বাংলাদেশে মিষ্টি জাতীয় খাবারের উপকরণগুলোর মধ্যে গুড় অন্যতম। গ্রীষ্মকালীন ফলমূলের মধ্যে তরমুজ জনপ্রিয় একটি রসালো ফল। তরমুজের রস কাঠ ফাটা রোদের গরমে শ্রান্ত দেহটাকে নিমেষেই চাঙ্গা করে তোলে। কিন্তু তরমুজের রস দিয়ে বানানো গুড় ধারণাটা একেবারে অভিনব। খেজুরের রস অথবা আখের রস থেকে গুড় তৈরি সম্ভব হলে তরমুজের রস থেকে কেন হবে না! এই অভিনব কাজটিই করেছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ছোটবন্ড গ্রামের তরমুজচাষি মৃত্যুঞ্জয় ম-ল। তরমুজের রস থেকে বানানো বলে তিনি এর নাম দিয়েছেন ‘তোগুড়’। চলুন, নতুন ধরনের এই গুড়টির ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নিই।
যেভাবে এলো তোগুড়-এর ধারণা
মৃত্যুঞ্জয় তরমুজের চাষ করছেন ২০১৯ থেকে। ভালো ফলনের পাশাপাশি এ সময়টুকুতে বেশ লাভও করতে পেরেছেন তিনি। চাষের সময় প্রতি মৌসুমেই তিনি কিছু না কিছু তরমুজ পেয়েছেন যেগুলোর আকারে বেশ ছোট হয়। ‘ক্যাট' নামের এই তরমুজগুলোর বিক্রির অযোগ্য বলে প্রায় এগুলোকে মাঠেই ফেলে রাখা হয়। প্রায় সময় বৃষ্টিতে ভিজে এগুলো পঁচে গিয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। কিছু কিছু 'ক্যাট' অবশ্য গৃহস্থালি পশু ও মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
পড়ুন: নাজমুন নাহার: পৃথিবীর ১৫০তম দেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বাংলাদেশি পরিব্রাজক
হঠাৎ একদিন মৃত্যুঞ্জয়ের মাথায় আসে, খেজুর ও তালের রসে গুড় হলে তরমুজের রসেও তো সম্ভব! সাথে সাথে চলে যান উপজেলা কৃষি অফিসে এ নিয়ে পরামর্শ করতে। অতঃপর স্ত্রী মিতালী ম-ল’কে সঙ্গে নিয়ে কয়েকটি ক্যাট তরমুজ দিয়ে গুড় বানানোর চেষ্টায় লেগে পড়েন। পরবর্তীতে বানানোর পর খেজুর গুড়ের মতো দেখতে তোগুড়-এর মধুর মত স্বাদ পেয়ে অবাক হয়ে যান।
তোগুড় উৎপাদন পদ্ধতি
চিরাচরিত উপায়ে তরমুজের রস বের করে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে পরিচ্ছন্ন রস চুলায় জাল দেয়া হয়। এক পর্যায়ে রস গাঢ় হয়ে ওপরে ফেনা জমে। সেই ফেনা ওপর থেকে আলতো করে সরিয়ে ফেলে দেয়া হয়। এরপর আরও কিছুক্ষণ ধরে জ্বাল দেয়ার পর তরমুজের রস খেজুর গুড়ের রঙ ধারণ করে। এভাবে মৃত্যুঞ্জয় ও তাঁর স্ত্রী কোন যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে বানাতে সক্ষম হয়েছেন তোগুড়।
এই গুড়ের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, তরমুজের রস থেকে বানানো এই গুড় অনেক দিন ধরে সংরক্ষণ করা যায়।
আরও পড়ুন: ২০০ কেজি সোনায় কারুকার্যমণ্ডিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পবিত্র কোরআন