রবিবার ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে দিনব্যাপী এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্য দেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। এই শস্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির পাশাপাশি ‘পরিবারে ভালোবাসা, আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করে’ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও গারোরা ওয়ানগালা বা নবান্ন উৎসব পালন করে।
সকাল ৯টায় ‘থক্কা’(চালের গুড়ার তিলক) অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ওয়ানগালা উৎসবের সূচনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার সুবল কুজুর সিএসসি। তাকে সহযোগিতা করেন সহকারী পাল পুরোহিত ফাদার আশীষ রোজারিও সিএসসি।
উৎসবে ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ (মান্দিতে), খামালকে খুথুব ও থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্কা দেয়া, পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, দান সংগ্রহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা করা হয়।
গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশত মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়।
বিকালে মরিয়মনগর গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ‘নকগাত্তা’ (বাড়ি বাড়ি ঐহিত্যবাহী পোশাকে নেচে গেয়ে আনন্দ করা) অনুষ্ঠিত হয়।
মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার সুবল কুজুর সিএসসি জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব পালন করা হচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এ আলোজনের মূল লক্ষ্য।
উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে মেলা বসে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ওয়ানগালা। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্য সামগ্রী আর ‘গালা’অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
গারো সম্প্রদায়ের বিশ্বাস মতে, ওয়ানগালার আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে। শস্য দেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্যে নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। আবার ওয়ানগালা উৎসব একশ’ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত।