নয় দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা আর্ট সামিটের চেয়ারম্যান ফারুক সোবহান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের কো-ফাউন্ডার ও পরিচালক নাদিয়া সামদানী। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, ‘চিত্রকলায় পৃথিবী বিখ্যাত ও বাংলাদেশি শিল্পীদের কাজ একই ছাদের নিচে প্রদর্শনের এ আয়োজন নিশ্চয় প্রশংসার দাবি রাখে।’ তিনি সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের কো-ফাউন্ডার নাদিয়া সামদানী বলেন, ‘ঢাকা আর্ট সামিটের এটি পঞ্চম আয়োজন। বিভিন্ন রকম পরীক্ষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাথে যৌথভাবে প্রতি দুই বছর পরপর এ আয়োজন করা হয়ে থাকে। এবারের ঢাকা আর্ট সামিটের থিম হচ্ছে সঞ্চারণ। যেখানে বিভিন্ন ধরনের মুভমেন্ট নিয়ে কাজ করা পৃথিবী বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে।’
উদ্বোধনী দিনে প্রথম পারফম্যান্স অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় চিত্রশালার ৬ নম্বর গ্যালারিতে। সকাল ১০টায় সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড পারফম্যান্সে অংশ নেন বাংলাদেশি শিল্পী আরিফুল কবির। দ্বিতীয় তলার লবিতে হয় ‘ল্যান্ডভার্সন’ শিরোনামে অটোবং এনকাঙ্গার লাইভ আর্ট। চিত্রশালা মিলনায়তনে ছিল ‘ডিজাইন ইন এরা অব ক্লাইমেট-ক্যাটাসট্রফি’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনা।
এছাড়া, জাতীয় চিত্রশালার প্রথম তলার লবিতে ছিল হেক্টর জামোরাহের পরিচালনায় ‘মোভিমিয়েনটস এমিসরেস ডি এক্সিটেনশিয়া’ শিরোনামে পারফর্ম্যান্স অ্যাকশন। শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল গিদরি বাউলির পরিবেশনায় পাপেট শো ‘গল্পটা সবার’। প্রথম দিনের শেষ পরিবেশনা ছিল সন্ধ্যা ৭টায় চিত্রশালা প্লাজায় ‘টুগেটার (ঢাকা সংস্করণ)’ শীর্ষক পারফম্যান্স। যেখানে অংশ নেন করাকৃত অরুনাদ্ধচল এবং অ্যালেক্স ভোজিও।
এবারের সামিট সুইজারল্যান্ডের বিশিষ্ট গ্যালারি ডিজাইনার দিয়ে সাজানো হয়েছে। পরিবেশবান্ধব এ আয়োজনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্লাস্টিকমুক্ত সাজসজ্জা। কোনও কিছুতেই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি বসার আসন পর্যন্তও। পরিবেশসম্মত কাগজ, বাঁশ, বেত ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি প্রদর্শনীতে কোনও এয়ারকন্ডিশনের ব্যবহার হচ্ছে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সামিটে একটি বিশেষ প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে। জাতীয় চিত্রশালার প্রথম তলায় চলছে ‘লাইটিং দি ফায়ার অব ফ্রিডম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ শিরোনামে এ প্রদর্শনী। এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
নয় দিনের এ শিল্পকলার আসরে অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০০-এর অধিক চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, কিউরেটর, শিল্প সমালোচক, আর্ট প্রফেশনাল, শিল্প সংগ্রাহক ও স্থপতি।
অ-বাণিজ্যিক এ সামিটে বাংলাদেশের উদীয়মান ও প্রতিভাবান ৩০০ শিল্পী বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছেন। আছেন প্রতিথযশা শিল্পীরাও। সামিটে বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য কিউরেটরের দায়িত্ব পালন করছেন চিত্রশিল্পী বিশ্বজিৎ গোস্বামী। তার তত্ত্বাবধানে ‘রুটস’ বা ‘শেকড়’ শিরোনামে এক বিশেষ প্রদর্শনী রয়েছে এবারের আয়োজনে। যেখানে প্রতিথযশা শিল্পগুরু জয়নুল আবেদিন, এসএম সুলতান, কামরুল হাসান, রশিদ চৌধুরী, রকিকুন নবী, ফরিদা জামানসহ বিশেষ করে দেশের চিত্রকলা শিক্ষাদানে অসামান্য অবদান রাখা শিল্পীগুরুদের জীবনাচরণ জানা ও দেখার সুযোগ মিলছে।
ঢাকা আর্ট সামিটের পঞ্চম সংস্করণে সহায়তা প্রদান করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সহযোগী হিসেবে রয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। টাইটেল স্পন্সর গোল্ডেন হার্ভেস্ট।
প্রদর্শনী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।