শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের ধরন ভেদেও প্রয়োজন পড়ে ফরমাল পোশাকের। কার্যক্ষেত্রের ভাব-গাম্ভীর্যের অনেকাংশই নিজেদের পরিধানে বজায় রাখার চেষ্টা করেন পুরুষেরা। কেউ কেউ এমন পরিপাটি পরিধেয় নিজেদের স্টাইলের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে বেধে নেন।
ফলশ্রুতিতে নৈমিত্তিক জমায়েতেও তাদের প্রায় সময়ই দেখা যায় স্যুট বা অন্যান্য ফরমাল বেশভূষায় হাজির হতে। রেডিমেড বা টেইলারিং যেমনি হোক না কেন, এমন পোশাক শিল্পের গ্রাহক শ্রেণি মোটেই সংকীর্ণ নয়। তাই এদেরকে উদ্দেশ্য করে দেশ জুড়ে গড়ে উঠেছে নানা প্রকার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। চলুন, এগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় দেশি ব্র্যান্ডগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পুরুষদের ফরমাল পোশাক বানানোর সেরা ১০টি দেশি ব্র্যান্ড
ক্যাট্স আই
বর্তমানের এই স্বনামধন্য ব্র্যান্ডটি নেপথ্যে রয়েছে ১৯৮০ সালে গ্রীন সুপার মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান। সেখানে ক্যান্ডি থেকে শুরু করে অলঙ্কার পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই বিক্রি করা হতো।
দোকানের একটি ছোট অংশ শার্টের জন্য রেখেছিলেন প্রতিষ্ঠাতা দম্পতি সাঈদ সিদ্দিকী রুমি এবং আশরাফুন সিদ্দিকী ডোরা, যেগুলোর নকশা তারা নিজেরাই করতেন।
আরও পড়ুন: সাদমুআ: বাংলাদেশের প্রথম পুরুষ বিউটি ব্লগার
১৯৮৩ সালে তারা এলিফ্যান্ট রোডের মনসুর ভবনে একটি ফ্লোর স্পেস ভাড়া নিয়ে আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটান ক্যাট্স আইয়ের। সে সময় বিশেষ করে পুরুষদের ফ্যাশন মার্কেটে কর্মজীবীদের জন্য ফরমাল বলতে তেমন ভালো কিছুই ছিল না। তখন সিদ্দিকী দম্পতির এই প্রতিষ্ঠানটিই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। এরপর থেকে কয়েক দশক ধরে দাপটে ব্যবসা করেছেন সিদ্দিকী দম্পতি।
পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে অবশ্য তারা পুরুষদের ক্যাজুয়াল পণ্যগুলোর সংগ্রহ নিয়ে চালু করে মনসুন রেইন। ১৯৯৮ সালে এই গ্রাহক শ্রেণিটিকে আরও সংকীর্ণ করে আবির্ভাব হয় ক্যাট্স আই আনলিমিটেডের।
সাধারণ ক্যাট্স আই সংগ্রহ বলতে ফরমাল সাদা ও নীল রঙের শার্ট এবং ফরমাল প্যান্টগুলোকেই বোঝানো হয়। এছাড়া তাদের শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি এবং ম্যান্ডারিন ভেস্টগুলো তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট ধারণ করে।
আরও পড়ুন: গহনায় ব্যবহৃত মূল্যবান কিছু রত্নপাথর
রিচম্যান
দেশের সমসাময়িক ফ্যাশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিচম্যানের শুরুটা হয়েছিল ২০০৩ সালে ৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের হাত ধরে। তারা হলেন- মোহাম্মদ জুনায়েদ, নাজমুল হক খান এবং নাইমুল হক খান। রিচম্যানের উদ্ভূত হয়েছিল লুবনান ট্রেড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড কোম্পানি থেকে।
বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে শুরু হওয়া প্রথম রিচম্যানে পুরুষের ফরমাল ও ক্যাজুয়াল দুটো পরিধেয়ই তোলা হয়েছিল। কিন্তু নকশা অনবদ্য হওয়ায় শিগগিরই সেগুলোর আলাদা অবস্থান তৈরি হয়ে যায় বাজারের অন্যান্য পোশাকগুলো থেকে।
তরুণদের পক্ষ থেকে ধারাবাহিক ইতিবাচক সাড়াগুলোর ওপর ভিত্তি করে একের পর এক চালু হতে থাকে তাদের আউটলেটগুলো। বর্তমানে তাদের শাখা ঢাকার বাইরে চট্টগাম ও সিলেটে বিস্তৃতি লাভ করেছে।
তাদের সংগ্রহে রয়েছে নৌবাহিনীর জ্যাকেট, নেভি স্ট্রাইপ করা সুতির ফুল হাতা সোয়েটার, ধূসর প্রিন্টের হাফ হাতা হাওয়াই শার্ট, এবং হাই নেক মেরুন রঙের সোয়েটার। সাধারণ ফরমাল শার্ট ও প্যান্টের সঙ্গে রয়েছে শ্যু এবং পুরুষের ব্যবহৃত প্রসাধনী।
আরও পড়ুন: শীতে ছেলেদের ত্বকের যত্ন
বেলমন্ট ফেব্রিক্স
ফরমাল পরিধেয়ের ক্রমবর্ধান চাহিদার বিপরীতে বেলমন্ট ফেব্রিক্স লিমিটেডের আগমন ছিল বাংলাদেশ পোশাক শিল্পে এক অনন্য সংযোজন। দেশে স্যুট ও ব্লেজারসহ ফরমাল প্যান্ট ও শার্টের টেইলারিং সেবা নিয়ে এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর।
বেলমন্ট ফেব্রিকস লিমিটেডের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ বাদশা শরীয়তপুরে জন্ম নেওয়া একজন প্রতিভাবান ব্যবসায়ী। বেশ ছোট পরিসরে শুরু করা কোম্পানিটির এখন তার জন্মস্থান ছাড়িয়ে গোটা বাংলাদেশ ব্যাপী বিস্তৃত। শরীয়তপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর মিলে বেলমন্টের মোট ১৯টি আউটলেট রয়েছে।
গাজীপুরে ৮ হাজার বর্গফুটের ওপর এই কাস্টমাইজড সেলাই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব একটি টেইলারিং ফ্যাক্টরি রয়েছে, যা সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতিতে পরিপূর্ণ।
আরও পড়ুন: এই গরমে ট্যানিং এড়াতে কিছু টিপস
ফিট এলিগেন্স
বাংলাদেশি ব্র্যান্ড ফিট এলিগেন্স-এর জন্ম ২০০১ সালের ২৬শে মার্চ। স্যুট, ব্লেজার এবং ট্রাউজারের চাহিদা পূরনে নিবেদিত এই প্রতিষ্ঠান মুলত ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের একটি সহযোগী উদ্যোগ। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত এক্সেকিউটিভ পরিচ্ছদ খাতের অন্যতম পথপ্রদর্শক ইস্ট-ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ১৯৮৫ সাল থেকে স্যুট তৈরি করে আসছে।
ফিট এলিগেন্ডের বর্তমানে ঢাকায় ৯টি এবং চট্টগ্রামে একটি এক্সক্লুসিভ স্টোর রয়েছে। তাদের বিশেষ সংগ্রহ তালিকায় রয়েছে প্রিন্স কোট, ওয়েইস্ট কোট, ব্লেজার, মুজিব কোট, ট্রাউজার, ওভারকোট, শেরওয়ানি এবং সাফারি।