এছাড়া সুলতানের বসতঘরটির অবস্থা খুবই করুণ দশা। আর এই ঘরের ভেতরে সংরক্ষিত এস এম সুলতানের ব্যবহৃত খাটসহ অন্যান্য জিনিসপত্রও নষ্টের উপক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায়, এসএম সুলতান তার জীবদ্দশায় যে ঘরটিতে বসবাস করতেন, সেই একতলা পাঁকাঘরটির অবস্থা খুবই করুণ। প্রায় পাঁচ বছর ধরে খসে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা।
সংগ্রহশালা দেখভালের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন জানান, এসএম সুলতানের বসতঘরটির ছাদ বেশ জরাজীর্ণ। ঘরের ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেও ভয় লাগে। কখন পলেস্তারা খসে পড়ে তার ঠিক নেই। দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এই ঘরের মধ্যে সুলতানের ব্যবহৃত খাট, পোশাক, দ্বিতলা নৌকার নোঙরসহ স্মৃতি বিজড়িত অনেক কিছু রয়েছে। ১৯৮২ সালে ঘরটি নির্মিত হয়। সুলতানপ্রেমীদের দাবি, এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটনবান্ধব করে তোলা হোক সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা।
শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থী ঐহিত্য বলেন, ‘আমি সুলতান দাদুর এখানে (শিশুস্বর্গ) ছবি আঁকা শিখি। করোনার কারণে অনেকদিন ক্লাস বন্ধ। সংগ্রহশালায় এসে ফুল-পাখি দেখি। তবে নৌকায় চড়তে পারি না। আমি সুলতান দাদুর দুতলা নৌকায় চিত্রা নদীতে ঘুরতে চাই। এখানে একটি শিশুপার্ক চাই।’
নারীনেত্রী নাসিমা রহমান পলি বলেন, ‘এখানে (সংগ্রহশালা) এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ, ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গের ঘাট নির্মাণ এখনো শুরু হয়নি। আশেপাশে ঝোঁপঝাড়। বিশেষ করে সুলতানের ব্যবহৃত খাটসহ স্মৃতি বিজড়িত অনেক কিছু নষ্ট হচ্ছে।’
এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী শেখ মোহাম্মদ সুলতান (এসএম সুলতান) শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। তাদের টানে, প্রকৃতি প্রেমে মুগ্ধ সুলতান দ্বিতলা নৌকা, তথা ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গে চিত্রা নদীতে শিশু-কিশোরদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। তার মৃত্যুর পর নৌকাটি চিত্রা নদীর পাড়ে তুলে রাখা হয়। নৌকাটি সুরক্ষিত ও দৃষ্টিনন্দন করতে ‘সুলতান ঘাট’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা থমকে আছে। দ্রুত ঘাট নির্মাণসহ এলাকাটি পর্যটনবান্ধব করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।’
এসএম সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালার মালি কাম গ্যালারিগার্ড গোলাপ কাজী বলেন, এখানে প্রায় ১৭ বছর চাকরি করছি। করোনাকালীন সময়ে প্রবেশ বন্ধ থাকলেও শীত মৌসুমসহ সারা বছরই এখানে দর্শনার্থী আসেন। দেশি-বিদেশি পর্যটক সুলতানের শিল্পকর্মের টানে এখানে ছুটে আসেন। তবে লোকবল সংকটসহ পর্যটন সুবিধা কম রয়েছে।
সুলতান সংগ্রহশালার অফিস সহকারী চিত্রশিল্পী নয়ন বৈদ্য বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি সংগ্রহশালা খুলে দেয়া হয়েছে। বিশ্বমানের সব চিত্রকর্ম এখানে রয়েছে। আমাদের প্রাণের দাবি, সংগ্রহশালাটি সেই মানের গড়ে তোলা হোক।’
এ প্রসঙ্গে এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেন, ‘সুলতান সংগ্রশালাসহ ঘাটটিকে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে প্রায় দুই কোটি টাকা প্রয়োজন। অর্থ বরাদ্দ পেলে কাজগুলো শুরু হবে। এ ব্যাপারে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ রাখছি।’
প্রসঙ্গত, আজ ১০ অক্টোবর বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইল শহরের মাছিমদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যান।
চিত্রশিল্পে খ্যাতি হিসেবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার পান এসএম সুলতান। এছাড়া, ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি।