্রাক-পর্বে অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫ জুলাইয়ের ‘সঙ্গীত’ রাতের বিশেষ আকর্ষণ ছিল পপ আইকন কানাডিয়ান সঙ্গীতশিল্পী জাস্টিন বিবার। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে এই গায়ক তার আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘বেবি’, ‘লাভ ইয়োরসেল্ফ’ এবং ‘পিচেস’ সহ বেশ কয়েকটি হিট গান পরিবেশন করেন।
আমেরিকান টিভি তারকা কিম ও ক্লোই দুই কার্দাশিয়ান বোনকে দেখা গেছে বিয়ের মূল অনুষ্ঠানে।
পুরোদস্তুর অভিজাত ভারতীয় বেশে হাজির হয়েছিলেন পেশাদার রেসলার ও হলিউড অভিনেতা জন সিনা।
এছাড়াও হাজির হয়েছিলেন ‘কাম ডাউন’ গানের জন্য সাম্প্রতিক ইন্টারনেট সেনসেশন নাইজেরিয়ান সঙ্গীতশিল্পী রেমা। আরও এসেছিলেন ‘ডেস্পাসিতো’ গানের জন্য জনপ্রিয় পুয়ের্তোরিকান সঙ্গীতশিল্পী লুইস ফন্সি।
আরো পড়ুন: দীর্ঘ বিরতির পর ‘নীল জোছনা’ নিয়ে বড় পর্দায় ফিরছেন শাওন
ভারতীয় তারকারা
ঘরের তারকাদের প্রায় সকলেই উপস্থিত হয়েছিলেন সপরিবারে। প্রথম সারির তারকা ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন শাহরুখ খান, সালমান খান, রজনীকান্ত, অমিতাভ, অভিষেক ও ঐশ্বরিয়া রাইসহ গোটা বচ্চন পরিবার।
যুগলবন্দি তারকাদের মধ্যে সবার নজর কেড়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া-নিক জোনাস, রণবীর কাপুর-আলিয়া ভাট, দীপিকা পাডুকোন-রণবীর সিং, ক্যাটরিনা কাইফ-ভিকি কৌশল, কিয়ারা আদ্ভানি-সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, শহীদ কাপুর-মিরা রাজপুত।
এছাড়াও ছিলেন হৃতিক রোশন, সঞ্জয় দত্ত, সোনাক্ষী সিন্হা, মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা, রেখা ও হেমা মালিনী।
আরও দেখা গেছে গায়ক হিমেশ রেশামিয়া, সঙ্গীত পরিচালক এ আর রহমান ও ভারতীয় র্যাপার ইয়ো ইয়ো হানি সিংকে।
অতিথিদের মধ্যে আলাদাভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুল্কার এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি।
দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে হাজির হয়েছিলেন মহেশ বাবু ও রাম চরণ।
আরো পড়ুন: মেহজাবীন অভিনীত ভিকি জাহেদের ‘তিথিডোর’ নিয়ে কেন এত আলোচনা
সাজসজ্জা ও ড্রেস কোড
অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের থিমের শিরোনাম ছিল ‘A Celebration of India - An Eternal and Enduring Civilization’। সাজসজ্জা নির্ধারিত হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক তীর্থস্থান ভারানাসির সংস্কৃতির আবহে। এই থিম ও সাজসজ্জার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অতিথিদের জন্য নির্ধারিত ড্রেস কোডের শিরোনাম ছিল ‘Resplendently Indian’।
১ম দিন
১২ জুলাই ‘শুভ বিবাহ’ দিবসের জন্য ড্রেস কোড ছিল সম্পূর্ণ দেশি পোশাক। এ সময় অতিথিদের পরনে দেখা গেছে বিশদ কাজ করা স্যুট, লেহেঙ্গা, কুর্তা-পাজামা, শেরওয়ানি ও সূক্ষ্ম গয়নাসহ অনেক ভারত-খ্যাত শাড়ি।
২য় দিন
১৩ জুলাইয়ের ‘শুভ আশীর্বাদ’ উৎসবের জন্য রাখা হয়েছিল ভারতীয় পার্টি পোশাকের সাথে। এর মধ্যে ছিল ক্লাসিক ফর্মাল শাড়ি, কুর্তা সেট, কোমর কোট এবং মার্জিত ও চটকদার ইন্দো-ওয়েস্টার্ন স্যুট।
৩য় দিন
১৪ জুলাই ‘মঙ্গল উৎসব’ বা বিয়ের সংবর্ধনার জন্য ড্রেস কোড হচ্ছে ভারতীয় চিক পোশাক। এটি মূলত হাল ফ্যাশনের সঙ্গে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী উপাদানের এক অভিজাত সংমিশ্রণ।
কনের সাজ
বিয়েতে রাধিকা মার্চেন্টের পরনে আইভরি পরিধেয়টি ছিল ভারতের স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার আবু জানি সন্দীপ খোসলার নকশা করা। পুরো সাজের নেপথ্যে ছিল ‘পানেতার’ নামক গুজরাটি প্রথা, যেখানে নববধূদের পোশাকিতে থাকে লাল ও সাদা রঙের মিশ্রণ।
রাধিকার ঘাগড়ায় রয়েছে জারদোজি কাট, সূক্ষ্ম জালির মাথার ঘোমটা পাঁচ মিটার লম্বা ও লাল কাঁধের দোপাট্টা টিস্যু কাপড়ের। ঘাগরার একদম নিচের প্রান্তে তিনটি বিচ্ছিন্ন চকচকে লাল রেখার মাধ্যমে সিলুয়েটের কাজ করা। ভিন্ন আকৃতির এই প্রান্তরেখাগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে নকশি, সাদি ও জারদোজি সূচিকর্মের মিশ্রণ।
এছাড়াও ফুলের জটিল বুটি, পাথর, সিকুইন ও লাল রেশমের পরশ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো কাপড়কে।
অলঙ্কার হিসেবে রাধিকার পরনে ছিল পোল্কি কুন্দন চোকার, মাংটিকা, হাতফুল ও কানের দুল। এগুলোর সবই ২০২০ সালে তার বড় বোন অঞ্জলি মার্চেন্ট তার নিজ বিয়েতে পড়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে রাধিকার অভিজাত সজ্জার পাশাপাশি প্রকাশ পেয়েছে পারিবারিক অনুভূতি ও ঐতিহ্য।
বিদায়ের অনুষ্ঠানে রাধিকার পরনে যে পোশাকটি ছিল, তার নকশা করেছেন ভারতের আরেক খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মনীশ মালহোত্রা। সূক্ষ্ম ব্লাউজের পুরোটাতেই ছিল স্বর্ণের কারচুপি। এই নকশাটি গুজরাটের ঐতিহ্যবাহী আবো এবং কচ্ছ শৈলী থেকে অনুপ্রাণিত।
গায়ে হলুদে রাধিকা পরেছিলেন ভারতের জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনার অনামিকা খান্নার নকশা করা পোশাক। প্রাণবন্ত হলুদ পোশাকে রয়েছে মোগরা ফুলের কুঁড়ি দিয়ে সজ্জিত ‘ফুলন কি চাদর দোপাট্টা’, আর প্রান্ত জুড়ে হলুদ গাঁদা ফুলের অলঙ্করণ।
বরের পোশাক
অনন্ত আম্বানির বিয়ের শেরওয়ানিটি ডিজাইন করেছেন ভারতের ফ্যাশন ও চলচ্চিত্র পাড়ার সুপরিচিত মুখ সব্যসাচী মুখার্জি। অনন্তের লাল শেরওয়ানির পুরোটাতেই রয়েছে সোনার জটিল কারুকাজ এবং বোতামগুলো পান্না ও হীরার। তার নেকলেসটিতে রয়েছে ৭২০ ক্যারেট ওজনের বড় পান্নার ওপর প্যান্থার সমন্বিত একটি বিশাল হীরার ব্রোচ।
বিয়ে ভোজ
খাবারের টেবিলে প্রধান আকর্ষণ ছিল জগদ্বিখ্যাত শেফ ভার্জিলিও মার্টিনেজের বানানো সব্জি। এই পেরুভিয়ান রন্ধনশিল্পী মোট ৮ ধরনের সব্জি বানিয়েছিলেন। এগুলো ছিল বেগুনি অমরনাথ দিয়ে জুকিনি ও অ্যাস্প্যারাগাস তিরাদিটো, অ্যাভোকাডো ইমাল্সন ও পেরুভিয়ান কর্ন, কাজু রোল, মাউন্টেন চিমিচুরি ও ফ্রেশ পনির, পিস্তা বাদামের দুধ দিয়ে খেজুর ও মসুরের ট্রায়েঙ্গেল্স, বীজ-স্মোক্ড টমেটো, নারকেল দুধ দিয়ে অ্যামাজনিয়ান কাসাভা টেক্সচার এবং স্ট্রবেরি, আজি লিমো, জাফরানের সঙ্গে ভাজা ফুলকপি।
ভারতীয় খাবারের দায়িত্বে ছিলেন শেফ অবিনাশ মার্টিন্স, যিনি জনপ্রিয় সৈকত গোয়াতে গোয়ান খাবারের উদ্ভাবনের জন্য প্রসিদ্ধ। তার মেনুতে ছিল টেন্ডার কোকোনাট কার্পাসিও, পাও দে কুয়েসো, জিরেসাল প্যানকেক, ডাঙ্গার আর্টিসানাল গোট্স চিজ, অ্যাস্প্যারাগাস ও পাইন নাট ক্যালডিন, ওক টসেল এডামামে ও ব্রাসেল স্প্রাউট্স কিসমুর, ডার্টি গ্রিল্ড সুইট পটেটো এবং গ্লাস্ড কিং অয়েস্টার মাশ্রুম জাকুটির সঙ্গে কর্ন গ্যালেট।
অন্যান্য সাধারণ মিষ্টান্নর মধ্যে ছিল ক্রিমের মত রাবড়ি, লাচ্ছি এবং কফি ক্যাভিয়ারের সঙ্গে তিরামিসু। এছাড়া অতিথিদের জন্য বেনারসের চাট, মিঠাই, মিষ্টি দই, মালাই টোস্ট ও চা, লেবু চা, পান ও খারির মতো ভারতীয় উপমহাদেশের নামকরা স্ট্রীট ফুডেরও ব্যবস্থা ছিল।
আরো পড়ুন: রিলায়েন্সের বিদ্যুৎ প্রকল্পে নেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি
অতিথিদের জন্য যাতায়াতের ব্যবস্থা
বিয়ের অতিথিদের যাতায়াতের জন্য এয়ার চার্টার কোম্পানি ক্লাব ওয়ান এয়ারের তিনটি ফ্যাল্কন-২০০০ জেট ভাড়া করা হয়েছে। এর বাইরে আম্বানি পরিবার শখানেকেরও বেশি বিমান ভাড়া করেছে দেশি-বিদেশি প্রত্যেক অতিথিকে যাতায়াত সুবিধা দিতে। এর জন্য সারা দেশে প্রতিটি বিমানের একাধিক ভ্রমণকে সামনে রেখে আগে থেকেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মার্চের শুরুর দিকে আম্বানিদের জামনগরের বিমানবন্দরে শত শত প্রাইভেট জেট এবং চার্টার্ড করা প্লেন নেমেছে। এই পরিবহনগুলো ভারত ছাড়াও এর বাইরের এক ডজনেরও বেশি দেশ থেকে অতিথিদের নিয়ে জামনগরে পৌঁছেছিল।
জামনগর বিমানবন্দর মূলত গুজরাট অঙ্গরাজ্যের একটি সামরিক বিমানঘাঁটি, যেখানে বেসামরিক টার্মিনাল রয়েছে মাত্র একটি। এখানে সাধারণত মুম্বাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দ্রাবাদ থেকে তিনটি নির্ধারিত সময়ে দিনে গড়ে পাঁচবার বা তার বেশি বিমানের আগমন ঘটে। কিন্তু ফ্লাইট-রাডার-২৪ অনুসারে, পহেলা মার্চ এই টার্মিনালে অবতরণ করা বিমানের সংখ্যা ছিল ৭০।
জামনগর বিমানবন্দরের অধিকাংশই ভারতীয় বিমান বাহিনীর। কিন্তু আম্বানিপুত্রের বিয়েকে সামনে রেখে পুরো বিমানবন্দরটিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
আম্বানির রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের অনুরোধে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে স্থাপন করা হয় কাস্টম্স এবং ইমিগ্রেশন ডেস্ক। এমনকি জামনগরে যাত্রীর চাপ সামলাতে ভারতীয় বিমানবন্দরের পক্ষ থেকে নিয়োগ করা হয় অতিরিক্ত কর্মী।
এই বিমানবন্দরে একবারে সর্বাধিক ছয়টি ছোট বিমান পার্ক করার জায়গা রয়েছে। তাই বিমানগুলোকে যাত্রী বের হওয়া এবং উড্ডয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকুর বাইরে এক মুহুর্তের জন্যও ভূমিতে রাখা হয়নি। এছাড়া রাতারাতি পার্কিংয়েরও কোনো অনুমতি ছিল না।
ভিন্ন সময়ে ভিন্ন অতিথিদের জন্য প্লেনের রুটিন ছিল পূর্ব নির্ধারিত। এমনকি অতিথিদের ফিরতি যাত্রার জন্য জামনগরের কাছাকাছি অন্য একটি বিমানবন্দরে কিছু বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।
নির্ধারিত আগমনের অন্তত এক দিন আগে ফ্লাইট পরিকল্পনা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের কাছে পৌঁছানো হয়েছিল। এর মাধ্যমে সম্ভাব্য যানজট এড়াতে আগে থেকেই অবতরণরত এয়ারলাইনগুলোকে প্রস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চের মধ্যে অবতরণ করা বিমানগুলোর মধ্যে অন্তত ১০টি ছিল বড় জেট এবং ২৬টি ছিল মাঝারি আকারের বিমান। এগুলোর মধ্যে রিলায়েন্স গ্রুপের বিমান ছিল অন্তত ৮টি, যে সংখ্যাটি বিয়ের চূড়ান্ত আয়োজনের আগের মাসগুলোতে আরও বাড়তে শুরু করে।
আরো পড়ুন: আসছে নিশো-তমা জুটির নতুন সিনেমা ‘অসিয়ত’
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ে
এখন পর্যন্ত এই রাজকীয় বিয়ের খরচের তালিকায় সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক হচ্ছে জাস্টিন বিবারের সম্মানী নিয়ে গুঞ্জনটি। তার গান পরিবেশনের সম্মানীর ব্যাপারে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি সংখ্যার কথা শোনা যাচ্ছে। এই পরিমাণটি বাংলাদেশি টাকায় ১১৭ কোটিরও (১ মার্কিন ডলার = ১১৭ দশমিক ১৬ বাংলাদেশি টাকা) বেশি।
লাইভমিন্ট, দি ইকোনমিক টাইমস এবং আউটলুক বিজনেস অনুসারে, অনন্ত-রাধিকার বিয়েতে মোট ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি। বাংলাদেশি টাকায় এই পরিমাণ ৭ হাজার ১৪ কোটিরও ( ১ ভারতীয় রুপি = ১ দশমিক ৪০ বাংলাদেশি টাকা) বেশি।
বিশ্বের সব থেকে সাড়া জাগানো প্রিন্সেস ডায়ানা ও প্রিন্স চার্লসের বিয়েতে খরচ হয়েছিল ১ হাজার ৩৬১ কোটি রুপি। দুবাইয়ের রাজকুমারী শাইখা মাহরা হিন্দ বিনতে মাকতুম এবং শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের বিয়েতে খরচ হয়েছিল ১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। এই সবগুলোকে ছাড়িয়ে আম্বানিপুত্রের বিয়ে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ে।
শেষাংশ
দেশি-বিদেশি তারকা ও বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিদের মিলনমেলা আম্বানিপুত্র অনন্তের রাজকীয় বিয়ে ইতিহাসের একটি শ্রেষ্ঠ ঘটনা হয়ে থাকবে। চোখ কপালে তোলা অর্থব্যয়ের দৌলতে এখানে এক অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে ভিন্ন সংস্কৃতির প্রতিনিধিদের। আড়ম্বরের আতিশয্যে ভারতীয় ঐতিহ্যের যে স্পন্দন ঘটেছে তার প্রতিধ্বনি থাকবে বছরের পর বছর। উপরন্তু, অতিথিদের জন্য শতাধিক বিমানের ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে আম্বানি রাজ্যের প্রভাব-প্রতিপত্তির এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
আরো পড়ুন: মুকেশ আম্বানিকে হারিয়ে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানি