জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী বুধবার উদযাপন করা হবে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য সংগ্রাম করে বিদ্রোহী কবির খেতাব পাওয়া কাজী নজরুল ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
নজরুল তার জ্বালাময়ী কবিতার মাধ্যমে মানুষকে ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যায় ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
দিবসটি উপলক্ষে নজরুল ইন্সটিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমি ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
আরও পড়ুন: ডিআরইউ’র ‘কবি কাজী নজরুল ইসলাম লাইব্রেরি’ উদ্বোধন
নজরুল ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, কাজী নজরুল বাকশক্তি হারানোর আগে ২১ বছরের কর্মজীবনে দুই হাজার ৬০০টি গান, ৬০০টি কবিতা, তিনটি উপন্যাস ও ৪৩টি প্রবন্ধ লেখেন।
পিতার মৃত্যুর পর পরিবারকে সহযোগিতা করতে কাজী নজরুল তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে চাকরি নেন এবং মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবেও কাজ করেন। ৯ বছর বয়সে চুরুলিয়াভিত্তিক একটি পেশাদার ‘লেটো’ দলে যোগ দেয়ার জন্য তাকে স্কুল ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
দলের কাজ করার সময় তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এক বছর পরে তিনি স্কুলে ফিরে আসেন এবং মাথারুন ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে আবারও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া ছেড়ে দেন।
কিছুদিন পর পুলিশ কর্মকর্তা কাজী রফিজুল্লাহ তাকে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তার বাড়িতে নিয়ে যান এবং দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করেন।
১৯১৭ সালে সৈনিক হিসাবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন কাজী নজরুল। এর কয়েক বছরের মধ্যে তিনি সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন। ১৯২১ সালে তাঁর কবিতা ‘বিদ্রোহী’ প্রকাশিত হয়। এক বছর পরে তিনি ‘ধূমকেতু’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা শুরু করেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে তিনি বেশ কয়েকবার ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হাতে কারাবন্দি হন। কারাগারে থাকাকালীন কাজী নজরুল ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ রচনা করেন এবং তার সৃষ্টি পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে উৎসাহিত করে।
তিনি ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তবে তাঁর গান ও কবিতা সবচেয়ে প্রশংসিত সাহিত্য সৃষ্টি। তিনি বাংলা গজল সুরকে জনপ্রিয় করেছিলেন এবং লেখায় আরবি ও ফারসি শব্দের উদার ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত তিনি।
কাজী নজরুল ‘নজরুল গীতি’ নামে সংগীতে একটি নতুন ধারা তৈরি করেছেন। এটি চার হাজার গানের সংকলন যা তিনি লেখেন এবং সঙ্গীত তৈরি করেন।
আরও পড়ুন: শতকণ্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা
১৯৪২ সালে কাজী নজরুল দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে তার কণ্ঠস্বর ও স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন। পরে ভিয়েনার একটি মেডিকেল টিম তার অসুস্থতাকে পিকস ডিজিজ হিসেবে চিহ্নিত করে।
তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে কবির পরিবার বাংলাদেশে ভ্রমণ করেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশিষ্ট অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ১৯৭৪ সালে সম্মানসূচক পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি প্রদান করে। তিনি ১৯৭৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।
৭৭ বছর বয়সে বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ ভাদ্র (১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট) ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। তাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির বর্ণাঢ্য জীবন এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অবদান তুলে ধরে পৃথক বাণী দিয়েছেন।