● চিভ
পেঁয়াজের ভালো বিকল্প হতে পারে চিভ। এর স্বাদ অনেকটা পেঁয়াজের মতো। এটা আপনাকে পেঁয়াজের গন্ধের পাশাপাশি বোনাস হিসেবে রসুনের কাজও দেবে। চিভ দেখতে অনেকটা কাঁচা পেঁয়াজের মতো। তবে এটিতে পেঁয়াজের মতো গুটি বা দানা হয় না।
চিভ শুধু পাতা জাতীয় ফসল। এর পাতা লিনিয়ার আকৃতির, ফ্লাট, কিনারা মসৃণ, বাল্ব লম্বাটে। মাটির ওপরের অংশই খাওয়া যায়। এর পাতা, কাণ্ড ও ফুল মশলা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চিভ হজমে সাহায্য এবং বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে ক্যানসার প্রতিরোধী গুণাগুণ রয়েছে। আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, নায়াসিন, ক্যারোটিন ও খনিজ উপাদান।
২০১৭ সালে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) চাষযোগ্য উচ্চ ফলনশীল জাত বারি চিভ-১ আবিষ্কার করেছে। উচ্চ ফলনশীল চিভ চীন, সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা তাদের উদ্ভাবিত এ মসলা জাতীয় ফসলটি সারাবছর দেশে চাষাবাদ করা যাবে বলে জানিয়েছেন।
● রসুন
পেঁয়াজের সাথে বাঙালি রান্নায় যে মশলাটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় তা হলো রসুন। পেঁয়াজ ছাড়া রান্নায় রসুন খুব ভালোভাবেই ব্যবহার করা হয়। যাই হোক, রান্নায় পেঁয়াজের স্বাদে পরিবর্তন আনতে যেকোনো রান্নার প্রণালীতে রসুন বাটা পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। রসুনে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, লোহা, ভিটামিন (বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৬ ও সি), ফোলেট, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে।
● চিকন করে কাটা সবজি
বাঙালি রান্নাকে গাঢ় রসালো করতে পেঁয়াজের অবদান খুব বেশি। আপনি রান্নাকে রসালো করতে গাঁজর ও টমেটোকে চিকন করে কেটে বিভিন্ন রান্নায়, স্যুপ ও সালাদ তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি রান্নায় রসালো ঝোল করতে বেলের শুকনা গুড়ো ব্যবহার করতে পারেন। চিকন করে কাটা বাঁধাকপিও কিছু কিছু রান্নায় পেঁয়াজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া লাউ, ঝিঙে ও চিচিঙ্গার মতো সবজিগুলো বিভিন্ন তরকারি, স্যুপ, মিষ্টান্নতে পেঁয়াজকে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
● জিরা বা তরমুজের বীজ
জিরা বা তরমুজ বীজ পেঁয়াজের বিকল্প হতে পারে। তরমুজের টাটকা বীজ, জিরা, দই, নারকেল গুড়া বা দুধের মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি যেকোনো তরকারিকে ঘন করতে পারে। আপনি কাজু বাদামও ব্যবহার করতে পারেন, তবে এটি পেঁয়াজের চেয়েও বেশি ব্যয়বহুল হয়ে যাবে।
● আদা
অনেক বাঙালি রান্নায় সতেজ আদা পেঁয়াজের বিকল্প হতে পারে। রসুনের বাটার সাথে আদার মিশ্রণ পেঁয়াজের চেয়ে ভালো স্বাদ দিতে পারে। আদাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৩, বি৬ এবং সি, ফসফরাস, লৌহ, ফলেট, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, রিবোফ্লাবিন, পটাসিয়াম ও নিয়াসিন রয়েছে।
● মৌরি
প্রায় প্রতিটি বাঙালির রান্নাঘরেই মৌরি একটি অপরিহার্য উপাদান। হয়তো আমরা শুধু খাবার পর একটু ভালো হজমের জন্য খাই। কিন্তু মৌরির আরও খাদ্য গুণ আছে। মৌরি যেমন খেতেও সুস্বাদু তেমনই খাদ্য গুণে ভরা। মৌরিতে এমন কিছু উপাদান আছে যা আমাদের প্রতিদিন ভালো থাকার জন্য দরকার। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ভিটামিন সি, আয়রনের মতো খনিজ উপাদান আছে এতে।
● সেলেরি বা সেলেরি মূল
আপনার রান্নাঘরে পেঁয়াজ না থাকলেও উদ্বিগ্ন হবেন না! পেঁয়াজের মতো স্বাদ আনতে আপনি কাটা সেলেরি (শাকবিশেষ) আপনার তরকারিতে রাখতে পারেন। সেলেরি বিভিন্ন ভিটামিন (এ, সি এবং কে ) এবং খনিজ, পটাসিয়াম সমৃদ্ধ।
● আসাফেতিদা (হিং)
এই মশলাটি তীব্র সুগন্ধের জন্য ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সাধারণত একটি তরকারি রান্না করতে এক বা দুই চিমটি আসাফেতিদা বা হিং লাগে। তবে এই মশলা বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায় না।
নিঃসন্দেহে পেঁয়াজের সঠিক বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। কারণ এটি বাংলা খাবারের স্বাদ বাড়াতে দারুণ ভূমিকা রাখে। তবে দেশে উৎপাদিত চিভ পেঁয়াজের সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে। আপনার রান্নায় একটু ভিন্ন স্বাদ আনতে আপনি এসব মশলা এবং শাকসবজির ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে আমরা পেঁয়াজের চলমান সংকট মোকাবিলাও করতে পারি।