বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম ও খ্যাতিমান কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অতিথি ছিলেন জি টিভি ও সারাবাংলার প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, শিশু সাহিত্যিক আনজীর লিটন, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল খায়ের, জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, সমাজে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, সেই অবক্ষয় থেকে রক্ষা পেতে হলে জনকয়েক রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীর বক্তব্য যথেষ্ট নয়। আমাদের ভেতরে স্পর্শ করার মত কিছু কিছু অপারেশন চালাতে হবে। সে অপারেশন হতে পারে কবিতা-কাব্য, গ্রন্থ-উপন্যাস ও লেখার ভেতর দিয়ে। সেটা যেভাবে আমাদের সন্তানকে স্পর্শ করবে, বিপদগামী মানুষকে আকৃষ্ট আকৃষ্ট করবে তা মন্ত্রী-এমপির গতানুগতিক বক্তৃতায় আকৃষ্ট করবে না। একজন মন্ত্রী হয়েও শপথ নিয়ে নাগরিকবোধ থেকে এ কথাটা বলছি। এটা আমার নির্ভেজাল উপলব্ধি।
তিনি বলেন, কবিতার ছোট দুটি লাইন দিয়েও যেভাবে আকৃষ্ট করা যায় তা অন্য কিছুতে হয় না। সেটা অনেক ভেতরে স্পর্শ করে। আজকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের এই শংকিত সময়ে আমাদের আত্মোপলব্ধি দরকার। আর সেটা আসতে পারে সাহিত্য চর্চার মধ্য দিয়ে। গল্প ছাড়া মলাট আমাদেরকে জানান দেয় নৈতিকতা ও মানবিকতার একটা মলাট আমাদের দরকার। মিজান মালিক সেই সত্যই উচ্চারণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, সব মানুষের মধ্যে কবি মন আছে। তবে কবিতা লেখা সহজ কাজ নয়, কঠিন। মিজান মালিক সাংবাদিক হিসেবে সেই কঠিনকে ভালোবেসেছেন। কবিতা আমাদেরকে সৌহার্দ্যের কথা বলে, ভালোবাসার কথা বলে, মানবিকতার কথা বলে। আমরা যেন কবিমন নিয়ে সব সময় চলতে পারি। তাহলে আজকের এই সময়ে আমরা যেখানে এক শূণ্যতার মধ্য দিয়ে, যে অনাচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা কিছুটা হলেও দূর হবে।
দেশের বরেণ্য কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, সংবাদ ও কবিতার বিভেদ নেই। দুটোই সত্যের কথা বলে, সত্যকে ধারণ করে। কবিতা সত্যকে উদ্ঘাটনও করে। ‘গল্প ছাড়া মলাট’ এর কবি মিজান মালিকের কবিতাগুলো আমি পড়েছি। তার কবিতার ভাষা, বিষয় আঙ্গিক বলে এই সময়ের কবি হিসেবে তিনি টিকে গেলেন। কবিতায় তিনি নানা কায়দায় সংকটের কথা তুলে এনেছেন। ভেতরে একটা বেদনাবোধ আছে। মিজান মালিকের কবিতা আমার ভাল লেগেছে। তিনি সময়ের কথা বলছেন। তাকে নিয়ে আমি দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখবো।
সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, মিজান ভালো কবিতা লেখেন। সাহিত্য ভুবনে তিনি যেন সমাদৃত হন। তার কবিতার বইটি যেন আমরা সংগ্রহে রাখি। তার কবিতার মতোই আমাদের জীবনে মলাট আছে কিন্তু গল্প নেই। আমি মনে করি বইয়ের নামটি যথার্থ হয়েছে। আমাদের জীবনে একটি মলাট দরকার।
আনজীর লিটন বলেন, মিজান মালিক আমাদেরকে ‘গল্প ছাড়া মলাট’ বইটি উপহার দিলেন। সাহিত্য এক দীর্ঘযাত্রা। তিনি কবিতার মধ্য দিয়ে তার সেই যাত্রা শুরু করেছেন। তিনি যেন এ যাত্রায় আরও মনোনিবেশ করেন, আত্মমগ্ন থাকেন।
মিজান মালিক তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, আমি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করি। অনেক সময় অনেক কিছু বলতে চেয়েও বলা যায় না। যেসব কথা বলতে পারিনি তাই কবিতার ভাষায় আনতে চেয়েছি। প্রাপ্তি, অপ্রাপ্তি, সমাজে অনাচারের গল্প কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছি।
দৈনিক যুগান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি মিজান মালিক সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিয়মিত কাব্যচর্চা করেন। তার লেখা কবিতাগুলো এবার মলাটবন্দী হয়েছে। কাব্যগ্রন্থটির নাম ‘গল্প ছাড়া মলাট’-এ। ‘গল্প ছাড়া মলাট’ বইটি প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রকাশনী সংস্থা ঐতিহ্য। মূল্য রাখা হয়েছে ১৭০ টাকা। বইমেলায় ঐতিহ্য প্রকাশনীর ১৪ নং প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাবে বইটি।
সাংবাদিক মিজান মালিকের হাত ধরে সাংবাদিকতায় উঠে এসেছেন অনেকেই। বেসরকারি টেলিভিশনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি নিরলস কাজ করেছেন। কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাংবাদিকতায় রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সাংবাদিক বজলুর রহমান স্মৃতিপদক, শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকতায় টিআইবি অ্যাওয়ার্ড, দুদকের প্রথম মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য প্রাপ্তি তার ঝুলিতে রয়েছে।