বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিবিএস, ইউনিসেফ এবং ওয়াটারএইডের যৌথ উদ্যোগে প্রতিবেদনের এ জরিপটি পরিচালিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনে পাঁচটি পৃথক ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য হতে প্রাপ্ত ফলাফল উপস্থাপিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রগুলো হলো- গৃহস্থালি, বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, রেস্তোরাঁ এবং ফুটপাতের খাদ্য বিক্রেতা। উক্ত ক্ষেত্রগুলোতে এসডিজির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সূচক, পঞ্চবর্ষিকী পরিকল্পনা, ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ ইত্যাদির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হয়।
আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধে রেড ক্রিসেন্টের হাত ধোয়ার ১০ হাজার বেসিন
ইউনিসেফ এবং ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় বিবিএস দেশব্যাপী এ জরিপ পরিচালনা করে। যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে জরিপটি করা হয়েছে। সরাসরি সাক্ষাৎকার, স্যানিটেশন সুবিধাগুলো দেখতে তাৎক্ষণিক যাচাই এবং বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা, হাত ধোয়া পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে ৪০ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা জানেন খাওয়ার আগে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩৬ শতাংশ কিশোরী তাদের প্রথম মাসিকের আগে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জানত। ৪৩ শতাংশ কিশোরী এবং ২৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী তাদের মাসিকের সময় ডিসপোজেবল প্যাড ব্যবহার করেন।
আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধে ডিএনসিসি’র ২৫ স্থানে হাত ধোয়া কর্মসূচি
জরিপে আরও দেখা যায়, বিদ্যালয়ে ৩৯ শতাংশ ছেলে-মেয়ে পানি ও সাবানের সুবিধা রয়েছে এমন উন্নত ও ব্যবহারযোগ্য টয়লেট ব্যবহার করতে পারে। আর স্যানিটারি প্যাড অপসারণের ব্যবস্থা ২২ শতাংশ বিদ্যালয়ে রয়েছে এবং এসব বিদ্যালয়ে ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা মানসম্পন্ন টয়লেট রয়েছে।
কিশোরীদের মাঝে ৩০ শতাংশ বলেছে, তারা শেষ ছয় মাসে তাদের মাসিকের সময় বিদ্যালয়ে যাওয়া থেকে বিরত ছিল এবং গড়ে আড়াই দিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। অপরদিকে, ৩৬ শতাংশ কিশোরী বলেছে, তারা ঋতুস্রাব সংক্রান্ত স্বাস্থ্যশিক্ষা বিদ্যালয় থেকে পেয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে রেস্তোরাঁ ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে স্যানিটেশন সুবিধা এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যবিধির (হাইজিন) পাশাপাশি খাদ্য বিক্রেতা এবং সেবাদানকারীদের হাইজিন চর্চার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয় যে ৬৮ শতাংশ বাবুর্চি রেস্তোরাঁয় তাদের কাজের সময় হাত ধোয়ার কথা উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: দেশে ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনে টিকা পেয়েছে ২ কোটি ৮ লাখ শিশু: ইউনিসেফ
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন খাতে প্রমাণভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে এ জরিপের ফলাফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি এ জরিপ হতে এসডিজি সূচক ৬.২.১ ‘সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধাসহ নিরাপদ ব্যবস্থাপনার স্যানিটেশন সেবা ব্যবহারকারী জনসংখ্যার অনুপাত’ এর তথ্য পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যেসব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা তুলে ধরা হয়েছে এবং এ অনুসারে, বিশেষত কোভিড-১৯-এর উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) মেনে চলার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে। ন্যাশনাল হাইজিন সার্ভে-২০১৮ একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ, যা আমাদের ঘাটতিগুলোকে চিহ্নিত করে অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জগুলো সামনে নিয়ে আসে এবং দেশব্যাপী স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। সর্বোপরি, প্রতিবেদনটি কেবল ‘ওয়াশ’ খাতে যারা কাজ করেন শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং যারা জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং খাদ্য সুরক্ষা বিষয়ে আগ্রহী তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ রিসোর্স।’
আরও পড়ুন: ন্যায্য প্রাপ্যতা নিশ্চিতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ‘মার্কেট ড্যাশবোর্ড’ চালু করল ইউনিসেফ
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) তুষার মোহন সাধু খাঁ।
জরিপের মূল ফলাফল তুলে ধরেন বিবিএসের ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইংয়ের পরিচালক মো. মাসুদ আলম।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন খাতের বিশেষ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে শিশুবিয়ের প্রচলন সবচেয়ে বেশি: ইউনিসেফ
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রতিবেদনটি ওয়াশ, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং খাদ্য সুরক্ষা ক্ষেত্রে কর্তব্যরত ব্যক্তিদের ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। তারা সুস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন গড়ে তোলার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে বিস্তৃত পরিসরে উদ্যোগ নেয়ার প্রতি জোর দেন।